১ মে, ২০২৩ | ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঈদের ছুটিতে বেড়ে গেছে চিনি, আদা, পেঁয়াজ, রসুন ও আলুর দাম। কোন কোন মুদির দোকানদার চিনি বিক্রি করছেন না। শুধু চিনিই নয়, ফের অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও আলুর বাজারও। দেড় মাস ধরে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ তাই দাম বাড়ছে। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির এই অজুহাত দিলেও চিনি, আদা, রসুন ও আলুর দাম বৃদ্ধির কোন সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে পারেননি খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।
কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন পূর্বকোণকে বলেন, পবিত্র রমজান মাসে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়ালেও সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক দপ্তরগুলো তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এতে ব্যবসায়ীরা বুঝে গেছেন, সরকার তাদের কিছুই করবে না। তাই ঈদের দুয়েকদিন আগে থেকেই বেশ কিছু পণ্যের দাম ব্যাপক হারে বাড়িয়ে দিয়ে জনগণকে জিম্মি করে ফেলেছে। এই জিম্মিদশা থেকে জনগণকে উদ্ধারে সরকারের কোন উদ্যোগও নেই।
গতকাল নগরীর বিভিন্ন এলাকার মুদি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেকেই চিনি বিক্রি করছেন না। উধাও হয়ে গেছে চিনি। যেসব দোকানে চিনি পাওয়া যাচ্ছে সেখানে কেজি ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নগরীর দুই নম্বর গেট কর্ণফুলী কমপ্লেক্সে গতকাল রাতে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। অথচ সর্বশেষ সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী খোলা চিনির কেজি ১০৪ টাকায় বিক্রি করার কথা। এতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। ভোক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, সরকার বলছে চিনির দাম কমিয়েছে। অথচ বাজারে গিয়ে দেখছি উল্টো চিত্র।
ভোক্তা মো. আবদুল হক জানান, নিজের আবাসিক এলাকার মুদির দোকানে চিনি না পেয়ে বহদ্দারহাট থেকে চিনি কিনে আনেন কেজি ১৩০ টাকা করে।
খাতুনগঞ্জের চিনি ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত চিনি আসছে না। কারণ এলসি বন্ধ। মিল মালিকরা চিনি না দিলে বাজারে সংকট দেখা দিবেই। ফলে চিনির দাম বেড়েছে।
এদিকে বাজারে দেশি পেঁয়াজ পর্যাপ্ত থাকলেও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। গত তিন দিন ধরে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। যা তিন দিন আগেও ছিল ৪০-৪৫ টাকা।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ আমদানিকারক মো. আহসান খালেদ বলেন, দেড় মাস আগে সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দেয়। এখন বাজারে যেগুলো আছে সেগুলো দেশি পেঁয়াজ। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ নেই। যে কারণে পাইকারিতেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। পাইকারিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। আবার দেশি পেঁয়াজের মধ্যে উন্নতমানেরগুলো আলাদা করে সেগুলো বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এছাড়া পাইকারিতে রসুন চার দিন আগে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। গতকাল দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। খুচরা বাজারে যদিও রসুনের কোনো সংকট নেই, তবুও প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়। আবার বাজারে মিলছে না চীনা আদা। তবে মিয়ানমারের আমদানি করা আদা প্রতিকেজি ১৫০ টাকায় পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরায় এসে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়।
এদিকে ঈদের পর থেকেই বাজারে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। ২০ থেকে ২৫ টাকার আলু হঠাৎ করে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে গত দশ দিন ধরে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, সরকার বিদেশে কিছু সবজি রপ্তানি করছে। এর মধ্যে আলুও আছে। এ কারণে আলুর দাম বেড়ে গেছে।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস পূর্বকোণকে বলেন, বর্তমানে দেশের বাজারে বিদেশি কোন পেঁয়াজ নেই। তার ধারণা দেশের কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারেন সেজন্যই আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কেজি মানভেদে ৪২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চায়না রসুনের কেজি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। দেশীয় রসুনের কেজি ১৫০ টাকা। চায়না রসুনের বুকিং বেশি। তবে দেশি রসুনের দাম আগে থেকেই বাড়তি ছিল। বাজারে আদার সরবরাহও কিছুটা কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, চীন থেকে আদা আমদানি করতে গেলে খরচ বেশি পড়ছে। পাইকারিতে আদা বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১৩০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত। ঈদের ছুটিতে দাম বেড়েছে। আদা রসুনের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, রসুনের দাম প্রতি টন ১২০০ ডলার এবং আদার দাম ১৫০০ ডলার। তবে মে মাসে চীনে নতুন শষ্য উঠবে। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম পূর্বকোণকে বলেন, নানা অজুহাতে ঈদের ছুটিতে বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। চিনির দাম ঈদের দুইদিন আগে বেড়ে গেছে। ১০৭ টাকার চিনি ১২৫ টাকা হয়েছে। চিনির বাজার অস্থির উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিল মালিকরা চিনি সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী না হলে দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
পূর্বকোণ/পিআর