চট্টগ্রাম সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

উন্নয়ন সহায়তার নামে ‘উপহাস’

ইফতেখারুল ইসলাম

৩১ মে, ২০২৩ | ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ

‘উন্নয়ন সহায়তা’ খাতে চলতি অর্থবছরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) পেয়েছে মাত্র সাড়ে ১৭ কোটি টাকা। গত ১৬ মে চতুর্থ কিস্তির সাড়ে ৭ কোটি টাকা বরাদ্দের চিঠি পায় চসিক। এর আগে তিন কিস্তিতে সংস্থাটি ১০ কোটি টাকা পায়। অথচ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন মিলে চতুর্থ কিস্তিতেই পেয়েছে প্রায় সাড়ে ২৬ কোটি টাকা। তার আগে আরো ৩ কিস্তি অর্থ বরাদ্দ পায় ঢাকা।

 

সচেতন মহলের মতে এটা চট্টগ্রামের সাথে উপহাস ছাড়া আর কিছুই নয়। দ্রুত প্রসার ঘটা চট্টগ্রাম শহরের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ না দিলে একসময় নানা সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে।

 

চসিক সূত্র জানায়, বর্তমানে চসিকের কাছে ঠিকাদাররা বিল পাবেন ৮২৩ কোটি টাকা। নগরীর বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ ঠিকাদারদের মাধ্যমে সম্পন্ন করে এই বিশাল পরিমাণ বিল দিতে পারছে না সংস্থাটি। মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরিত বরাদ্দপত্রে যে চারটি শর্ত দেয়া হয় তারমধ্যে সর্বশেষ শর্ত হল অব্যবহৃত অর্থ ৩০ জুনের মধ্যে সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে বলেছে। জানতে চাইলে চসিকের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, যে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে তা ঠিকাদারদের মাঝে ভাগ করে দেয়া হবে। তবে যে পরিমাণ দেনা তার তুলনায় এটা খুবই সামান্য বলে তিনি উল্লেখ করেন।

 

জানতে চাইলে আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি নগরবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, ঢাকায় যারা দায়িত্ব পালন করেন তারা ঢাকার বাইরে বাংলাদেশ আছে কিনা এটা মাঝেমধ্যে উপলব্ধিই করেন না। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামসহ সারাদেশকে মফস্বফ মনে করেন। আর ঢাকাই একমাত্র জায়গা যেখানে ¯েœা-পাউডার যতই মাখুক, যত ধরনের কসমেটিক আছে তা লাগিয়ে সুন্দর করার একটা মনোভাব তাদের মধ্যে আছে। অথচ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন হচ্ছে একটি বর্ধিষ্ণু নগর। পরিকল্পনার চেয়ে এধরনের নগর প্রসারের গতি বেশি। তাই এধরনের নগরের যতœ বেশি নিতে হয়। যতœ যথাসময়ে নিতে না পারলে পরে সমস্যায় পড়ে যায়। এই উপলব্ধিটা তাদের মাঝে নেই। বন্দর, পর্যটন, শিল্পসহ নানা বিষয়ে চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। বহির্বিশে^র সাথেও যোগাযোগের পথ কিন্তু চট্টগ্রাম। লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম চীনসহ বিশাল একটা এলাকার সাথে চট্টগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশের যোগাযোগের সুযোগ রয়েছে। এই ভাবনাটা না থাকার কারণেই চট্টগ্রাম অবহেলিত হচ্ছে। এটা শুধুমাত্র সিটি কর্পোরেশনের বরাদ্দের ক্ষেত্রে অবহেলা করা হচ্ছে তা নয়। মন্ত্রণালয়গুলোও তাদের সিংহভাগ বরাদ্দ ঢাকায় ব্যয় করে। বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের দেনা হাজার কোটি টাকার উপরে। তাই এডিপি ছাড়া অন্য কোন প্রকল্পে যখন কাজ করাতে যায় তখন ঠিকাদার পায় না। নালা-নর্দমা পরিষ্কার করার ক্ষমতা সিটি কর্পোরেশনের নেই। একসময় অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতন দিতে পারবে না।

 

একদিকে আয় বাড়ানোর পথ বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্দর থেকে অক্ট্রয় পাচ্ছে না। অথচ বন্দরের গাড়িগুলো সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা নষ্ট করে। অর্থাৎ সিটি কর্পোরেশনকে সারাদেশের জন্যই রাস্তা নির্মাণ করতে হয়। কিন্তু বন্দর থেকে সেই খাতে কোন ট্যাক্স নিতে পারছে না। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের জন্য বিশেষ উন্নয়ন বরাদ্দ দেয়া উচিত।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট