ঘামে শার্ট ভিজে একাকার রিকশাচালক নেজাম মিয়ার। তবুও ভাড়া নিয়ে ছুটছেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। মুরাদপুর থেকে ভাড়া নিয়ে রাহাত্তারপুল এলাকায় এসেই ভাড়া বুঝে নিয়ে ফ্যানের বাতাসে ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য ঢুকেন পাশের একটি নাস্তার দোকানে। উদ্দেশ্য ছিল গরম থেকে মুক্তি ও নাস্তা করা। কিন্তু দোকানে ঢুকে দেখেন বিদ্যুৎ নেই। ভ্যাপসা গরমে ক্লান্ত শরীরে আশাহত হয়ে কোমরের গামছা দিয়ে মুখ ও শরীরের ঘাম মুছেন তিনি। শুধু তিনিই নয় এ গরমে দিশেহারা বাইরে কাজ করা রিকশাচালকসহ সব শ্রমজীবী মানুষ, বাস ড্রাইভার, হেলপার, হকাররা।
গরমের এমন পরিস্থিতিতে প্রচণ্ড মাত্রায় চলছে লোডশেডিং। গরম ও লোডশেডিং দুই যেন পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। যে কারণে ঘরে বাইরের এমন গরমে দিশেহারা শহরবাসী। এদিকে গতকাল নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় ১০ বারের উপরে বিদ্যুৎ চলে যায়। একবার বিদ্যুৎ গেলে দু-তিন ঘণ্টার মধ্যেও আসেনি।
কারণ জানতে চাইলে পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রামে যে পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা সেই পরিমাণ বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই লোডশেডিং হচ্ছে।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানায়, অস্বস্তিকর ভ্যাপসা গরম থাকতে পারে বর্ষার আগ পর্যন্ত। মূলত গরম পড়ছে ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে তাপমাত্রার পরিমাণ যতটা, তার চেয়ে অনেক বেশি তাপ অনুভূত হচ্ছে মানুষের কাছে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ নেই। মৌসুমি বায়ুর পরিবর্তন হলে গরম কমবে।
নতুন ব্রিজ থেকে ছেড়ে আসা চার নম্বর গাড়ির ড্রাইভার মফিজুর রহমান বলেন, গরমে গাড়ি চালানো খুব কঠিন। একদিকে বাইরের গরম, অন্যদিকে ইঞ্জিনের গরমে সিদ্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। এভাবে গরম পড়লে অসুস্থ হতে দেরি নেই। ভাবছি তাড়াতাড়ি গাড়ি পার্কিং করে ফেলবো। চকবাজারে কথা হয় ভ্যাসমান সবজি বিক্রেতা ফারবেজের সাথে। তিনি বলেন, সকাল ১০টার পর থেকেই গরমের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে সবজি বিক্রি করা কঠিন হয়ে যায়। কোথাও ছায়া নেই। পাশের দোকানগুলোতে গিয়ে যে বসবো তারও কোনো উপায় নেই। কারণ বিদ্যুৎ থাকে না। মানুষও প্রয়োজন ছাড়া বাইরে আসছে না। যেকারণে বেচাবিক্রিও কম হচ্ছে।
বিবি রহিমা নামের এক গৃহিণী বলেন, গরমে ঘরে টেকা যাচ্চে না। রান্না করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ছোট বাচ্চা আছে, সে খুব কান্না করে। বিদ্যুৎ গেলে আসার নাম নেই। কবে যে বৃষ্টি হবে, সেই অপেক্ষায় আছি।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, মৌসুমি বায়ু এখনও বাংলাদেশ উপকূল থেকে অনেক দূরে আছে। টেকনাফের উপকূলে আসতে পারে ৭ বা ৮ জুনের দিকে। এরপর চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেটের দিকে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। এর ধারাবাহিকতায় আস্তে আস্তে দেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে এই বৃষ্টি। তিনি বলেন, মৌসুমি বায়ু আসার আগের সময়ে আবহাওয়া এমনই থাকে। বাতাসে আদ্রতা বেশি হওয়ায় প্রকৃত তাপমাত্রা যা, মানুষ তারচেয়ে বেশি অনুভব করছে। ঘাম হচ্ছে অতিরিক্ত। ফলে ভোগান্তিও বেশি। এই তাপপ্রবাহ আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পূর্বকোণ/পিআর