চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

দৌরাত্ম্য দূর, বাড়ছে নিরাপত্তা

চমেক হাসপাতাল পুরনো ১২৬টির সাথে যুক্ত হলো নতুন ১৯৪টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা

ইমাম হোসাইন রাজু

৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:২৮ পূর্বাহ্ণ

অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও অধিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নতুন করে বসানো হয়েছে ১৯৪টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা)। ইতোমধ্যে এসব ক্যামেরা স্থাপনের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এই ক্যামেরাগুলো প্রতিটি ওয়ার্ডসহ সমগ্র হাসপাতাল চত্বরজুড়ে নজরদারির স্বার্থে বসানো হয়েছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। একই সাথে এগুলো শতভাগ সেবার মান নিশ্চিতেও কাজ করবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। এদিকে হাসপাতালের সুরক্ষা ও পরিসেবার সুবিধার্থে আরও ক্যামেরা বসানোর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে ১৫ লাখ টাকার বাজেট পাওয়া গেছে। তবে নতুন করে এসব ক্যামেরা কখন বা কোথায় স্থাপন করা হবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি কর্তৃপক্ষ। যদিও চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম জানিয়েছেন, যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানেই নতুন করে ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে, নতুন ১৯৪টি সিসিটিভি ক্যামেরা ছাড়াও চমেক হাসপাতালে আগ থেকেই ১১০ সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা আছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি ভবনেই রয়েছে ৪৮টি সিসিটিভি ক্যামেরা। বাকি ৬২টি ক্যামেরা ছিল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, মূল গেটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে। তবে কোনো ওয়ার্ডে বা ওয়ার্ডের বাইরে ছিল না নিরাপত্তার জন্য এসব ক্যামেরা। এছাড়া যে কয়েকটি স্থানে এসব ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল, তাও সম্পূর্ণ কাভার দেয়ার মতো ছিল না এবং অনেক ক্যামেরাই ছিল নষ্ট। তবে নতুন করে এই ১৯৪টি ক্যামেরা স্থাপনের ফলে প্রতিটি ওয়ার্ডের চিত্র ধরা যাবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নতুন করে স্থাপনের কাজ শুরু হওয়া ১৯৪টি সিসিটিভি ক্যামেরার মধ্যে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই কাজ শেষ হয়েছে। এরমধ্যে ওয়ার্ডের ভেতরে দুটি করে এবং বাইরে দুটিসহ মোট চারটি করে বসানো হয়েছে। এছাড়া যেই ওয়ার্ডটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেখানে আরও ক্যামেরা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, হাসপাতাল এলাকায় দালালদের উৎপাত, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চুরি এবং বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর চমেক হাসপাতালের ওয়ার্ডসহ সমগ্র চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। গত বছর এই বিষয়ে প্রথমে ১১০টি ক্যামেরা স্থাপনের অনুমতি চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা খাত থেকে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে ১১০টি সিসি টিভি ক্যামেরা ও অন্যান্য ডিভাইস ক্রয়ের অনুমতি দিলেও দুই মাস পরে আরও ১৫ লাখ টাকার বাজেট দেয় মন্ত্রণালয়। এই ৪৫ লাখ টাকার বাজেটের মধ্যেই টেন্ডারের মাধ্যমে নতুন ১৯৪টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শুরু হয়।

চট্টগ্রামের বৃহত্তম এই সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে শুধুমাত্র চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নয়। এর আগেও পাঁচলাইশ থানা পুলিশের পক্ষ থেকে হাসপাতালের বহিরাঙ্গণে লাগানো হয় ১৬টি সিসিটিভি ক্যামেরা। সব মিলিয়ে আগে থেকেই চমেক হাসপাতালে ১২৬টি ক্যামেরা স্থাপন করা ছিল। নতুন করে এই ১৯৪টি ক্যামেরা স্থাপন করা হলে ৩২০টি ক্যামেরার আওতায় থাকবে চমেক হাসপাতাল।

এসব ক্যামেরা স্থাপনের ফলে দালালদের দৌরাত্ম অনেকাংশেই কমে গেছে জানিয়ে হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের দাবি চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আগে দিশেহারা হয়ে পড়লেও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের ফলে তা পুরোপুরি কমে আসবে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘৭০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে। এতে করে পুরো হাসপাতালের নিরাপত্তার আওতায় চলে আসবে। হাসপাতালের বাইরে ছাড়াও প্রতিটি ওয়ার্ডের ভেতরেও এসব ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে’।
এসব ক্যামেরা ছাড়াও নতুন করে আরও ক্যামেরা স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে আরও ১৫ লাখ টাকার বাজেট এসেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘১৯৪টি ক্যামেরা স্থাপনের পর, যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানে এই বাজেট দিয়ে লাগানো হবে। তবে এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট