চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

নাগরিক সংবর্ধনায় সিটি মেয়র আ জ ম নাছির

বিশ্ব জয় করেছেন প্রফেসর ডা. রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত রবিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:০৫ পূর্বাহ্ণ

সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, নিজের দক্ষতায় চট্টগ্রামের সন্তান নিউরো সায়েন্টিস্ট ও নিউরো সার্জন প্রফেসর ডা. রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত রবিন বিশ্বকে জয় করেছেন। ২০১২ সাল থেকে তাঁকে চট্টগ্রামে আনার চেষ্টা করেছি। অবশেষে তাকে আমরা পেয়েছি। গতকাল বৃহস্পতিবার জামালখানের চট্টগ্রাম সিনিয়র্স ক্লাব মিলনায়তনে ডা. রবিনের নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এ সংবর্ধনার আয়োজন করে। সিটি মেয়র বলেন, ৮৪ বছর বয়সেও ড. রবিন চশমা ছাড়া ল্যাপটপ থেকে দেখে বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে মাটি, মানুষ ও দেশকে কীভাবে ভালোবাসতে হয় তা শিখতে পারবো। মানুষ যত বড় হয়, প্রতিষ্ঠিত হয় তখন শেকড় ভুলে যায়। অহংবোধ তৈরি হয়। ৬৪ বছর দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেও তিনি চট্টগ্রামের কথা ভুলে যাননি। মেয়র বলেন, ২০০৫ সালে কলকাতায় রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স প্রতিষ্ঠান করেছেন ডা. রবিন সেন্গুপ্ত। তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন
। ৯ম পৃষ্ঠার ৫ম ক.­

পরিচালনাধীন মেমন জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শনের আহবান জানিয়ে এই হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধিতে তিনি ড. রবিনের সহযোগিতা কামনা করেন। একইসাথে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাথে কলকতারা নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউটের সাথে এমওইউ স্বাক্ষরেরও আগ্রহ প্রকাশ করেন।
সংবর্ধিত ব্যক্তি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আঁই চাটগাঁইয়া পোয়া। ১৯৫৫ সালে পড়ালেখা গরিবারলাই আঁই কলকাতাত যাই। এরপর বিলাত। আর ন আই দেশত। আজুয়া ৬৪ বছর পর দেশত আসসিযে। আঁই ইংল্যান্ডত থাকিলেও ইংরেজি নঅ শিখি। প্রয়োজনে ইংরেজিত লেখি। আঁরা বাসাতও চাটগাঁইয়া ভাষায় কথা কই।’ এরপর ইংরেজীতে ড.রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত রবিন লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার প্রতিটি জিন এ মাটি থেকে পেয়েছি। ফতেয়াবাদ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ব্রজ সাহার স্মৃতি মনে পড়ে। বিশে^র অনেক দেশ ভ্রমণ করার কথা উল্লেখ করে বলেন, একদিকে পাহাড়, অন্যদিকে কর্ণফুলী-চট্টগ্রামের এমন সৌন্দর্য বিশ্বের আর কোথাও দেখিনি। আমার জন্মস্থান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সব বন্ধু, স্বজন, শুভাকাক্সক্ষী, ডোনার, সহকর্মীদের ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবো না।

ড. সেনগুপ্ত বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বন্দর এ নগর। এটি সম্প্রীতির তীর্থভূমি। সূর্য সেন চট্টগ্রামের সন্তান। বাংলা রক মিউজিকের জন্মভূমি চট্টগ্রাম। ক্রিকেটে বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে।
চুয়েটের উপাচার্য রফিকুল আলম বলেন, ডা. রবিন আমাদের জন্য গর্বের। তিনি জন্মস্থানকে ভুলেননি। তিনি মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার জীবন ও কর্ম থেকে আমাদের চিকিৎসকরা অনুপ্রেরণা পাবেন।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ড. রবিনের জ্ঞান ও মেধা বাংলাদেশের স্নায়ু রোগীদের কল্যাণে কাজে লাগাতে চাই সমন্বিত উদ্যোগ। তাঁর মতো গুণীজনেরা সমগ্র বিশ্বের মানবকল্যাণ নিয়ে ভাবেন।
চমেক অধ্যক্ষ ডা. সেলিম মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ডা. রবিন বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি শিক্ষক, লেখক, সার্জন, গবেষক। তার বই আমরা চমেকের গ্রন্থাগারে সংরক্ষণ করেছি। আশা করি কলকাতা নিউরোসায়েন্সের সঙ্গে চমেকের একটি চুক্তি হলে জ্ঞান আদান প্রদান সহজতর হবে। তাঁর জ্ঞান আমাদের চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারবো।
সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ডা. রবিন চট্টগ্রামের সন্তান। কিন্তু তিনি বিশে^র জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। তাঁর সামাজিক ও মানবিক কর্মকা- চট্টগ্রামেও বিস্তৃত করার আহবান জানান তিনি।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, ডা. রবিনের মত ব্যক্তিকে সম্মান জানাতে পেরে চট্টগ্রামবাসীই সম্মানিত হয়েছে।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামসুদ্দোহার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রকৌশলী ঝুলন দাশ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চসিক প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী ও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের ডা. শাহ মোহাম্মদ জহির । প্রফেসর ড. রবিনের সফরসঙ্গী নিউরোলোজিস্ট ঋষি কুমার, ডা. আশিষ দত্ত, ডা. দিপেন্দ্র প্রধান, সুরদিপ দে, ডা. গৌরী দাশ, তুষার চক্রবর্তী এবং ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডা. আহসান হাবীব, ডা. তৌহিদুল ইসলাম, ডা. সেলিম শাহী, ডা. মোরশেদ বাকী ও আরিফুল উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি মজহারুল হক শাহ, চট্টগ্রাম কলেজ অধ্যক্ষ আবুল হাসান, প্রফেসর ডা. এল এ কাদেরী, ডা. বাসনা মুহুরী, চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ, সিটি কর্পোরেশন মেমন মাতৃসদন হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. প্রীতি বড়ুয়া প্রমুখ।
একনজরে ডা. রবিন

নগরের ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের উত্তর ফতেয়াবাদের নন্দীরহাট গ্রামে জন্ম ১৯৩৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। ১৯৪৪ সালে নন্দীরহাট শৈলবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষায় হাতেখড়ি। ১৯৫৩ সালে ফতেয়াবাদ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫৫ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৬১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস, ১৯৬৭ সালে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এফআরসিএস, ১৯৭৭ সালে নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০১ সালে ডারহ্যাম ইউনিভার্সিটি ও ২০০৯ সালে ভারতের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স থেকে ফেলোশিপ করেন। ১৯৭৩ সালে দিল্লি­র সফদরজং হাসপাতালে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি যুক্তরাজ্যের নিউ ক্যাসেল জেনারেল হাসপাতালে ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। ২০০২ সালে নিউ ক্যাসল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের অপারেশন থিয়েটারের নাম রাখেন দ্য রবিন সেনগুপ্ত থিয়েটার। ২০১২ সালে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতির হাত থেকে বিবেকানন্দ সম্মাননা গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালে ‘নিউরো সার্জিক্যাল কনট্রিবিউশন অ্যান্ড নিউরো সার্জিক্যাল ডেভেলপমেন্ট’র জন্য ইংল্যান্ডের রানি কর্তৃক প্রিন্স চার্লস থেকে অফিসার অব দ্য ব্রিটিশ এমপায়ার (ওবিই) গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে দ্য ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব নিউরো সার্জিক্যাল সোসাইটি থেকে দ্য মেডেল অব অনার দেয়া হয়। ২০০৫ সালে কলকাতার মল্লিক বাজারে ১৫০ শয্যার নিউরোলজি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট