চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দুই সরকারি পদে দেড় যুগ ধরে একই ব্যক্তি

ইমাম হোসাইন রাজু

৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:৪৪ পূর্বাহ্ণ

তিনি একাধারে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আবার ইউনিয়ন পরিষদের সচিবও। অথচ সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী একই ব্যক্তি দুই জায়গায় চাকরি করতে পারেন না। তবে সরকারি এই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি গত দেড় যুগ ধরে চট্টগ্রামের দুই উপজেলায় এমন অনিয়ম করেছেন। ইতোমধ্যে যার বিষয়ে স্বয়ং দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর অনুসন্ধান করছে। যার প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে দুদকের অনুসন্ধানে।
দুদক ও শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারা উপজেলার চুন্নাপাড়ার আব্দুস সাত্তারের ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম ২০০০ সালের ২৯ অক্টোবর লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নে সচিব হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের দশ মাস পর তথা ২০০১ সালের ২৯ আগস্ট তিনি সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন আনোয়ারা উপজেলার সরস্বতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই স্কুলে দুই বছর চাকরি করার পর তিনি ২০০৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন। কিন্তু এর একমাস আগে তথা একই বছরের ২৩ জানুয়ারিতে আনোয়ারা উপজেলার দক্ষিণ জুইদ-ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরবর্তীতে একই উপজেলার উত্তর বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে বদলি হয়ে বর্তমানেও সেখানে তিনি কর্মরত রয়েছেন। জানা যায়, রফিকুল ইসলাম আনোয়ারা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

তাঁর এমন প্রতারণার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসেও তদন্ত হচ্ছে। এতদিন তিনি দুই প্রতিষ্ঠানে এক সাথে চাকরি করে আসলেও বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ২০১৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি সচিবের পদ থেকে অব্যাহতি নেন। সচিবের পদ থেকে তিনি অব্যাহতি নিলেও এতদিন তিনি সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছেন। একইসাথে তিনি সেখান থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার বেতন-ভাতা গ্রহণ করেন।
রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন থেকে এমন অনিয়ম করে আসলেও বিষয়টি জানা নেই বলে জানিয়েছেন আনোয়ারা উপজেলা শিক্ষা অফিসার কবিরুল ইসলাম। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘এই প্রথম আপনার কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরেছি। এর আগে আমার জানা ছিলো না। কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর এমন করার সুযোগ নেই। আমি বিষয়টির খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো’।

দুদক সূত্রে জানা যায়, দুই প্রতিষ্ঠানে একই ব্যক্তি কর্মরত থেকে সরকারি কোষাগার থেকে প্রতিমাসে ভাতা নিচ্ছেন এমন অভিযোগের বিষয়টি দুদকের কাছে আসার পর রফিকুল ইসলাম ২০১৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর চুনতি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব পদ থেকে অব্যাহতি দেন। তবে এর পূর্বে তিনি ওই ইউনিয়নের সচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকার কারণে রফিকুল ইসলাম চুনতি ইউনিয়নে তার পরিবর্তে আপন ভগ্নিপতি মো. আবু তাহেরকে (বর্তমানে মৃত) সচিবের দায়িত্ব দিয়ে আসেন। তবে এরজন্য তাহেরকে কিছু অর্থ দিলেও মাসের পুরো বেতন রফিকুল ইসলামের একাউন্টেই চলে যেতো।

এ বিষয়ে দুদকের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা পূর্বকোণকে বলেন, ‘তিনি ইউনিয়নের সচিবের দায়িত্বের বিষয়টি এতদিন গোপন করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। যখন বিষয়টি জানাজানি হয়, তখন তিনি সচিবের পদ থেকে অব্যাহতি দেন। তবে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন’।
জানতে চাইলে এসব বিষয় অস্বীকার করে রফিকুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমি কখনোই সচিবের দায়িত্ব পালন করিনি। এসব মিথ্যে। আমার চাকরিটা শুরু হয় সরস্বতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। এর বাইরে আমি আর কোথাও চাকরি করিনি’।
আবু তাহের কি হয়, জানতে চাইলে, প্রথমে তিনি ‘এই নামে আমার নিকটাত্মীয় নেই’ বলে জানান। এর কিছুক্ষণ পর তিনি বলেন, সে আমার দুঃসম্পর্কের ভগ্নিপতি হয়’। বলেই ‘কথা বুঝা যাচ্ছে না। আপনাকে দুই মিনিট পরে আমি কল দিচ্ছি বলে’ রফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোন কলটি কেটে দেন।

তবে রফিকুল ইসলাম যে চুনতি ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের পদে দায়িত্বে ছিলেন এই বিষয়টি স্বীকার করেছেন ওই ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম স্বয়ং। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমার দায়িত্বের শুরুতেই রফিকুল ইসলাম নামে একজন সচিবের পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর বাড়ি আনোয়ারায়। পরবর্তীতে তিনি শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন বলে শুনেছি’।

এ প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর উপ-পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানের পর এ বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে কমিশনে পাঠানো হবে। কমিশন যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা সে সিদ্ধান্ত অনুসারে কাজ চালিয়ে যাবো’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট