চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

 পাহাড় চূড়া ও খাঁজে ড্রেন নির্মাণ করে পানি নিষ্কাশন # ধস ঠেকাতে সবখানে লাগানো হয়েছে চায়না ঘাস

ধস-মৃত্যুর মাঝেই নান্দনিক মীর পাহাড়

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:২২ পূর্বাহ্ণ

পাহাড় কাটা, দখল, অবৈধ বসতি ও উচ্ছেদ-এসব তেতো কাহিনী। প্রতিনিয়ত ধ্বংস করা হচ্ছে পাহাড়। বর্ষা আসলেই পাহাড় ধস আর হতাহতের ঘটনা ঠেকাতে যারপরনাই তোড়জোড় প্রশাসনের। পাহাড় নিয়ে হতাশার মধ্যেও পশ্চিম ষোলশহর হিলভিউতে মীর পাহাড় হচ্ছে একেবারেই ব্যতিক্রম। সুরক্ষা আর নান্দনিকতার অনুপম মডেল। চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলমের কারিগরি এবং প্রকৌশলী পরামর্শ নিয়ে ন্যাড়া পাহাড়কে সুরক্ষা করা হয়েছে। ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নান্দনিক ও সুশোভিত করা হয়েছে। পাহাড়ঘেরা নান্দনিক সৌন্দর্যের অনুপম আঁধার চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে পাহাড়ের সৌন্দর্য অনেকটা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত পাহাড় কাটা, অবৈধভাবে দখল ও বসতি নির্মাণের কারণে ম্লান হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের সৌন্দর্য। শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গ্রুপ মীর গ্রুপের পরিচালক মীর মোহাম্মদ হাসান বলেন, বাবার শখ পূরণ করতেই খ- খ- ন্যাড়া পাহাড় কিনে সৌন্দর্যবর্ধন করেছি। পাহাড়টি হচ্ছে ৯ কানি জায়গার উপর। খ- খ- করে আবাসিক প্লট উপযোগী করেছিল পাহাড় মালিক। কিন্তু প্লট কিনলেও বাড়িঘর নির্মাণ করতে গিয়ে বাধা-বিপত্তির মুখে পড়েছিল অনেকেই। ২০০৫ সালে

খ- খ- পাহাড় কিনে সৌন্দর্যবর্ধন কাজ শুরু করা হয়। দুই শতাধিক প্লট মালিকের কাছ থেকে প্রায় ৫ কানি জায়গা কিনেছে মীর গ্রুপ। তিনি বলেন, ২০০৫ সাল থেকে চুয়েটের সাবেক ভিসি জাহাঙ্গীর আলমের কারিগরি ও প্রকৌশলী পরামর্শে পাহাড় সুরক্ষায় গাইডওয়াল নির্মাণ, দেশি-বিদেশি ঘাস, গাছপালা, গুল্মলতা লাগানো হয়েছে যাতে পাহাড় ধসে না যায়। এছাড়াও ভাঁজে ভাঁজে লাগানো হয়েছে দেশি-বিদেশি ফলমূলের নানা প্রজাতির গাছ। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের বিনোদন-বিশ্রামের জন্য পিতার (হাজি মীর আহমদ সওদাগর) শখ পূরণ করতে পাহাড়কে নান্দনিকতায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আগামী প্রজন্মের জন্য বিনোদন স্পট হিসেবে নানা ধরনের বিনোদনসামগ্রী স্থাপনের আশা রয়েছে বলে জানান তিনি।
নগরীর লালখানবাজার মতিঝর্ণা পাহাড়ে ২০০৭ সালের ১১ জুন পাহাড় ধসের স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে মারা যায় ১২৭ জন মানুষ। মর্মান্তিক এ ঘটনার পর ভূমি ধসের ২৮ কারণ ও ৩৬ সুপারিশমালা দেওয়া হয়েছিল যার একটিও বাস্তবায়ন হয়নি এক যুগ পরও। এরপর থেকে পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিল যেমন থামানো যায়নি, তেমনি বন্ধ হচ্ছে না পাহাড় কাটা ও অবৈধ দখল।

বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ভারী বর্ষণ, পাহাড়ের বালির আধিক্য, উপরিভাগে গাছ না থাকা, ভারসাম্য নষ্ট করা, পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস, পাহাড় থেকে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখা, বনায়ন না করা। মীর পাহাড়ে দেখা যায়, পাহাড় ধস রোধে সবকটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

দেখা যায়, পাহাড়ের গায়ে বড় দুটি গাইড ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। একটি হচ্ছে ৩০ ফুট উচ্চতার। পাইলিং থেকে ৩৮ ইঞ্চি হয়ে উপরে হচ্ছে ২৪ ইঞ্চি চওড়া। দ্বিতীয়টি হচ্ছে পাইলিং থেকে ২৮ ইঞ্চি হয়ে উপরে ১৪ ইঞ্চি চওড়া। সেটির উচ্চতা হচ্ছে ২০ ফুট। পাহাড় ধস রোধে পাথর ঢালাই করে দেয়াল দুটি নির্মাণ করা হয়েছে। পাহাড় চূড়া ও খাঁজে ড্রেন নির্মাণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়াও পাহাড়ের চূড়া, খাঁজ ও উঠার রাস্তায় লাগানো হয়েছে চায়না ঘাস। পাহাড় ধস ঠেকানোর লক্ষ্যে এই ঘাস লাগানো হয়। পাহাড়ের পাদদেশ, পাহাড়ের গোড়া ও গায়ে লাগানো হয়েছে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির সারি সারি গাছ। সবুজ আর নান্দনিকতায় এক অনুপম মডেল এ পাহাড়।

২০০৭ সালের বিপর্যয়ের পর ৩৬ সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল পাহাড়ে জরুরি বনায়ন, গাইডওয়াল নির্মাণ, নিষ্কাশন ড্রেন ও মজবুত সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা, পাহাড়ের পানি ও বালি অপসারণের ব্যবস্থা করা। সরকারি, বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাষিত কোন পাহাড়ে ১২ বছরে একটি সুপারিশও বাস্তবায়ন হয়নি। শুধুমাত্র বাস্তবায়ন হয়েছে ব্যক্তি মালিকানাধীন মীর পাহাড়ে।
দেখা যায় এই পাহাড়ে মাল্টা, কমলা থেকে শুরু করে দেশি ফল আম, কাঁঠাল, জামরুল, জাম, আতা, তেঁতুল, পেয়ারাসহ নানা ফলফলাদির গাছ লাগানো হয়েছে। লাগানো হয়েছে সারি সারি সুপারি গাছ।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ৩০টি পাহাড় চিহ্নিত করা হয়েছিল। বর্তমানে ১১টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ৬৬৬টি পরিবারের বসবাস রয়েছে। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীর সংখ্যা সরকারি হিসাবের কয়েকগুণ বেশি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট