চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

খাঁ খাঁ করছে ভ-পীর ‘নেজাম মামা’র খানকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ আগস্ট, ২০১৯ | ২:১৭ পূর্বাহ্ণ

মানুষের আনাগোনা ছিল সপ্তাহের ছয়দিন। আর বৃহস্পতিবার বেশ জমে উঠতো নেজামিয়া খানকা। লাল-নীল বাতির আলোয় জিকির শোনা যেত মধ্যরাতেও। পাশের মসজিদে মুসল্লিদের নামাজের ব্যবস্থা ছিল। রয়েছে শিশুদের একটি পাঠশালা। সকালে বেশ কিছু শিশুকে পাঠদানের জন্য ছিল দুইজন শিক্ষক। ছিল একজন ঈমামও। এখন এসবের কিছুই নেই। পুরো খানকাজুড়ে সুনসান নীরবতা, খাঁ খাঁ করছে ‘নেজাম মামা’র রঙিন মসনদ। আশপাশে মানুষের মুখে টু-শব্দও নেই। গতকাল বিকালে নগরীর আরেফিন নগরের নেজামিয়া খানায় সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে এভাবেই বলছিলেন এক ভক্ত। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ৩২ বছর বয়সী হোসনে আরা বেগম। একসময় নীরবতা ভেঙ্গে বললেন, বহু অজানা কথা। অনেক ক্ষোভের কথাও বললেন অকপটে

পরিচয় জেনে হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠে ওই নারী বলেন, খানকার বয়স প্রায় ঊনিশ মাস। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই টুকটাক বিতর্কিত কর্মকা- চলছিল। নারীঘটিত বিষয়ও ছিল। আমরা শুনেও না শোনার মতো থাকতাম। যখন দেখলাম আমার নিজের মেয়ের এই সর্বনাশ। তখন আইনের আশ্রয় নিলাম। আমি এই জঘন্য কাজের ন্যায় বিচার চাই। নেজামকে দেখে যেন অন্যরাও সাবধান হয়, আর কোন নারী যেন এসব ভ- পীরের লালসার শিকার না হয়।’ আলাপকালে কামাল হোসেন বলেন-‘মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন (৪২) হাটহাজারী উপজেলার ফতেয়াবাদ এলাকার সাহাবুদ্দীন চৌধুরীর ছেলে। মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়াতেন। হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ.) মাজারেই বেশি দেখা যেত তাকে। পরে সুযোগ বুঝে নিজেই গড়ে তোলেন খানকা। সমতল থেকে অন্তত ষাট ফুট উঁচুতে পাহাড় চূড়ায় আস্তানা গেঁড়ে বসেন তিনি। নেজামিয়া খানকায় মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে। ভবঘুরে নেজাম রাতারাতিই বনে যান পীর। বহু মানুষের ভীরে নেজাম উদ্দিন থেকে হয়ে যান শাহসূফী মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন প্রকাশ নেজাম মামা। ওই ভুক্তভোগী বলেন, ধর্ষণের ঘটনা ঢাকতে আমাদের নামে খানকার দানবাক্স ভেঙ্গে ৭ লাখ টাকা লুটের মামলা দিয়েছে নেজামের এক স্ত্রী। অথচ এমন কোন ঘটনাই ঘটেনি। ওই দেখেন দানবাক্স পড়ে আছে। বলুন তো ৭ লাখ টাকা থাকার মতো দানবাক্স কিনা এটা? প্রশ্ন রাখেন ওই ভুক্তভোগী। কামালের দাবি খানকায় সারারাত মানুষ থাকে। পুলিশের সোর্স থেকে শুরু করে নানান ধরনের সন্ত্রাসী মসজিদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। এখন আর কেউ নেই। গত ৯ আগস্ট এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় তার মায়ের ১৮ আগস্ট দায়ের করা মামলায় ‘নেজাম মামা’ জেল হাজতে থাকায় খানকা দেখাশোনা করছেন আবদুস সাত্তার। মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ান আমীর আলী। তারা বলেন, ওইদিনই গা ঢাকা দেন

মসজিদের ঈমাম জামাল হুজুর। ভক্তদের আনাগোনাও কমে গেছে। বাবুর্চিও ঠিক মত কাজ করেনা। সকালে শিশুদের পড়নোর জন্য যে দুজন শিক্ষক ছিল তার মধ্যে এক নারী শিক্ষক বহু আগেই চলে গেছেন। এখন আর শিক্ষকও নেই, শিক্ষার্থীও আসে না।’ স্থানীয়রা জানান, নেজামের বাবার প্রচুর সম্পত্তি। বাবা মারা যাওয়ার পর সে সম্পত্তির মালিক হন নেজাম। পরে নেজাম কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে বায়েজিদ বোস্তামি থানার আরেফিন নগর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কলোনীতে জায়গা কেনেন। সেখানেই খানকা প্রতিষ্ঠা করেন। ধর্ষণের বিষটি সাজানো। মূলত জায়গা আত্মসাতের নীলনকশা বলেও মন্তব্য করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বহু ভক্ত।

আল আমিন এবং হৃদয় নামের দুই যুবক বলেন-‘টাকার বিনিময়ে নিজের কিছু অনুসারী নিয়োগ দেন ‘ভ- পীর’ নেজাম উদ্দিন। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষকে ঝাঁড়ফুঁক ও তাবিজ দিতেন। খানকা, মসজিদ কিংবা মাদ্রাসা শিক্ষার আড়ালে নানান অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন নেজাম। এজন্য স্থানীয় প্রভাবশালীদের দিতেন মাসোহারা। স্থানীয় এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় ১৮ আগস্ট ওই কিশোরীর মা মামলা দায়ের করলে নেজাম উদ্দিনকে গ্রেফতার করে বায়েজিদ থানা পুলিশ। এর পর থেকে কারাগারে রয়েছে নেজাম।

এ প্রসঙ্গে বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খোন্দকার বলেন, ভুয়া পীর নেজাম উদ্দিন আরেফিন নগর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কলোনীতে খানকা খুলে মানুষকে ঝাঁড়ফুক করতেন। মানুষকে তাবিজ-কবজ দিতেন। তার কাছে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসতেন। গত কয়েকদিন আগে নেজাম উদ্দিনের খানকায় মহেশখালী থেকে একজন মহিলা আসেন। ওই মহিলা ভয় পাচ্ছেন এমনটা জানিয়ে সেদিন রাতে ওই মহিলার সঙ্গে ঘুমানোর জন্য ওই কিশোরীকে তার খানকায় ডেকে নেয় নেজাম উদ্দিন। পরে রাতে অন্য একটি রুমে নিয়ে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে। এ কিশোরীর মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে পুলিশ তাকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট