চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভেজাল মসলার কারবারি বাড়ে কোরবানি এলেই

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৬ জুন, ২০২৩ | ১২:১২ অপরাহ্ণ

ঈদুল আজহা আসলে সক্রিয় হয়ে উঠে ভেজাল মসলা কারবারিরা। কাপড়ে রং ও ধান-চালের তুষ মিশিয়ে তৈরি করা হয় এ গুঁড়ো মসলা। যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে জানান পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা। গতকাল নগরীর বাকলিয়ার মিয়াখান নগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ কাপড়ের রং ও ধান-চালের তুষ উদ্ধার করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নিরাপদ খাদ্য অফিসার মোহাম্মদ ফারহান ইসলাম বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিপুল পরিমাণ কাপড়ের রং ও ধান-চালের তুষ মজুত করেছে। ধান ও চালের তুষ মিলিং করে তা পাউডারে পরিণত করা হয়। নিম্নমানের মরিচ, হলুদের সঙ্গে ধান-চালের তুষের সঙ্গে কাপড়ের রং মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করা হয়। ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক এসব অপদ্রব্য মিশ্রিত করা হয়। এছাড়াও অস্বাস্থ্যকর-নোংরা পরিবেশে প্রক্রিয়াজাত করা হয় এসব মসলা। ঈদুল আজহায় মসলার চাহিদা বেশি থাকায় এসময় ভেজাল মসলার কারবারও বেড়ে যায়। নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর জানায়, অভিযান চালিয়ে অননুমোদিত ৩৫০ কেজি লাল রং (৭ বস্তা, প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি করে), হলুদ রং ২০০ কেজি (৪ বস্তা) এবং ধান-চালের তুষ-কুড়ো ২৫০ কেজি (৫ বস্তা) উদ্ধার করা হয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সামনে এসব পণ্য ধ্বংস করা হয়।

 

নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারহান ইসলাম বলেন, ‘অভিযান চলাকালে কৌশলে মালিক ও কর্মচারীরা পালিয়ে যায়। আগামী সপ্তাহে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক এ ধরনের খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

 

র‌্যাব গত ২৩ মে বাকলিয়া থানার চাক্তাই এলাকায় ভেজাল গুঁড়ো মসলা তৈরির কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে। এসময় জসিমের ক্রাসিং মিলে অভিযানে ক্ষতিকারক রং মেশানো প্রায় ৬শ কেজি হলুদ, মরিচ ও ধনিয়ার গুঁড়ো এবং ১২ কেজি রং ও রাসায়নিক পদার্থ উদ্ধার করা হয়। ভেজাল ও রং মেশানো গুঁড়ো মসলা তৈরির অপরাধে মিল ঘর মালিক জসিম উদ্দিনসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার জানান, আটককৃতরা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে মসলাসহ মরিচের গুঁড়োর সঙ্গে ক্ষতিকারক রং ও রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে ভেজাল মসলা তৈরি এবং বিক্রি করে আসছিল। পাইকারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে নগর ও জেলায় বিক্রি করে আসছে এসব মসলা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ ধরনের তথ্য স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তারকৃতরা। কাপড়ের রং এবং ধান-চালের তুষ মিশ্রনে তৈরি করা এসব ভেজাল গুঁড়ো খোলা ও প্যাকেটজাত করে বাজারে নিবির্ঘ্নে বিক্রি করা হচ্ছে। কাপড়ের রং ও তুষ মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক বলে জানান পুষ্টিবিদেরা।

 

পুষ্টিবিদ হাসিনা আক্তার লিপি পূর্বকোণকে বলেন, ‘কাপড়ের রঙে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা মানুষের লিভার, কিডনি রোগ সৃষ্টি করে এবং শরীরে ক্যান্সার বাসা বাঁধে।’

 

ধান-চালের তুষ গরু-ছাগলের খাবার উল্লেখ করে পুষ্টি বিশেষজ্ঞ হাসিনা আক্তার বলেন, ‘মানুষ তা খেলে হজম করতে পারবে না। হজম প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হলে মানুষের পাকস্থলী ও কিডনি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়।’

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট