আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গুরুত্ব বেড়েছে তরিকতপন্থী ইসলামী দলগুলো। এসব দলের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠাতা ও শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগই চট্টগ্রামের মাজার-মাদ্রাসাভিত্তিক সুন্নী তরিকতপন্থী। চট্টগ্রামের ১৬ আসনসহ দেশের বিভিন্ন আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে চমক সৃষ্টি করেছে এ দলগুলো।
মাইজভা-ারী তরিকতপন্থী বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে রয়েছেন। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসন থেকে চার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির পর নিজে গঠন করেছেন তরিকত ফেডারেশন। এবারও জোটের পক্ষে এ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে তার।
ফটিকছড়ি আসন থেকে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানান তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘১৪-দলীয় জোট একসঙ্গে নির্বাচন করবে-জোটনেত্রী প্রধানমন্ত্রী সেই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। জোটের শরীকের অভিন্নভাবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবে।’
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের জন্য ১৪ দলীয় জোট অপরিসীম। না হলে আওয়ামী লীগ জোটহীন ও একা হয়ে পড়বে। দেশ-বিদেশে তখন আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলবে কে? বললেন তরিকত চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর। তিনি বলেন, একশ আসনে দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। জোটের কাছে এবার ১৩টি আসন দাবি করবে। জোটের বাইরে অন্যরা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবে।
গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ইসলামপন্থী নয়টি দল। এরমধ্যে আলোচিত সুপ্রীম পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশও রয়েছে। এসব দলের শীর্ষ নেতারা চট্টগ্রামভিত্তিক পীর-মাশায়েক তরিকতপন্থী।
ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের ১৬ আসনসহ ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। এরমধ্যে তিনি পটিয়া ও দলের মহাসচিব চন্দনাইশ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।’
দুই কারণে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে উল্লেখ করে এম এ মতিন বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। তা রক্ষায় নির্বাচনে যাচ্ছে ইসলামী ফ্রন্ট।’
১৯৮০ সালে চট্টগ্রাম প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী ছাত্রসেনা। সেই থেকে ১৯৯১ সালে ইসলামী ফ্রন্ট গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতার পর থেকে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আসছে ইসলামী ফ্রন্ট। কয়েক বছর আগে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিয়ে চট্টগ্রামের চার উপজেলায় ফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন। এছাড়াও বড় কোনো নির্বাচনে চমক দেখাতে পারেনি তরিকতপন্থী দলটি।
গত সপ্তাহে নয়টি ইসলামপন্থী দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব বলেন, ‘আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সবদলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি। জোটগত নয়, এককভাবে নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
গতকাল ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাবে ১২১টি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। দলটির চেয়ারম্যান মাইজভাণ্ডারী তরিকতপন্থী পীর সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। নিজেকে ফটিকছড়ি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ১৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি।
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়ার পর আলোচনায় আসে দলটি। দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘তিন মাস আগে নিবন্ধন পেয়েছি। ইসলামী ৬টি দল নিয়ে জোট করেছি আমরা। সংবিধানের বাইরে অগণতান্ত্রিক অবৈধ কোনো সরকার আমরা চাই না। দেশি-বিদেশি অশুভ শক্তি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। গণতন্ত্র ও নির্বাচনের সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করতে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।’
গত ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের ১৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল ইসলামিক ফ্রন্ট। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যক্ষ আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইর।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামপন্থী ৯টি দলের শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেছেন। বৈঠকে ইসলামপন্থী দলগুলোর নেতারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহের কথা প্রধানমন্ত্রীকে তুলে ধরেছেন। কয়েকজন নিজেদের সংসদ সদস্য হওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সহায়তা চান বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, বিএনপি জোটের সঙ্গে কয়েকটি বড় ইসলামী দল ও সংগঠন রয়েছে। বিএনপিঘেঁষা ইসলামী দলগুলোর তৎপরতা ঠেকাতে ইসলামী দলগুলোকে কাছে টেনে নেয় আওয়ামী লীগ। বিএনপি জোট থেকেও কয়েকটি ইসলামী দলকে টেনে আনা হয়।
পূর্বকোণ/আরডি