মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দ্বিতীয় দিনে ১৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। দুই দিনে মোট ৩২ জনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। গতকাল সোমবার যাচাই-বাছাই শেষে ১১৬ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
গতকাল আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এম এ মোতালেব, ফরিদ মাহমুদ ও জাপার মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়। আগেরদিন (রবিবার) সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, বর্তমান সংসদ সদস্য দিদারুল আলম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয়।
আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিলে বিভিন্ন আসনে টেনশনমুক্ত হচ্ছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। তবে মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করতে যাচ্ছেন একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে ১৪৮ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে ৩২ জনের মনোনয়ন বাতিল করেন রিটার্নিং অফিসার। সিটি করপোরেশন ও সিটি করপোরেশন সম্পৃক্ত ছয়টি আসনের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম। আর জেলার ১০টি আসনে রিটার্নিং অফিসার হচ্ছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ৬০টি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। এর মধ্যে ১৬টি মনোনয়নপত্র বাতিল ও ৪৪টি বৈধ ঘোষণা করেছেন বিভাগীয় কমিশনার। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল ৮৮টি। এর মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ে ১৬টি মনোনয়ন বাতিল করেন জেলা প্রশাসক। ৭২ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক ১৬টি আসনে ১১৬ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেন।
বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে গতকাল বাছাইয়ের শেষদিনে নগরীর তিন আসন চট্টগ্রাম-৯, ১০ ও ১১ আসনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়।
চট্টগ্রাম-৯ (বাকলিয়া-কোতোয়ালী) আসনের মনোনয়ন বাছাইয়ে সাত প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। বৈধ প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ইসলামিক ফ্রন্টের মো. ওয়াহেদ মুরাদ, ন্যাপের মিটল দাশগুপ্ত, ইসলামী ফ্রন্টের আবু আজম, কল্যাণ পার্টির মুহাম্মদ নূরুল হোসাইন, তৃণমূল বিএনপির সুজিত সাহা ও জাপার সানজিদা রশিদ চৌধুরী।
চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী, পাহাড়তলী, হালিশহর) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন ১২ জন। চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং অফিসার। তারা হলেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ, স্বতন্ত্র মো. ওসমান গনি, বিএনএফের মনজুরুল ইসলাম ও মো. ফসসাল আমীন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এক শতাংশ ভোটারের তথ্য গরমিল ও সমর্থনকারীর তথ্য না থাকায় তাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়।
এ আসনের আট বৈধ প্রার্থী হলেন- সাবেক মেয়র মনজুর আলম, আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু, তৃণমূল বিএনপির মো. ফেরদাউস বশির, ইসলামী ফ্রন্টের আলমগীর হোসেন বঈদী, ইসলামিক ফ্রন্টের আবুল বাশার মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম পার্টির মিজানুর রহমান, জাতীয় পার্টির জহুরুল ইসলাম, জাসদের মো. আনিসুর রহমান।
চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-বন্দর) আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন নয়জন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেখা আলম চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল করে আটজনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। বৈধ প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম এ লতিফ, জাসদের জসিম উদ্দিন, ইসলামিক ফ্রন্টের আবুল বাসার মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম পার্টির মো. মহিউদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন, তৃণমূল বিএনপির দীপক কুমার পালিত, এনপিপির নারায়ণ রক্ষিত, গণফোরামের উজ্জ্বল ভৌমিক।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গতকাল চট্টগ্রাম-৭, ১২, ১৪, ১৫ ও ১৬ আসনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়া ছয়জনের সবার প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়। প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সুপ্রিম পার্টির মো. মোরশেদ আলম, ইসলামিক ফ্রন্টের আহমেদ রেজা, তৃণমূল বিএনপির খোরশেদ আলম, জাতীয় পার্টির মুছা আহমেদ রানা, ইসলামী ফ্রন্টের মো. ইকবাল হাসান।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে তিন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়। তিনজনের মধ্যে এক শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ইলিয়াস মিয়া ও গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ বিল খেলাপির দায়ে ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিনের মনোনয়ন বাতিল হয়। সাত বৈধ প্রার্থী হলেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী, আওয়ামী লীগ প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এম এয়াকুব আলী, জাতীয় পার্টির মো. নুরুচ্ছফা সরকার, ইসলামিক ফ্রন্টের কাজী মো. জসিম উদ্দিন, তৃণমূল বিএনপির রাজীব চৌধুরী, কংগ্রেসের সৈয়দ মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন জিহাদী।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আটজন। সকলের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং অফিসার। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মো. নজরুল ইসলামী চৌধুরী, ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দিন মাহমুদ আবদুস সামাদ, বিএনএফের মো. গোলাম ইসহাক খান, বিএসপির মো. আইয়ুব, জাতীয় পার্টির আবু জাফর মো. ওয়ালিউল্লাহ, তরিকত ফেডারেশনের মো. আলী ফারুকী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী, ইসলামী ফ্রন্টের আবুল হোসাইন।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন নয়জন। এর মধ্যে তিনজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব, ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান, এনপিপির ফজলুল হকের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। ছয়জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। তারা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, জাতীয় পার্টির মো. ছালেম, ইসলামী ফ্রন্টের মো. আলী হোসাইন, কল্যাণ পার্টির সোলায়মান কাশেমী, ইসলামী ঐক্যজোটের মো. হারুণ, মুক্তিজোটের মো. জসিম উদ্দিন।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১৩ জন। তিনজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী ঋণখেলাপি, ন্যাপের আশীষ কুমার শীল ঋণের জিম্মাদার হিসেবে খেলাপি ও আয়কর রিটার্নি জমা না দেওয়ায় ইসলামী ঐক্যজোটের মো. শওকত হোসেন চাটগামীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়। বৈধ ১০ প্রার্থী হলেন হলেন- আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান, আ. লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন, মো. খালেকুজ্জামান, এনপিপির মুহাম্মদ মামুন আবছার চৌধুরী, ইসলামী ফ্রন্টের মো. মহিউল আলম চৌধুরী, জাসদের কামাল মোস্তফা চৌধুরী, এমরানুল হক, কংগ্রেসের এম জিল্লুর করিম শরীফি, ইসলামিক ফ্রন্টের আবদুল মালেক।
পূর্বকোণ/পিআর