চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের ৭ম দিনে বক্তারা

অন্যায় ও বাতিল অপশক্তির কাছে মাথা নত করা যাবে না

৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:১৯ পূর্বাহ্ণ

জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে আহলে বায়তে রাসূল (দ.) স্মরণে ১০ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের গতকাল শনিবার ৭ম দিনে দূর দূরান্ত থেকে আসা আহলে বায়তপ্রেমী সুন্নি ছাত্র উলামা জনতার ঢল নামে। মাহফিলে দেশি-বিদেশি আলোচক ও ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেছেন, কারবালা ময়দানে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও আহলে বায়তে রাসুলের (দ.) নিষ্পাপ পূতপবিত্র সদস্যগণের শাহাদাতের শিক্ষা এটাই যে, প্রয়োজনে হাসিমুখে নিজের মূল্যবান জীবন আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করতে হবে। তবুও অন্যায়, মিথ্যা, জুলুমবাজি ও বাতিল অপশক্তির কাছে মাথা নত করা যাবে না। যাবতীয় প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই যুগে যুগে হকপন্থীরা টিকে থাকবে, এর বিপরীতে বাতিল অপশক্তিও নানান কায়দায় নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেবে। আর হকপন্থী হোসাইনি আদর্শে উজ্জীবিত মানুষদেরকে ঈমানি শক্তি ও আদর্শিক শক্তি দিয়ে বাতিল এই অপশক্তিকে মোকাবিলা করতে হবে-এটাই শাহাদাতে কারবালার অন্তর্নিহিত শিক্ষা। গতকাল শনিবার ৭ম দিনের মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন কুতুবদিয়া শাহ আব্দুল মালেক (রহ.) দরবার শরিফের সাজ্জাদানশিন পীরে তরিকত শাহ আব্দুল করিম কুতবী । প্রধান অতিথি ছিলেন বৈরুত লেবানন গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর আওলাদে

রাসুল (দ.) শাঈখ শাহ্ সূফী সৈয়দ জামাল শাক্কার আল-হোসাইনী আল-হাশেমী। তিনি বলেন, কারবালা আমাদের ঘুমন্ত চেতনাকে জাগিয়ে তুলে। কারবালা ময়দানে ইয়াজিদি গোষ্ঠী যে জঘন্য নৃশংসতা ও বর্বরতা চালিয়েছে ইতিহাসে এর দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত নেই। আজ যারা ইসলামের কথা বলে, ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলে সমগ্র দুনিয়ায় সহিংসতা-সংঘাত ছড়িয়ে দিচ্ছে এরাই মূলত ইয়াজিদের দোসর। এরাই জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদি, এদের বিরুদ্ধে দেশে দেশে শান্তিকামী মানুষকে প্রতিরোধের প্রাচীর গড়ে তুলতে হবে। মুখ্য আলোচক ছিলেন, মালয়েশিয়ার ওয়ার্ল্ড সুফি সেন্টারের সেক্রেটারি জেনারেল শাঈখ আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুল করিম বিন হাদীদ মোজাদ্দেদী। তিনি বলেন, আহলে বায়তে রাসুলের (দ.) প্রতি মহব্বত ও ভালোবাসাই ঈমানের চাবিকাঠি। আর যারা আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) প্রতি অশ্রদ্ধা-অবজ্ঞা দেখায় তারাই হচ্ছে ইয়াজিদি। এরা বড়ই দুর্ভাগা। ইয়াজিদি ফিতনা থেকে আমাদের ঈমান ও আমলকে হেফাজত করতে হবে। মাহফিলে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান আলহাজ সূফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, মানুষের কল্যাণ করা, ক্ষুধার্তকে খাবার জোগানো, রোগে শোকে কাতর অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য। যারা মানুষের ক্ষতি করে এবং সন্ত্রাস জঙ্গিবাদে জড়ায় তারা ইসলাম ও মানবতার শত্রু। এদের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সূফী মিজান বলেন, প্রকৃত কোনো মানুষ কখনো নারী জাতির অবমাননা করতে পারেনা। আমাদের চোখ মুখ ও হাতকে সংযত রাখতে হবে। জীবনে সংযত ও আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে হবে। আমি এখন জীবন সায়াহ্নে এসে দাঁড়িয়েছি। জানিনা, কখন পরপারে যাওয়ার ডাক আসে। এই শাহাদাতে কারবালা মাহফিলকে আপনারা চলমান রাখবেন। এতে দুনিয়া-আখিরাতে আপনারা অফুরন্ত কামিয়াবি ও নিয়ামতের ভাগিদার হবেন।

হানাফি মাযহাবের শ্রেষ্ঠত্ব বিষয়ে আলোচনা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.আল্লামা মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ। তিনি বলেন, চার মাযহাব উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে সঠিক মাযহাব হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। চার মাযহাবের মধ্যে হানাফি মাযহাবের ইমামই ছিলেন তাবেয়ী। বক্তব্য রাখেন হালিশহর মাদ্রাসা-এ তৈয়বিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল এর প্রভাষক আল্লামা মুহাম্মদ ইউনুচ তৈয়বী ও মাওলানা মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম জেহাদী। সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা শাহ আবদুল করিম কুতুবি বলেন, হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) কারবালা ময়দানে জীবন উৎসর্গীত করেছেন বলেই আমরা আজ অবিকৃত ইসলাম পেয়েছি। আমরা হোসাইনি ইসলামের জন্য নিজেদের জান-মাল কুরবানি দিতে প্রস্তুত। আলহাজ মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক ও মাওলানা আহমদুল হক এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মাহফিলে অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ মাহাবুবর রহমান, আনজুমান ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ মোহাম্মদ মহসিন ও সেক্রেটারি জেনারেল আলহাজ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, সৈয়দ সহিদ উদ্দীন আহমদ মাইজভা-ারী, আশেকানে আউলিয়া মাদ্রাসা কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক আল্লামা খাইরুল বশর হক্কানী, আলহাজ মোহাম্মদ সিরাজুল হক, ডা. আল্লামা সৈয়দ মিশকাতুন নূর মাইজভা-ারী, ফতেপুর দরবার শরীফের সাজ্জাদানশিন শাহাজাদা সৈয়দ সমরাট ফতেপুরী। মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন মাদ্রাসার আলেমবৃন্দ, গাউসিয়া কমিটির সর্বস্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন দরবারের সাজ্জাদানশিন, মতোয়াল্লীবৃন্দ ও খাদেমগণ এবং শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ। সালাত সালাম শেষে বিশ্বের নিপীড়িত মানবতার পরিত্রাণ, দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি সমৃদ্ধি কামনায় মুনাজাত করা হয়। কুরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন আন্তর্জাতিক ক্বারী শাইখ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী। হামদ ও নাতে রাসূল (দ) পরিবেশন করেন শায়ের মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ। আজ রবিবার মাহফিলের ৮ম দিবসে সভাপতিত্ব করবেন মাইজভা-ার শরিফ গাউছিয়া হক মনজিলের সাজ্জাদানশিন হযরত সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মাইজভা-ারী। বিদেশি আলোচক থাকবেন লেবানন গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর শাঈখ শাহ্ সুফী সৈয়দ জামাল শাক্কার আল-হোসাইনী। জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের নিচতলায় প্রতিদিনের মাহফিলে মহিলাদের জন্য পর্দা সহকারে বক্তব্য শোনার ব্যবস্থা রয়েছে। মাহফিল সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে- ংঁভরঃাড়হষরহব, িি.িংযধযধফধঃ-ব-শধৎনধষধ.পড়স- বিজ্ঞপ্তি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট