চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

জোয়ারের পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতির মুখে স্থানীয় বাসিন্দারা

বেড়িবাঁধ কেটে মাছ-লবণ ঘোনার ব্যবসা বাঁশখালীতে

পাউবো’র তদারকি না থাকায় নিয়ম মানছে না ব্যবসায়ীরা

অনুপম কুমার অভি, বাঁশখালী

১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ

বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া, গ-ামারা, সরল ও শেখেরখীল এলাকায় সরকারিভাবে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধের অংশ কেটে মাছ ও লবণের ঘোনা তৈরি করছেন ব্যবসায়ীরা। বেড়িবাঁধ কাটার ব্যাপারে নিষেধ থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় সেই নিয়ম মানছে না ব্যবসায়ীরা। দিন দিন মাছের ঘোনা তৈরির সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধ পানির তোড়ে ভেঙে গিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। গত ৪ বছর ধরে খানখানাবাদ, সাধনপুর, বাহারছড়া, গ-ামারা ও ছনুয়া এলাকায় প্রায় ৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী বেড়িবাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। তাছাড়াও পাউবো কর্তৃপক্ষ ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হিসাবে আপদকালীন জরুরি কাজের জন্য আরো ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছনুয়া, গ-ামারা ও শেখেরখীল ইউনিয়নে সি-ডাইক ও ইন্টেরিয়র-ডাইক বেড়িবাঁধ অংশে অন্তত ১৪০/১৪২টি অংশে বেড়িবাঁধ কেটে মাছের ঘোনা ব্যবসায়ীরা নির্বিঘেœ মাছের চাষ করে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁশখালী ছনুয়া ইউনিয়নের পোল্ডার ৬৪/১সি এলাকায় লঞ্চঘাট হতে খুদুকখালী গ-ামারা সীমান্ত পর্যন্ত, শেখেরখীল মৌলভী বাজার হতে ছনুয়া অংশ পর্যন্ত, পোল্ডার ৬৪/১-এ গ-ামারার পূর্ব বড়ঘোনার আলোকদিয়া জেলেপাড়া হতে পূর্ব বড়ঘোনা পর্যন্ত, পশ্চিম চাম্বল ও মনকিচর এলাকায়ও বাঁধের অংশ কাটা হয়েছে। প্লাস্টিক, স্ল্যাব রিং, ঢালাই করা নাশি বসিয়ে বিভিন্ন স্থানে সরকারিভাবে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধ কেটে বঙ্গোপসাগর থেকে জোয়ারের পানি প্রবেশ করিয়ে মাছ ও লবণের চাষ করছে ব্যবসায়ীরা। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে প্রতি বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি হু-হু করে প্রবেশ করছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের লক্ষ লক্ষ টাকার সহায়-সম্পদ ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি যাতায়াত ব্যবস্থাও ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত বছরে জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের জন্য ৮টি স্থানে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হলেও একই স্থানে মাছ ও লবণ ঘোনার ব্যবসায়ীরা বেড়িবাঁধ কেটে জোয়ারের পানি প্রবেশ করিয়ে মাছ ও লবণ চাষ করে যাচ্ছে। এতে নির্মিত বেড়িবাঁধটির অবস্থা করুণ হয়ে পড়েছে। গ-ামারা ইউনিয়নের বাসিন্দা নুরুল আলম জানান, পূর্ব বড়ঘোনা এলাকাতে অন্তত ১৮টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ কেটে নাশি বসিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করিয়ে স্থানীয়রা মাছ ও লবণ চাষ করে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এই বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে আসা-যাওয়া করলেও বিষয়টি মাথায় নিচ্ছে না। অভিযোগ করেও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। তদন্ত করলেই মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে। ছনুয়া এলাকার বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বঙ্গোপসাগরের সি-ডাইক ছনুয়া লঞ্চ ঘাট হতে উত্তর দিকের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বেড়িবাঁধ কেটে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৩টি স্লুইস গেট বসিয়েছে। বর্তমানে স্লুইস গেটের স্থানে ব্লক বসানো থেকেও বিরত রাখা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এতে নীরব ভূমিকা পালন করছেন। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধে এসব অনিয়মে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় হলেই এই স্লুইচ গেট ভেঙে পুরো এলাকা ডুবে যাবে বলে মন্তব্য করছেন স্থানীয়রা।

ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ বলেন, সরকারিভাবে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধ কেটে মাছ ও লবণ চাষের ঘোনা তৈরি করায় ফসলী জমিসহ এলাকার লোকজনের ক্ষতির সম্ভাবনা খুব বেশি। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা অবহিত রয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু তাহের জানান, উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধ কেটে জোয়ারের পানি প্রবেশ করানোর ব্যাপারে অনেকবার মাছ ও লবণ ব্যবসায়ীদের বাধা দেয়া হয়েছে। তারা রাতের অন্ধকারে এই সমস্যার সৃষ্টি করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম জানান, বেড়িবাঁধ কাটা দ-নীয় অপরাধ। বেড়িবাঁধ কেটে মাছ ও লবণ চাষের অভিযোগ পাওয়ার পরই তদন্ত করে বেড়িবাঁধ কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট