চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

৩ বছর পূর্বে বিয়ে

হাটহাজারীতে স্বামীর অধিকার চাইতে এসে লাশ হলেন রেশমি

নিজস্ব সংবাদদাতা, হাটহাজারী

১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:৫৬ পূর্বাহ্ণ

হাটহাজারী সদরের চট্টগ্রাম হাটহাজারী মহাসড়কের এগার মাইল এলাকা থেকে তাহমিনা সুলতানা রেশমি (২৬) নামে এক সন্তানের জননীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। দ্বিতীয় স্বামীর বাড়িতে এসে স্বামীর অধিকার আদায় করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত লাশ হলেন তিনি। গত রবিবার (৮সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আটটার দিকে ফতেপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের এগার মাইল ফরেস্ট গেইটের বিপরীতে পুরাতন সিনেমা হল সড়ক সংলগ্ন মিনহাজ ম্যানশনে এঘটনা ঘটে। ডিভোর্সী তাহমিনা এ ভবনের মালিকের ছেলে মো. নিয়ামত উল্লাহ জীবনকে (৩৩) গত ৩ বছর পূর্বে ভালবেসে কোর্টের মাধ্যমে বিয়ে করেন। নিহতের পূর্বের সংসারের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। গতরাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

নিহত তাহমিনা সুলতানা রেশমি (২৬) মিনহাজ ভবনের মালিক মো. ইউছুপের ছেলে মো. নিয়ামত উল্লাহ জীবনের (৩৩) স্ত্রী ও চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকার (এমপি এম এ লতিফের বাড়ির পাশে) জনৈক আব্দুন নূরের কন্যা। এ ঘটনায় পুলিশ ভবনের মালিক মো. ইউছুপকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। আটক ইউছুপের পুরাতন বাড়ি পার্শ্ববর্তী ফটিকছড়ি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নে।

পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তাহমিনা সুলতানা রেশমির (২৬) সাথে মিনহাজ ম্যানশনের মালিক ইউসুফের ছেলে নিয়াামত উল্লাহ জীবনের কোর্টের মাধ্যমে গত ৩ বছর পূর্বে বিয়ে হলেও সামাজিকভাবে ঘরে তুলে নেয়া হয়নি। এ কারণে মাঝে মাঝে জীবনের বাসায় আসা-যাওয়া করত তাহমিনা রেশমি। ঘটনার দিন রেশমি স্বামী নিয়ামত উল্লাহ জীবনের সাথে দেখা করতে এসেছিল। বিকালে হঠাৎ বাসার একটি কক্ষের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় লাশ দেখে এলাকাবাসী হাটহাজারী মডেল থানায় খবর দেয়। সংবাদ পেয়ে হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. বেলাল উদ্দীন জাহাঙ্গীর সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে রেশমির মরদেহ উদ্ধার করে রাত আটটার দিকে থানায় নিয়ে যায়। লাশ উদ্ধারের সময় বাসার দরজা জানালা ও মেইনগেইট খোলা ছিল এবং বাসা তখন কেউ ছিল না বলে সূত্রে প্রকাশ। ঘটনার পর তাহমিনা রেশমির স্বামী নিয়ামত উল্লাহ জীবন পালিয়ে যায়। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জীবনের পিতা মো. ইউসুফকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসি জানান, জীবন একজন মাদকাসক্ত যুবক। ঘটনার দিন বিকাল দুইটার দিকেও তাকে ১১ মাইল এলাকায় দেখা গেছে। সূত্র জানায় নিহত রেশমির সাথে স্বামী জীবনের প্রায় সময় ঝগড়া হতো তাকে ঘরে তোলা এবং জীবনের নেশা ছাড়া নিয়ে । নিহত তাহমিনা সুলতানা রেশমি (২৬) এর আগেও বিয়ে হয়েছিল কিন্তু ওই বিয়ে টেকেনি। রেশমির আগের সংসারের তামান্না সুলতানা জেসি নামে ৭ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

রেশমীর মা জেসমিন সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, গত ৩বছর পূর্বে কোর্টের মাধ্যমে বিয়ে হয়েছে তাহমিনা ও জীবনের। জীবন আমার ও মেয়ের অনেক টাকা নষ্ট করেছে। আমার মেয়েকে পারিবারিকভাবে অনুষ্ঠান করে আজ তুলবে কাল তুলবে বলে তিন বছরও ঘরে তুলেনি জীবন। আগে রেশমির একবার বিয়ে হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে ঘরের তামান্না সুলতানা জেসি নামে ৭ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। জেসমিন সুলতানা এঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান। তিনি মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ্য করে এ হত্যাকা-ের উচিত বিচার দাবী করেন।

হাটহাজারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মো. ইউছুফ নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে জীবন পলাতক রয়েছে। তাকে আটক করা গেলে ঘটনার মূলরহস্য উৎঘাটন করা সম্ভব হবে । নিহতের পরিবার থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ওসি জানান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট