চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ডেইরি শিল্প রক্ষায় আমদানি করা গুঁড়ো দুধে ৫১.৫ % শুল্কহার আরোপের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

৫ মে, ২০১৯ | ৩:৫১ অপরাহ্ণ

ডেইরি শিল্প বাংলাদেশের মানুষের জীবিকা ও ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি করছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এ শিল্পের যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, তাতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বাঁচা-মরার লড়াই করে খামারিরা। এমন পরিস্থিতি থাকলে সামনে ফার্ম বন্ধ হয়ে যাবে। তাই দেশিয় ডেইরি শিল্প রক্ষায় আমদানি করা গুঁড়ো দুধের উপর ২০১০ সালের মতো ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্কহার আরোপ করতে হবে।

রবিবার সকালে লালদিঘী মাঠে চিটাগাং ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশন আয়োজিত এক সমাবেশে খামারিরা এসব কথা বলেন।

এসোসিয়েশনের সভাপতি ও দৈনিক পূর্বকোণ সম্পাদক ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাঈম উদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি ওমর ফারুক, নাহার ডেইরি ফার্মের জিএম ড. মো. আব্দুল হাই।

গরুসহ সমাবেশে উপস্থিত খামারিরা। ছবি মিয়া আলতাফ

সমাবেশে গরুসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে খামারিরা উপস্থিত হন। এ সময় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ১৫ দফা দাবি পেশ করেন এসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আরেফিন দোভাষ। সমাবেশে বক্তরা বলেন, বাংলাদেশকে বলা হয় দুধে ভাতের দেশ। সে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে স্বাধীনতার পর থেকে দেশে অসংখ্য ডেইরি ফার্ম গড়ে ওঠেছে। যা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক পথে এগিয়ে নিতে সাযাহ্য করেছে। গত পাঁচ বছরে দুধের উৎপাদন ৩ গুণ থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু দেশে দিন দিন শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। তার সাথে গো-খাদ্য, ঔষধ, বিদ্যুৎসহ ইত্যাদির খরচ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। তারওপর দেশে ব্যপক হারে গুঁড়ো দুধের আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু দেশের উৎপাদিত দুধের দাম এক টাকাও বাড়েনি। আজ খামারিরা বাঁচা-মরার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তাই দেশীয় এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে দুধের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ডেইরি ফার্মের বিদ্যুৎ বিল কৃষি রেটে নির্ধারণ   করতে হবে। এছাড়া ডেইরি ফার্মে ৫% ঋণ সরবরাহ করার পাশাপাশি জেলা উপজেলায় পশু হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয়ে ল্যাবরেটরি করতে হবে। এতে করে খামারিরা কিছুটা হলেও উপকৃত হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী আরো বলেন, ডেইরি ফার্মের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আজ থেকে ২৬ বছর আগেও গরুসহ একত্রিত হয়েছিলেন চট্টগ্রামের খামারিরা। একইভাবে আজও  দাবি আদায়ের জন্য একই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন খামারিরা। যে ডেইরি ফার্ম মানুষের জীবিকা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, কোরবানির পশুর অভাব মিটায়, সে শিল্পের সকল কিছুর খরচ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে দুধের দাম বাড়েনি। এক্ষেত্রে বড় সংকট তৈরি করেছে আমদানিকৃত নিম্মমানের গুঁড়ো দুধ। বর্তমানে আমাদের টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া গো-খাদ্যের মুল্যবৃদ্ধি আমাদের ফার্ম  চালানোকে আরও অসম্ভব করে তুলেছে। এ পরিস্থিতিতে গো-খাদ্যের যৌক্তিক দাম ও প্রয়োজনে বিদেশ থেকে জরুরি ভিত্তিতে গো-খাদ্য আমদানির ব্যবস্থা গ্রহণ করলে খামারিরা নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পাবেন। আমরা সরকারের কাছে বলতে চাই, আমরা (গো- খামারিরা) বাঁচলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। তাই আমাদের এসব দাবি মেনে নিয়ে দেশের খামারিদের বাঁচার সুযোগ করে দিন।

সমাবেশ শেষে এক র‌্যালিসহ ১৫ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি নিয়ে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে যান এবং অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহার হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন নেতৃবৃন্দ।

এসময় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দকে বলেন, কিছুদিন আগে কোরবানীর পশু নিয়ে প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা হয়। সম্প্রতি ভারত থেকে পশু আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে আমাদের দেশে বিগত চার বছরে বহু ফার্ম গড়ে ওঠেছে। যারা কোরবানীর সময় প্রয়োজনীয় পশু সরবরাহ নিশ্চিত করেছে। তিনি আরও বলেন, কোরবানীর পশুর মতো দুধও আমাদের দেশের বিদ্যমান শিল্পের মাধ্যমে বিকশিত হলে বিদেশ থেকে গুঁড়ো দুধ আমদানীর প্রয়োজয়ন হবে না। দেশিয় শিল্পকে বিকাশের জন্য সরকার নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট