চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চমেক হাসপাতাল

বিদ্যুতবিহীন দুর্ভোগের ৮ ঘণ্টা

মোবাইলের আলো দিয়ে চিকিৎসা সেবা . সীমাহীন ভোগান্তি চিকিৎসক-রোগীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

৫ মে, ২০১৯ | ২:৫০ পূর্বাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রায় আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। যার কারণে চিকিৎসকদের সেবা দিতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। অনেকেই মোবাইলের আলো দিয়ে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
অন্যদিকে, সকাল থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালে ভর্তিরত রোগী ও স্বজনদেরও পড়তে হয়েছে চরম দুর্ভোগে। বিদ্যুৎ না থাকায় গরম সহ্য করতে না পেরে অনেকেই বাসা ও দোকান থেকে হাতপাখা নিয়ে এসে রোগীকে বাতাস করতে দেখা গেছে।
গতকাল শনিবার সকাল দশটা ৫৫ মিনিটের দিকে চমেকের মিজান হোস্টেল গেট এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে কয়েকটি গাছ ভেঙে সাতটি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ে। এরপর থেকে পুরো হাসপাতাল এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে গণপূর্ত ও পিডিবির কর্মীরা পুনঃস্থাপন শেষে রাত সাতটার দিকে পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘সকাল থেকে এমনিতেই বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিল। তারমধ্যে ১১টার দিকে ঝড়ে কয়েকটি গাছ বৈদ্যুতিক তারের ওপর ভেঙে পড়ে। যার কারণে সাতটি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে যায়। এতে বিদ্যুৎ বন্ধ থাকলেও জেনারেটর দিয়ে জরুরি বিভাগগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কিছুটা সমস্যা হলেও হাসপাতালের আইসিইউ, সিসিইউসহ গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাধান করা হয় বলেও জানান তিনি।’
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালের লিফট বন্ধ ছিল। যার কারণে রোগীদের সিঁড়ি বেয়েই ওপরে ওঠতে হয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ডগুলোতে বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে অতিষ্ঠ রোগীরা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বেশিরভাগ রোগীর স্বজনরা বাসা ও দোকান থেকে হাতপাখা কিনে রোগীকে বাতাস করতে দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে হাসপাতালের মেডিসিন ও শিশু ওয়ার্ডে।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে গত পাঁচদিন ধরে ভর্তি রয়েছে বাঁশবাড়ীয়া এলাকার বাসিন্দা নার্গিস আক্তার। তিনি পূর্বকোণকে বলেন,‘সকাল থেকেই এই ওয়ার্ডে বিদ্যুৎ নেই। তার ওপর অতিরিক্ত মানুষ। এতে করে অনেক গরমও। গরম সহ্য করতে না পেরে ভাইকে দিয়ে একটা হাতপাখা কিনে এনেছি। বাচ্চাও গরম সহ্য করতে পারছে না। তাই কিছুক্ষণ বসে তাকে বাতাস করি মাঝেমধ্যে বারান্দায় নিয়ে যাই।’
হাসপাতালের কয়েকটি ওয়ার্ডের নার্সদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ‘সকাল থেকেই বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল। জেনারেটরের মাধ্যমে শুধু কয়েকটি লাইট চলে। পুরো ওয়ার্ডেই প্রায় অন্ধকার। তাই মাঝেমধ্যে মোবাইল ফোনের আলো জ¦ালিয়ে রোগীদের সেবা দেয়া হয়।’
জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী হাসান ইবনে কামাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘সকাল দশটা ৫৫ মিনিটে ঝড়ে কয়েকটি গাছ বৈদ্যুতিক খুঁটিতে পড়ে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়। পরে আমাদের কর্মীরা গিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করে নতুন আরেকটি বিদ্যুতের তার সংযোজন করে। তবে পিডিবির লাইন বিচ্ছিন্ন থাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়নি। সরাদিন আমাদের একহাজার কেভির তিনটি জেনারেটর দিয়ে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এসময় হাসপাতালের সব লাইট ও চারটি লিফ্ট চালু ছিল। পিডিবির কর্মীরা তাদের লাইন মেরামত করার পর সন্ধ্যা সাতটার দিকে পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট