চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সিত্রাংয়ের ভুল শোধরাতে জাল-নৌকা সরিয়ে নিচ্ছে জেলেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ মে, ২০২৩ | ১২:০২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীর আউটার রিং রোডের পতেঙ্গা ও নির্মাণাধীন বে-টার্মিনালের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত আকমল আলী রোড জেলে পাড়া। গত বছর অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল পুরো জেলে পল্লী। সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছিল এখানকার দুই শত জেলে পরিবার। ছয় মাস যেতে না যেতেই আবারও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ‘মোখা’র চোখ রাঙানি। ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানতে পারে এমন খবরে যেন অসহায় হয়ে পড়েছেন জেলে পাড়ার এসব বাসিন্দারা।

নগরীর পতেঙ্গা থেকে ফৌজদার হাট পর্যন্ত আউটার রিং রোড ও টোল রোডের পশ্চিম পাশে সাগর ঘেঁষে গড়ে উঠা একমাত্র বসতি এই জেলে পাড়া। সিত্রাংয়ের সেই তাণ্ডবের কথা এখনও ভুলতে পারেননি তারা। এরমধ্যে যেন আবার নতুন বিপদ। গতকাল (শুক্রবার) পুরো জেলে পাড়া ঘুরে দেখা গেছে, উপকূল থেকে নিজেদের জাল সরিয়ে নিতে ব্যস্ত এখানকার জেলেরা। সমুদ্র উপকূল থেকে জাল এনে জড়ো করা হচ্ছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ কাঁধে নিয়ে আউটার রিং রোডের উপরে জড়ো করছেন। কেউবা ভ্যান বা মিনি ট্রাক বোঝাই করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয় জেলে সুব্রত জলদাস ট্রাক বোঝাই করে নিরাপদ স্থানে জাল সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, সিত্রাংয়ে দশলক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছিল। দাদন নিয়ে আবারও সাগরে নেমেছিলাম। আবারও ঘুর্ণিঝড় হলে পথে বসতে হবে। তাই জালগুলো নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছি।

এদিকে সাগর থেকে নৌকাগুলো টেনে এনে উপকূলে গাছের সাথে বেঁধে রাখার কাজে ব্যস্ত দেখা দেছে বেশ কিছু জেলেকে। তাদের একজন সাগর জলদাশ বলেন, বড় জলোচ্ছ্বাস হলে এভাবেও নৌকাগুলো বাঁচানো সম্ভব হবে না। পাশাপাশি কোন খাল না থাকায় নৌকাগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে পারছি না।’ এখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ গত সিত্রাংয়ের পর ক্ষতিগ্রস্ত জেলেরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন সাহায্য-সহযোগিতা পাননি। তারা বলেন, বেঁচে থাকতে হলে নৌকা ও জাল লাগবেই। আর তাই এগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। গতবার সিত্রাংয়ে ঘরবাড়ি সব হারিয়েছিলেন রুমকি দাশ। এবার নতুন ঘর তুলেছেন ঠিকই, এখনও পুরোপুরি গুছিয়ে উঠতে পারেননি। আবারও ঘুর্ণিঝড় আঘাত হানলে কি করবেন তা নিয়ে এখন থেকে দুঃশ্চিন্তায় তিনি। তবে এ মুহূর্তে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে রাজি নন তিনি। বলেন, ‘আগে ঘূর্ণিঝড় আসুক তারপর দেখা যাবে।’

গতকাল (শুক্রবার) সকাল থেকে এ এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছে কোস্টগার্ড। বিকেলে জেলা প্রশাসনের একটি দল এখানাকার অধিবাসীদের নিরাপদে সরিয়ে যেতে মাইকিং করেছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের আগে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া নিয়ে কোন ভাবনা দেখা যায়নি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সতর্কতা সংকেত বাড়লে তারা আশ্রয় কেন্দ্রে যাবেন। এর আগে ঘর-বাড়ি ফেলে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চান না। জেলে পাড়ার বাসিন্দা রুপম জলদাস বলেন, এখন চার নম্বর সংকেত চলছে। সতর্কতা সংকেত বাড়লে পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাব। এখন বাসা-বাড়ি ফেলে কই যাব।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন বলেন, ‘আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে জেলা প্রশাসন ও চসিকের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। আমরা আকমল আলী রোডে জেলেদের সাথে কথা বলেছি। অপেক্ষায় আছি, এরপরও যদি আশ্রয় কেন্দ্রে না যায়। তাহলে প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে।’ এখানকার বাসিন্দাদের জন্য রিং রোডের পূর্বপাশে আলী সুকানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তার পার্শবর্তী একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

পূর্বকোণ/এ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট