চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

তিন কূটনীতিকের কাছে ঐক্যফ্রন্টের নালিশ দেশ সংবিধান মতো চলছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক , ঢাকা অফিস

৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:২৪ পূর্বাহ্ণ

ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। বৈঠকে গণতন্ত্র, ভোট ডাকাতির নির্বাচন, তথাকথিত সংসদ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচারবিভাগ, দুর্নীতি, অর্থনীতি, রোহিঙ্গা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয় কূটনৈতিকদের কাছে তুলে ধরেছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। তবে এ বৈঠকে কূটনৈতিকরা কোনও মন্তব্য করেননি। তারা শুধু শুনেছেন এবং খাতায় নোট করেছেন। জানা গেছে, এ বৈঠকে কূটনীতিবিদদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত, যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার এবং কানাডার উপ

রষ্ট্রদূত। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী; জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)-এর সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্য’র আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খানের বাসায় গতকাল বুধবার সকাল সোয়া ১০টা থেকে টানা পৌনে দুই ঘণ্টা বৈঠক হয়। এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় জানা গেছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন এক নেতা জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বৈঠকে রাষ্ট্রদূতদের কাছে অভিযোগ করেন ‘দেশ সংবিধানমতো চলছে না’ বলে। বৈঠকসূত্রে জানা যায়, শুরুতেই রবার্ট মিলার এবং অ্যালিসন ব্লেইক জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের কাছে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান। পাশাপাশি তারা এও জানতে চান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা এখন কী করবেন বা কী করতে চান? এ ব্যাপারে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে তাদের চাওয়াটা কী? জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনারা অবগত আছেন। নতুন করে কিছু বলার নেই। আপনারা জানেন, বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী চলছে না। যে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেই লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য থেকে সরকার সরে গেছে। রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে নেই। যে সরকার দেশ চালাচ্ছে, সেটা জনগণের ভোটে প্রতিষ্ঠিত না। একটা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বর্তমান পার্লামেন্ট গঠন করা হয়েছে।’ সূত্রমতে, ড. কামালের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রবার্ট মিলার বলেন, ‘আপনারা তো সেই পার্লামেন্টে গেছেন। এখন কী বুঝছেন?’ রবার্ট মিলারের এ প্রশ্নের জবাবে, ‘ড. কামাল হোসেন বলেন, এই সংসদকে তো আমরা সংসদই মনে করি না। তারপরও যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা সংসদে গেছেন গণতন্ত্র চর্চার ন্যূনতম সুযোগটুকু কাজে লাগাতে। তারা সেখানে যতটুকু সুযোগ পাচ্ছেন কথা বলছেন। কিন্তু এ অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন প্রয়োজন। আপনারা আপনাদের জায়গা থেকে এ সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। দ্রুত একটা নির্বাচন আয়োজন করার।’

সূত্রমতে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কূটনীতিকদের বলেন, ‘বিরোধী দলের নেতা-কর্মী সমর্থকদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। কারাবন্দী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। দেশের স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখতে এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে খালেদা জিয়ার মুক্তি অত্যন্ত জরুরি। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে থেকেই এ ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।’ ড. কামাল হোসেন এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের পাশাপাশি আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ড. মঈন খান বিভিন্ন পয়েন্টে কথা বলেন। রবার্ট মিলার ও অ্যালিসন ব্লেইক তাদের সবার কথা শোনেন। তবে কোনো মতামত জানাননি করেননি তারা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বৈঠকে অংশ নেওয়া গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘তারা (কূটনীতিকরা) শুধু জানতে চান। নিজে থেকে তারা কিছু বলেন না। আমরা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছি। সেখানে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিরোধী দলের নেতাকর্মীর ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনের বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এসব বিষয়ের ওপর ড. কামাল হোসেন ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিস্তারিত কথা বলেছেন।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট