চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

কবুতরগুলো প্রথম সাগর পাড়ি দিয়ে রেকর্ড করেছিল # নেদারল্যান্ড-বেলজিয়ামের প্রতিটি কবুতরের দাম দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা

চোখ জুড়িয়ে যায় কবুতরে কক্সবাজার

আরফাতুল মজিদ # কক্সবাজার

৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:২৩ পূর্বাহ্ণ

সমুদ্রসৈকতের একটু পাশে কক্সবাজার শহরের লাইট হাউস এলাকায় নিজ বাড়ি ‘রংধনু’র চার তলার ছাদে শৌখিন কবুতর পালন করছেন কাজী মোরশেদ আহমদ বাবু। তিনি পৌরসভার ১২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। শখেরবশে ছাদের উপর কবুতর পালন করছেন। বিচিত্র রঙের উন্নত দেশি-বিদেশি ৩০০ জোড়া কবুতর রয়েছে। কয়েক জোড়া দেশি কবুতর ছাড়া বাকি সবগুলো বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স ও আমেরিকার

রেসার কবুতর। প্রায় ৫০০টি রেসার কবুতর রয়েছে। এমনকি বেলজিয়ামের একটি কবুতরের দাম ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতিটি রেসার কবুতরের দাম সর্বনি¤œ ৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। এসব কবুতরের রয়েছে আলাদা গুণ। যা পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।

কাউন্সিলর বাবু বলেন, গত ৩ বছর আগে মাত্র ৫০টি কবুতর পালন শুরু করি ছাদের উপর। তখন আমি কাউন্সিলর নির্বাচিত হইনি। কবুতর পালনের প্রায় ১০ মাস পর আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। বর্তমানে আমার ৩০০ জোড়া কবুতর রয়েছে। এরমধ্যে ৫০০ টি রেসার করা কবুতর। জনগণকে সেবা দেওয়ার পাশাপাশি আমি নিয়মিত কবুতরও পালন করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, রেসার বা রেসিং হোমার বিশেষভাবে ব্রিড করা কবুতর যা কিনা রেসিং এর জন্যে উদ্ভাবন করা হয়েছে । এর বিশেষ ক্ষমতা হল ‘হোমিং এ্যাবিলিটি’ বা বাড়ি চিনে ফিরে আসার দক্ষতা। তাছাড়া প্রচ- শক্তিশালী এই কবুতর ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিশ্রাম না নিয়েই উড়তে পারে। বাড়ি ফেরার আগ পর্যন্ত কোথাও থামেও না। শহরের বাহারছড়া এলাকার সৌখিন কবুতর পালনকারী জাহেদুল ইসলাম আমাকে রেসার কবুতর পালনের পরামর্শ দেন।
কক্সবাজারে সৌখিন কবুতর পালনকারীদের নিয়ে ‘কক্সবাজার রেসিং পিজিওন ফেন্সিয়ার্স ক্লাব’ নামে একটি ক্লাব রয়েছে। এই ক্লাবে প্রায় ৫০ জন সদস্য বাড়িতে শখের বশে রেসার কবুতর পালন করেন। ক্লাবের পুরো সমন্বয় করেন প্রতিষ্ঠাতা জাহেদুল ইসলাম।

জাহেদুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, মাত্র ৬ ঘণ্টায় বিরতিহীনভাবে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় যেতে পারবে এমন অসংখ্য কবুতর রয়েছে কাউন্সিলর বাবুর খামারে। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরত্ব আকাশ পথে কক্সবাজার থেকে ঢাকার। এই পথ পাড়ি দিতে বেলজিয়ামের এসব কবুতরের সময় লাগবে মাত্র ৬ ঘণ্টা। তবে কবুতরগুলোর বাচ্চা প্রজনন করতে হয়। প্রজনন করতে প্রায় ১ বছর লাগে। এরপর শীতকালে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে রেসার কবুতর। রেসার কবুতরগুলো টানা দুই বার বাচ্ছা দিতে পারে। এরপর চার মাস রেস্টে থাকতে হয়। প্রজননের পর বাচ্চাগুলোকে রেসারের উপযোগী করে তোলা হয়। কক্সবাজারে রেসার কবুতরের কোন বিশেষ ডাক্তার না থাকায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেখে চিকিৎসা ও ওষুধ দিতে হয় কবুতরগুলোকে।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে মাত্র ১২০ মিনিট সময় নিয়ে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের সৈকত থেকে পর্যটন শহর কক্সবাজারে এসেছিল এসব রেসার কবুতরগুলো। প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে প্রথম সমুদ্র পাড়ি দিয়ে রেকর্ড করেছিল রেসার কবুতর। প্রথমবারের মতো সাগর পাড়ি দেয়ার এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল কক্সবাজার রেসিং পিজিওন ফেন্সিয়ার্স ক্লাব। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ৪৩টি কবুতর। ৪৩ টি কবুতর রেসার করে সেন্টমার্টিন থেকে কক্সবাজার শহরে নিজ বাসায় পৌঁছেছিল ৩৯টি কবুতর। এরমধ্যে কাউন্সিলর বাবুর কবুতরও ছিল। এখন বাবু’র অনেক রেসার কবুতর রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগামীতে আমরা তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৪শ থেকে ৭শ কিলোমিটার পর্যন্ত রেসার করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এতে কক্সবাজারে রেসার কবুতর পালনকারীরা অংশগ্রহণ করবে। পর্যটন এলাকা হিসেবে এটি অনেক বিদেশি পর্যটকদেরও আকর্ষণ করবে। নেদারল্যান্ড ও বেলজিয়ামের কবুতর পালনকারীরা কক্সবাজারে এসে রেসারে অংশগ্রহণও করতে পারবে আগামীতে। পুরোবিশে^র সার্ফিং প্রতিযোগিতা যখন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে হয়; তেমনি আগামীতে কবুতর রেসারও হবে।

কাউন্সিলর বাবু বলেন, শখের কারণে কবুতর পালন করছি। এতে কোন ঝুঁকি নেই। কবুতর পালন কম খরচে বেশি লাভজনক। বাড়িতে কবুতর পালন একটা আলাদা মজা। প্রত্যেক বেকার যুবক বাসা বাড়িতে, ছাদের ওপর কবুতর পালন করলে নিজেরা লাভবান হতে পারবেন। এছাড়া যারা মাদকাসক্ত হয়ে গেছেন, বিষন্নতায় ভূগছেন তারা কবুতর পালনের দিকে মনোযোগী হলে মন থেকে সব অপরাধ বোধ দূরে চলে যাবে। ফিরে পাবেন স্বাভাবিক জীবন।

 

 

পুর্বকোণ/ এ-এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট