চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

দেশীয় ওয়ালটন ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে না শোরুমগুলোতে, চায়না ফ্যানের দামও দ্বিগুণ

চার্জার ফ্যান, আইপিএস কেনায় ধুম

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬ জুন, ২০২৩ | ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীর রাইফেলস ক্লাব সংলগ্ন চয়েস মার্কেটের দোকান কেজিএন লাইটিং। গত বৃহস্পতিবার (১ মে) এক ক্রেতা এই দোকান থেকে একটি চার্জার ফ্যান কেনার জন্য ৫ হাজার টাকা দরদাম করেন। অগ্রিম হিসেবে ২ হাজার টাকা পরিশোধও করেন। বাকি ৩ হাজার টাকা রবি-সোমবার পরিশোধ করে ফ্যান নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু গতকাল (সোমবার) সেই দোকানে এলে বিক্রেতা ফ্যান ৫ হাজার টাকায় দিতে অস্বীকৃতি জানান। কারণ ওই ফ্যানের দাম এখন ৭ হাজার টাকা। এভাবে দিনের ব্যবধানে বেড়ে যাচ্ছে চার্জার ফ্যানের দাম। চরম লোডশেডিংয়ের কারণে অনেকেরই বাসার আইপিএস চার্জ হতে পারছে না। তাই চার্জার ফ্যানের মাধ্যমে কিছুটা রেহাই পাওয়ার আশায় দোকানে এসে নিরাশ হচ্ছেন অনেকেই।

 

গতকাল (সোমবার) নগরীর তিন পুলের মাথা, রাইফেল ক্লাব, রিয়াজউদ্দিন বাজার ও সিডিএ মার্কেটের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি চার্জার ফ্যানের ব্র্যান্ড ভেদে দুই থেকে চার হাজার টাকা, ফ্যানের ব্যাটারিতে ৪শ থেকে ৫শ টাকা। অন্যদিকে আইপিএসে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকাও বেড়ে গেছে।

 

চায়নার তৈরি চার্জার ফ্যান কেনেডি ও ফাইন্ডার বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকায়। যা একমাস আগেও ছিল সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। দেশিয় ব্র্যান্ড ওয়ালটনের তৈরি টেবিল ফ্যানের দাম ৫ হাজার ৭শ টাকা। যদিও ওই ফ্যান কোন শোরুমেই পাওয়া যাচ্ছে না।

 

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সম্প্রতি ডলারের দাম বাড়তি থাকায় আমদানিও কমে গেছে। ফলে জোগানের তুলনায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

 

মাসখানেক আগে তিন হাজার ভিএ আইপিএস ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ৩৯ হাজার থেকে ৩৯ হাজার ৯শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লুমিনাস, রহিম আফ্রোজ, এক্সট্রিম ব্র্যান্ডের আইপিএসের চাহিদা বেশি বলে জানান চৌমুহনীর কাজি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আলী আকবর। তিনি বলেন, লোড শেডিংয়ের কারণে আইপিএসের চাহিদা বেড়ে গেছে। ফলে আইপিএস মেশিন ও ব্যাটারির দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া লোকাল বানানো টেকনিশিয়ানরাও ব্যস্ত আইপিএস বানানোর কাজে।

 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, অধিকাংশ চার্জার লাইট, ফ্যান ও ব্যাটারি জাতীয় পণ্যগুলো চায়না থেকে আমদানি করা হয়। তবে পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার ফ্যানের চাহিদাও কম নয়। সারাবছরের মধ্যে শুধুমাত্র গ্রীষ্মকালে বেচাবিক্রি বেশি হয়। বছরের অন্যান্য সময় চার ভাগের দুই ভাগও ব্যবসা হয় না। তবে হঠাৎ লোডশেডিংয়ের মাত্রা বাড়ায় এসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে। তাই চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় দামটাও তুলনামূলক বেড়েছে।

 

নগরীর তিন পুলের মাথা এলাকার সিদ্দিক ইলেকট্রনিক্সের স্বত্বাধিকারী মো. আবু সিদ্দিক বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে চার্জার লাইট, ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে। ঢাকা থেকে আমরা পণ্য কিনে নিয়ে আসি। ঢাকাতেও এসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে। তাই পাইকাররা আমাদের কাছে বাড়তি দরে পণ্য বিক্রি করছেন।

 

রাইফেল ক্লাবে হোসেন ইলেকট্রনিক্সের মালিক মো. বেলাল বলেন, গতমাসে আমরা প্রতিদিন দু’চারটার বেশি ফ্যান বিক্রি করতে পারতাম না। গতকাল আর আজ মিলে ১১টা ফ্যান বিক্রি করেছি।

 

নগরীর লালখান বাজার এলাকার বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, আজ ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এক ঘণ্টাও ভালো মত বিদ্যুৎ পাইনি। বাসায় আগে যে চার্জার ফ্যানটা ছিল তা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আমি আজ নতুন একটা চার্জার ফ্যান কিনতে এলাম। কিন্তু দাম শুনে পুরাই অবাক হয়ে গেছি। আড়াই হাজার টাকার চার্জার ফ্যানের দাম চাওয়া হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। তাই না কিনেই বাসায় চলে যাচ্ছি।

 

রাশেদুল করিম নামের চকবাজারের এক বাসিন্দা বলেন, বাসায় আমার বৃদ্ধ মা ও চার বছরের ছোট্ট বাচ্চা আছে। যেভাবে সারাদিনে তিন চার দফা করে লোডশেডিং হচ্ছে এতে সবার কষ্ট হয়। বিশেষ করে আমার বাচ্চা গরম সহ্য করতে পারে না। তাই আইপিএস কিনতে এসেছি। বছরখানেক আগে আইপিএস কেনার চিন্তা করেছিলাম। তখন ৩২ হাজার টাকা দাম চাওয়ায় কিনিনি। আজ কিনতে এসে দেখি সাড়ে ৪২ হাজার টাকা দাম চাচ্ছেন বিক্রেতা। ব্যবসায়ীরা চাহিদাকে পুঁজি করে দাম বাড়িয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিচ্ছেন।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট