চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় চট্টগ্রামের সারজানা

রায়হান উদ্দিন, চবি

৯ জুন, ২০২৩ | ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ‘কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগ থেকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন চট্টগ্রামের মেয়ে সারজানা আক্তার লিমানা। তিনি সীতাকুণ্ড সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।

সারজানা নৈর্ব্যক্তিক, লিখিত এবং মাধ্যমিক ও মাধ্যমিকের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে মোট ১২০ নম্বরের পরীক্ষায় পেয়েছেন ৮৪ দশমিক ৭৫ নম্বর। তাঁর ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

সারজানা এক কৃষক পরিবারের সন্তান। কৃষক বাবাসহ পরিবারের সবার মুখ উজ্জ্বল করেছেন তিনি। ছোটবেলা থেকে সারজানার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। নিজের চেষ্টা, পরিবারের সদস্য এবং শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় অদম্য মেধাবী এ শিক্ষার্থী নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।

কোচিং করেছেন প্যাসিফিক জিন্স ফাউন্ডেশন পরিবার থেকে পরিচালিত কোচিং সেন্টারে। ফাউন্ডেশনটি এই বছর সীতাকুণ্ডের অস্বচ্ছল ও মেধাবী প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে কোচিং করিয়েছেন।

সারজানা সীতাকুণ্ড পৌরসভার দক্ষিণ মহাদেবপুরের চৌধুরী পাড়ার এক অতি সাধারণ পরিবারের সন্তান। বাবা জহরুল আলম পেশায় একজন সাধারণ কৃষক। সারজানার ছোটবেলায় মারা যান মা রুমা আক্তার। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সারজানা ছিলেন বড়। ছোটবেলা থেকেই তিনি অদম্য মেধাবী ছিলেন।

সীতাকুণ্ড বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ এবং ২০২২ সালে সীতাকুণ্ড সরকারি মহিলা কলেজের বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এছাড়া সারজানা শিক্ষাজীবনে বৃত্তিসহ বিভিন্ন মেধা নির্বাচনী পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে বাণিজ্য বিভাগ থেকে দ্বিতীয়, ঢাবির ‘গ’ ইউনিটে ৬১০ তম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ইউনিট থেকে ৭৮তম হয়েছেন।

জানা গেছে, সারজানার ১২ বছর বয়সে মা রুমা আক্তার মারা যান। ছোটবেলা থেকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আজকের এই জায়গায় আসতে হয়েছে তাকে। সারজানা আক্তার লিমানা জানান, তাঁর এই সাফল্যের পেছনে সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত ছিল। রুটিনমাফিক তিনি প্রতিটি বিষয়ের ওপর মনোযোগী ছিলেন। এছাড়া ছিল মৃত মা ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা।

সারজানা বলেন, মারা যাওয়ার আগে মা বলেছিলেন আমার মেয়ে পড়াশোনা করবে। প্রয়োজনে আমার রক্ত বিক্রি করে হলেও পড়াশোনা করাবো। হয়তো মাকে বেশিদিন পাইনি। কিন্তু মায়ের এই কথাটা আমার কাছে ছিল চ্যালেঞ্জ। সেখান থেকে আমি অনুপ্রেরণা পেয়েছি। পড়াশোনা করেছি। এরপর থেকে ক্লাস ফাইভ থেকে সবগুলো পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া এটা আরেকটা চ্যালেঞ্জ ছিল। বাবা কৃষি কাজ করতেন। প্রাইভেট পড়া সম্ভব হতো না। তবে পড়াশোনাটা থামেনি প্যাসিফিক জিন্স ফাউন্ডেশন পরিবারের কারণে। আমি আজীবন কৃতজ্ঞ এই পরিবারের প্রতি। অষ্টম শ্রেণি থেকে ফাউন্ডেশনটি আমার পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

মেধাবী সারজানা বলেন, আমার স্কুল এবং কলেজের সব শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে হিমেল শর্মা রানা এবং রবিউল হাসান, এই দুই শিক্ষক আমাকে সবসময় অনুপ্রেরণা যোগাতেন। বিনামূল্যে আমাকে প্রাইভেট পড়িয়েছেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোচিং করেছি প্যাসিফিক জিন্স ফাউন্ডেশনের পরিচালিত কোচিং থেকে। সেখানে কোচিং এর কো-অর্ডিনেটর রাকিব ভাই অনেক পরিশ্রম করেছেন। একজন গার্ডিয়ান হিসেবে আমাদের পাশে ছিলেন তিনি সবসময়।

নবীনদের পড়াশোনার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করতাম। পরিশ্রম করেছি। আর সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করেছি। মহান আল্লাহ আমার যাত্রাকে সহজ করে দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে সারজানা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো। আইন, ইংরেজি ও অর্থনীতিতে এই তিনটি সাবজেক্টের একটিকে এডমিশন নিবো। সকলের কাছে দোয়া চাই। যাতে আমার পরবর্তী জার্নিটা সহজ হয়। যেন পড়াশোনা শেষে নিজেকে দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত রাখতে পারি।

তার বাবা জহরুল আলম ব‌লেন, মেয়ের সাফল্যে খুব আনন্দ হচ্ছে। আল্লাহ আমাদের পুরস্কৃত করেছেন। আমাদের মেয়ে যাতে মানুষের মত মানুষ হয়ে জনগণের সেবা করতে পারে, সে জন্য সবার দোয়া কামনা করছি।

প্যাসিফিক জিন্স ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত কোচিং সেন্টার কো-অর্ডিনেটর এমরান হোসেন রাকিব বলেন, সারজানা কোচিংয়ের সবচেয়ে পরিশ্রমী এবং অভিডিয়েন্ট একজন স্টুডেন্ট ছিল। কোচিংয়ের মডেল টেস্ট পরীক্ষায় সবসময় টপ রেজাল্ট করতো। সে এই ফলাফলটা ডিজার্ভ করে।

এর আগে বুধবার (৭ জুন) বেলা ১টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান’ ইউনিটের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে পাস করেছেন মাত্র ১১ হাজার ১৬৯ জন শিক্ষার্থী। যা মোট শিক্ষার্থীর ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। বাকি ৯০ দশমিক ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থীই ফেল করেছেন।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট