চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ছিনতাই ঘটনার তদন্তে নেমে মোটর সাইকেল চোর চক্র ধরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

৭ মে, ২০২৩ | ১১:৪২ অপরাহ্ণ

নগরীতে রাইড শেয়ারের একটি মোটর সাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্তে নেমে পুলিশ ১০ জনের একটি সংঘদ্ধ চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, একই চক্রে দু’জন দলনেতা আছে। একজন ‘নেশা ও পেশায়’ টিকটকার এবং পেশাদার মোটর সাইকেল চোর। আরেকজনের নগরজুড়ে ইজিবাইক ও মোটর সাইকেল চুরি-ছিনতাইয়ের নেটওয়ার্ক আছে। তারা নগরী থেকে যাত্রীবেশে বাইকে উঠে সীতাকুণ্ডে নিয়ে সেটি ছিনতাই করে।

নগরীর আকবর শাহ থানা পুলিশ চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় রবিবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে চক্রের দুই নেতাসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাইক ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্তে নেমেই একই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যারা এখন কারাগারে আছে।

গ্রেপ্তার ১০ জন হল-সাইদুল ইসলাম নয়ন (২৫),কামরুল হাসান (২৫), মো.শাহীন ওরফে কাকা (২৯),মো.রানা (২৫), রানা প্রকাশ ভং ভাই (২৪), রবিউল হাসান সাজু (২২), মো. নাসির (২৫), দেলোয়ার হোসেন দেলু (৪০) এবং বাপ্পারাজ দাশ (২২) ও মো. তামিম (২১)।

গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় নগরীর হালিশহর এলাকার রাইড শেয়ারের মোটর সাইকেল চালক শিবংকর কুমার বণিকের বাইক ছিনতাই হয়। তিনি ২৫ এপ্রিল আকবর শাহ থানায় মামলা দায়ের করেন। শিবংকর কুমার বণিক জানান, নগরীর সল্টগোলা ক্রসিং থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ‘রানা ভং ভাই’ তার বাইকে ভাড়ায় ওঠে। রাত ৮টার দিকে উত্তর কাট্টলী টোল রোডে এজেন্সি পেট্রল পাম্পের সামনে গিয়ে রানা নেমে যায়। এসময় আশপাশ থেকে আরও ৫-৬ জন এসে তাকে প্রথমে লাথি মেরে পাশের খাদে ফেলে দেয়। দু’জন তার বাইক নিয়ে দ্রুত চলে যায়। অন্যরা তাকে মারধর করে রক্তাক্ত করে অদূরে সাগরপাড়ে নিয়ে গেঞ্জি দিয়ে মুখ বেঁধে ফেলে রেখে চলে যায়।
আকবর শাহ থানার পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর জানান, ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্তে নেমে প্রথমেই বাপ্পারাজ দাশ ও তামিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বাকিদের অবস্থান ধাপে ধাপে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়। টানা দুইদিনের অভিযানে ধরা পড়ে ঘটনায় জড়িত অন্যরা। এদের মধ্যে রানা ভং ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঢাকার কামরাঙ্গীচরে তার বাসা থেকে। নাসির ও সাজুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার গোত্রশালা গ্রাম থেকে। সেখানে নাসিরের একটি মোটর সাইকেলের গ্যারেজ আছে। সেই গ্যারেজ এবং নাসির ও সাজুর হেফাজত থেকে ছিনতাই করা শিবকংরের মোটর সাইকেলসহ সাতটি বাইক উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওসি আরও জানান, সংঘবদ্ধ চক্রটি দু’টি ভাগে বিভক্ত। একভাগের নেতৃত্ব দেয় সাইদুল ইসলাম নয়ন। তার সঙ্গে আছে শাহীন ও মো. রানা। শাহীনের ছদ্মনাম ‘কাকা’। নয়নের দুই স্ত্রী। তাদের নিয়ে নগরীর বিভিন্নস্থানে ঘুরে ঘুরে ভিডিও বানিয়ে টিকটকে আপলোড করে নয়ন। এছাড়া সে মোটর সাইকেল চুরিতে সিদ্ধহস্ত মাত্র আড়াই সেকেন্ডে মাস্টার চাবি দিয়ে অথবা ঘাড় ভেঙ্গে বাইক নিয়ে যাবার দক্ষতা আছে নয়নের মধ্যে। চক্রের আরেকভাগের নেতৃত্বে দেলোয়ার। তার সঙ্গে আছে বাপ্পারাজ, তামিম ও রানা, যার ছদ্মনাম ‘ভং ভাই’। তারা মূলত যাত্রীবেশে উঠে ইজিবাইক-মোটর সাইকেল চুরি-ছিনতাই করে। শহরের পাড়া-মহল্লায় দেলোয়ারের অনেক ‘সোর্স’ আছে। এরা রাইড শেয়ারের বাইকে যাত্রী হিসেবে উঠে দেলোয়ারের নির্দেশিত গন্তব্যে পৌঁছে। এরপর তাদের কাজ শেষ। ছিনতাই, বাইক বিক্রিসহ বাকি কাজ করে দেলোয়ার-নয়নের নেতৃত্বে চক্রের বাকি সদস্যরা। সীতাকুণ্ড থানার বক্ষব্যাধি হাসপাতালের পেছনে নির্জন স্থান হচ্ছে তাদের ছিনতাইয়ের স্পট। সেখানে রাইডারদের জিম্মি করে বাইক ছিনতাই করে ওরা।

ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ১৮ এপ্রিল নয়ন ও শাহীন কাকা সাগরপাড়ে টিকটক ভিডিও সেরে আসার পথে মোটর সাইকেল ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। পরে দেলোয়ারের গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা একসাথে মিলিত হয়। সেখান থেকে রানা ভংকে যাত্রীবেশে রাইড শেয়ারের বাইকে করে টোল রোডে যাবার জন্য পাঠানো হয়। রানা ভং শিবংকরের বাইকে ভাড়ায় ওঠে সেখানে গেলে তারা সেটি ছিনতাই করে।

নয়ন ও শাহীন ছিনতাই করেই বাইক নিয়ে হাটহাজারী যায়। কিন্তু সেখানে বিক্রি করতে না পেরে আবার ফেরত আসে। পরে তারা কুমিল্লায় গিয়ে নাসিরের কাছে ১৭ হাজার টাকায় বাইকটি বিক্রি করে। নাসির সেটি বিক্রি করে দেয়ার আগেই আমরা তার গ্যারেজে অভিযান চালাই। নাসির ও সাজু মূলত চুরি-ছিনতাইয়ের মোটর সাইকেল কিনে বিক্রি করে। তারা ছাড়া চক্রে দশজনেরও বেশি সদস্য আছে। এরা সাম্প্রতিক সময়ে শুধু রাইড শেয়ারিংয়ের ৬-৭টি বাইক ছিনতাই করেছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। গ্রেপ্তার আটজনকে শিবংকরের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

 

পূর্বকোণ/রাজীব/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট