চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

নতুন করে গাছ রোপণের উদ্যোগও নেই

ভাঙন-নিধনে বিলীনের পথে ঝাউবন আনোয়ারা

এম. আনোয়ারুল হক, আনোয়ারা

৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরের তীরে ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হচ্ছে আনোয়ারার সাগর উপকূলের শত শত ঝাউগাছ। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের আদলে গড়ে ওঠা দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর কর্ণফুলী। বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু নদীর কূল ঘেঁষে অবস্থিত প্রায় ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই সমুদ্র সৈকত। এখানে গত এক দশকে ভাঙন ও নিধনের শিকার হয়েছে অর্ধলাখেরও বেশি গাছ। ভাঙন অব্যাহত থাকায় একদিকে হারিয়ে যাচ্ছে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য। আর অন্যদিকে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে বেড়াতে আসা পর্যটক ও উপকূলীয় এলাকার মানুষ। পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে সৈকতের জীববৈচিত্র্য।
পারকী সমুদ্র সৈকত থেকে রায়পুর ইউনিয়নের পরুয়াপাড়া, গহিরা উঠান মাঝির ঘাট, বাইগ্যার ঘাট, বার আউলিয়া, সাঙ্গু নদীর মোহনা পর্যন্ত সমুদ্রতীরের প্রায় শতাধিক ঝাউগাছ গোড়া থেকে বালি-মাটি সরে গিয়ে উপড়ে পড়েছে। এছাড়া পরুয়াপাড়া এলাকায় গত ৩ বছর আগেও যেখানে ঝাউগাছের সারি ছিল: সেখানে ঝাউগাছের চিহ্নও নেই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ওসমান চৌধুরী জানান, পারকী থেকে গহিরা পর্যন্ত অব্যাহত ভাঙনে গত দুই বছরে স্থানভেদে এক কিলোমিটারেরও বেশি বালিয়াড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে সাগরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে পরুয়াপাড়া এলাকায় গড়ে ওঠা ঝাউবন। বন বিভাগের নিয়োজিত জিম্মাদার ও সাবেক ইউপি সদস্য ছালেহ আহমদ জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপড়ে পড়া গাছগুলো বন বিভাগ সদর রেঞ্জে নিলামে বিক্রি করে দেয়া হয়। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা ভিন্নকথা জানিয়ে বলেন, সাগরের ঢেউয়ে উপড়ে পড়ার নামে ভাল গাছগুলোও কেটে নামমাত্র নিলামে বিক্রি করে দেয় বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এছাড়া আশপাশে বসবাসকারীরা রাতের আঁধারে ঝাউগাছ কেটে পাচার করে আসার অভিযোগও রয়েছে। গাছ চুরি ঠেকাতে না পারলে এ ঝাউবন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে খুব শিগগিরই।

উপকূলীয় বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ‘জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকো ট্যুরিজম’ প্রকল্পের আওতায় গহিরা সমুদ্রপাড়ের ৫ হেক্টর এলাকায় ঝাউগাছ লাগানো হয়। গত ৭ বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাগানটি বিলীন হতে হতে আধা হেক্টরে এসে দাঁড়িয়েছে। ঝাউবনটি ভাঙনের কবলে পড়লেও সংশ্লিষ্ট কেউ রক্ষায় এগিয়ে আসছে না। স্থানীয়রা জানান, গত দুই বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জোয়ারের ঢেউয়ে প্রায় ৫০০ মিটার জায়গার ঝাউগাছ বিলীন হয়েছে। কিন্তু নতুন করে ঝাউবাগানের উদ্যোগও চোখে পড়ছে না। ভাঙন রোধে কোন ব্যবস্থাও নিতে দেখা যাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগ সদর রেঞ্জের বন্দর বিট কর্মকর্তা মো. হান্নানুজ্জামান বলেন, সদ্য যোগদান করেছি। ‘সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় জোয়ারের ঢেউয়ে প্রতিনিয়তই বিলীন হচ্ছে ঝাউবাগান। বর্ষা মৌসুমে ভাঙন বেশি দেখা দেয়। প্রাকৃতিক কারণে এ ভাঙন রোধ করার কোন সুযোগ বন বিভাগের নেই। পড়ে যাওয়া গাছ সংগ্রহ করে নিয়ম মোতাবেক নিলামে বিক্রি করা হচ্ছে।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট