চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

ছয় কি.মিটার পেরুতে দু’ঘণ্টা

পোর্ট কানেক্টিং রোডে ভোগান্তি

ইফতেখারুল ইসলাম

২৬ আগস্ট, ২০১৯ | ২:১১ পূর্বাহ্ণ

হ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে
মে মাসে। কাজ এখনো অনেক
বাকি, ফের সময়ের আবেদন
হ কন্টেইনারবাহী প্রাইমমুভার
ও কাভার্ডভ্যান পরস্পরকে
ক্রস করে চরম ঝুঁকিপূর্ণভাবে
হ ভাল প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স
ব্যবহার করে অদক্ষব্যক্তি
কাজ নেয়াতে দুর্গতি

পোর্ট কানেকটিং (পিসি) রোড। সড়কটির গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য এর নামই যথেষ্ট। চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন হাজারো ট্রাক, কাভার্ডভ্যান এবং প্রাইম মুভার এই সড়ক দিয়ে পণ্য আনা-নেয়া করে। কিন্তু এই সড়কের ঠিকাদারের কাছে এটির (সড়কটির) কোন গুরুত্ব নেই। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত মে মাসে। কাজ এখনো অনেক বাকি। এই সড়ক দিয়ে চলাচলাকারীদের দুর্ভোগের সীমা নেই। সড়কের মাঝে সৃষ্ট গর্তে পড়ে যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে গাড়ি বিকল হওয়ার ঘটনা অহরহ। ছয় কিলোমিটার সড়ক পার হতে লেগে যায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। সড়কের বেহাল দশায় যাত্রীবাহী সাধারণ যানবাহন সহজে এই পথ মাড়াতে চায় না। ফলে সড়কের উভয় পাশের মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। এই ভোগান্তি চলছে কয়েক বছর ধরে। সহসা এ সমস্যা নিরসনের সম্ভবনাও ক্ষীণ। অবস্থাদৃষ্টে অনুমেয় জন ও যানের এই দুর্ভোগ চলবে আরো বহুদিন। কাজটি সিটি কর্পোরেশনের না হলেও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেছেন চলতি বছরের মধ্যে পিসি রোডের কাজ সম্পন্ন করার জন্য তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল চলতি বছরের মে পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় আগস্টের ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। সেই বাড়ানো মেয়াদও শেষ হতে চলেছে। গত ঈদুল আজহার আগে এবং পরে কাজ বন্ধ ছিল। সংশ্লিষ্টরা জানান, কাজ নিয়েছে ভাল প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজ পরিচালনা করছে অদক্ষ ব্যক্তি। অর্থাৎ ভাল প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে অদক্ষ ব্যক্তি কাজ নেয়াতে আজ এই দুর্গতি।

গতকাল (রবিবার) রানা বিল্ডার্সের পক্ষ থেকে আগামী মে পর্যন্ত প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করা হয়েছে।
জানতে চাইলে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন পূর্বকোণকে বলেন, এই সড়কের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজে ঠিকাদারের কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল। বিশেষ করে সেবা খাতের লাইনগুলি সরাতে বেশ সময় লেগেছে। যেহেতু ব্যস্ত সড়ক তাই পুরো সড়ক বন্ধ করে কাজ করা যায়নি। তবে বর্তমানে যে পরিমাণ কাজ বাকি আছে, দুই থেকে আড়াই মাস আন্তরিকভাবে কাজ করলে শেষ হয়ে যাবে। তবে এজন্য দরকার ঠিকাদারের আন্তরিকতা। ঠিকাদার আগামী বছরের মে পর্যন্ত সময়ের আবেদন করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদিও প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষমতা সিটি কর্পোরেশনের নেই। তা নির্ভর করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশল বিভাগের উপর। তবুও আমি চাইব চলতি বছরের মধ্যেই কাজটি শেষ হোক।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, নিমতলা থেকে প্রিন্স অব চিটাগং কমিউনিটি সেন্টার পর্যন্ত সড়কটির একপাশে কার্পেটিং করা হয়েছে। অপরপাশ দেখে বুঝার উপায় নেই যে, এটি একটি রোড। সেখানে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল বিশাল গর্ত। বৃষ্টির পানি জমে একেকটি গর্ত পুকুরে রূপ নিয়েছে। কার্পেটিং করা অংশ দিয়ে দুই দিকের গাড়ি ঝুঁকিপূর্ণভাবে আসা-যাওয়া করছে। বিশেষ করে বন্দর থেকে বের হওয়া কন্টেইনারবাহী প্রাইমমুভার এবং কাভার্ডভ্যান একটি অপরটিকে চরম ঝুঁকিপূর্ণভাবে ক্রস করে। ওইসময় পাশ দিয়ে কোন হালকা যানবাহন থাকলে তা গর্তে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দেয়। প্রিন্স অব চিটাগংয়ের পর থেকে আর কার্পেটিং করা হয়নি। এরপর থেকে পুরো সড়কটিই যানবাহন চলাচলে প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এখানে প্রতিদিন কোন না কোন গর্তে পড়ে গাড়ির চাকা বসে যায়, চেসিস ভেঙে যায়, কখনো গাড়ির স্প্রিং ভেঙে যায়। কখনো গর্তে পড়ে চাকা আটকে যায়। সিএনজি ট্যাক্সি কিংবা প্রাইভেট কারের মত হালকা যানবাহনগুলো যতটা সম্ভব এই সড়কটি এড়িয়ে চলছে। কারণ গর্তে চাকা পড়ে হালকা যানবাহনের তলা মাটির সাথে লেগে গাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অনেক সময় জ¦ালানি তেলের টাংকি ফেটে গাড়িতে আগুন ধরে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে।

সড়কটির গুরুত্ব বিবেচনা করে এবং জনভোগান্তি দূর করতে ২০১৭ সালের শেষদিকে উন্নয়নকাজ শুরু করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। চলতি বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো অনেক কাজ বাকি পড়ে আছে। সড়কটি এই এলাকার বাসিন্দা এবং চলাচলকারীদের জন্য অভিশাপের মতো ছিল। রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ ছিল। বৃষ্টি হলে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো। এ ছাড়া জোয়ারের সময় এলাকায় পানি উঠে যেত। বাসায় কোনো মেহমান আসতে ভয় পেতেন। সড়ক দুটির উন্নয়ন কাজ শুরু করার পর সাধারণ মানুষ খুশি হয়। কিন্তু বর্তমানে কাজের অগ্রগতি দেখে তারা চরম অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। আগে রাস্তায় পানি উঠত। এখন রাস্তা উঁচু করার পরও বাকি কাজ না করায় তা চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

জানতে চাইলে চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদাত মো. তৈয়ব পূর্বকোণকে বলেন, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজের জন্য সড়কটিকে চারটি লটে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে নিমতলা থেকে আনন্দীপুর পর্যন্ত দুই লটে ১০০ কোটি টাকার ৩৬৫০ মিটার সড়কের কাজ করছে রানা বিল্ডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের মেয়াদ গত জুনে শেষ হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ইতিমধ্যে একপাশের ৩০০০ মিটার কার্পেটিং করা হয়েছে। অপর অংশে ম্যাকাডম এবং ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি জানান, আগস্টে বৃষ্টিপাত আছে। এছাড়া কোরবানির ঈদের ছুটি ছিল। যে কারণে কাজের অগ্রগতি হয়নি। বর্তমানে প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ঠিকাদার আন্তরিক হলে চলতি বছরের মধ্যেই বাকি কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব।
প্রকৌশলী তৈয়ব জানান, সাধারণ মানুষের ধারণা চলমান কাজ শেষ হলেই পিসি রোডের কাজ শেষ হয়ে যাবে। বাস্তবে তা নয়। আরো দুই লটের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। আনন্দী বাজার থেকে সাগরিকা মাজার পর্যন্ত ১৪৫০ মিটার সড়কের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজের দরপত্রশেষে সম্প্রতি কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। কাজটি পেয়েছে চসিকের ঠিকাদার মনজুর আলম চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান। প্রায় ৪৩ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। এছাড়া চতুর্থ লট সাগরিকা মাজার হতে অলংকার পর্যন্ত ৭৫০ মিটার সড়কের দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে। এই লটের প্রকল্প ব্যয় হতে পারে ২৮ কোটি টাকা।

প্রকেল্পর কাজে নিয়োজিত জাইকার কনসালটেন্ট প্রকৌশলী মাহাবুব পূর্বকোণকে বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় জাইকা কিছুটা বিরক্ত। তবে কাজ শেষ করার জন্য প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ যতদিন ছিল তার ২০ শতাংশ সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বর্ধিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট