চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

তিন দশকেও কমিটি হয়নি মহানগর শ্রমিকলীগের

ইফতেখারুল ইসলাম

১৮ এপ্রিল, ২০২৩ | ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ তিন দশক ধরে চট্টগ্রাম মহানগরে শ্রমিক লীগের কমিটি নেই। তাই সুশৃঙ্খল নেতৃত্বও নেই। পাঁচ ভাগে বিভক্ত শ্রমিক লীগে ঐক্যের মাধ্যমে কমিটি গঠনে কোন উদ্যোগও নেই।

 

বিভক্ত ধারা সমূহের একটি হল- মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মরহুম জননেতা আলহাজ এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীদের একটি অংশ সিবিএ নন সিবিএ সমন্বয়কারী আবুল হোসেন আবুর নেতৃত্বে সক্রিয় আছে। অপর একটি অংশ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের বেসিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ। ১৯৯৪ সালে কেন্দ্র ঘোষিত সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং মো. নুরুল ইসলামের নেতৃত্বেও একটি অংশ রয়েছে। এছাড়া ২০০১ সালের পর মহিউদ্দিন চৌধুরী ঘোষিত কমিটির সভাপতি বখতিয়ার উদ্দিন খানও একটি অংশকে নেতৃত্ব দেন। হাবিবুর রহমান হাবিবও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে নানা কর্মসূচি পালন করছেন।

 

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি শফর আলী সংগঠনের মধ্যে অনৈক্যের কথা স্বীকার করে পূর্বকোণকে জানান, কেন্দ্র থেকে সম্মেলনের মাধ্যমে জাহাঙ্গীর আলম এবং নুরুল ইসলামকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হলেও তা মানেননি তৎকালীন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ৮টি অঞ্চলের সমন্বয় সভা ডাকেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। সেসময় আবদুল জলিল চিঠি দিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে এসংক্রান্ত কর্মকা- বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। তবে মহিউদ্দিন চৌধুরী তা বন্ধ করেননি। তিনি বখতিয়ার উদ্দিন খান এবং এটলীকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে কমিটি দেন। এখন এটলি আর বেঁচে নেই। বখতিয়ার উদ্দিন খানও তেমন সক্রিয় নন। শ্রমিক লীগ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হলেও এর প্রধান কাজ হল মূল সংগঠনের কর্মসূচি সফল করতে কাজ করা। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক ব্যক্তির অসহযোগিতার কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। তবে নতুন করে তা করার চিন্তা-ভাবনা চলছে। কমিটি না থাকায় নেতাকর্মীরা হতাশ উল্লেখ করে বলেন, মহানগরে ৭টি এবং সীতাকু–বাড়বকু- একটিসহ মোট ৮টি অঞ্চল রয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলের স্ট্যাটাস সমান। সব অঞ্চলে সক্রিয় নেতা কর্মী আছে। তবে সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে তারা হতাশায় ভুগছে।

 

বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাবি করা হাবিবুর রহমান হাবিব পূর্বকোণকে বলেন, তিনিই দলীয় কর্মসূচিতে সরব আছেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাথে। তিনি বলেন, শ্রমিক লীগের কমিটি ঘোষণার সময় মহানগর আওয়ামী লীগ সুপারিশ করার প্রথা ছিল। তাদের সুপারিশ না নেয়ায় তৎকালীন মহানগর আওয়ামী লীগের এম এ মান্নান- এবি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কমিটি তা গ্রহণ করেনি। নতুন করে কমিটি ঘোষণা করে। যাতে বখতিয়ার উদ্দিন খানকে সভাপতি এবং মাহাবুবুল হক চৌধুরী এটলিকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়।

 

২০০৯ সালে বখতিয়ার উদ্দিন খানকে বাদ দিয়ে তাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয় বলে তিনি দাবি করেন। এসংক্রান্ত তার কাছে কেন্দ্রীয় কমিটির চিঠি আছে বলেও তিনি উল্লেখ করে বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাথে সমন্বয় করে তিনি কাজ করছেন। তাছাড়া বখতিয়ার উদ্দিন খানকে কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রাফট ফেডারেশন বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। কমিটিতে তিনি ছাড়া আর কেউ নেই।

 

হাবিবুর রহমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি শফর আলী বলেন, হাবিব তো জাতীয় পার্টি করতেন। এখানে কাউকে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দেয়া হয়নি।

 

আলাদাভাবে মহানগর শ্রমিক লীগের ব্যানারে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসা একটি অংশের নেতৃত্ব দেওয়া আবুল হোসেন আবু বলেন, সর্বশেষ ১৯৯৪ সালে মহানগর শ্রমিক লীগের সম্মেলন হয়েছিল। নিয়মিত সম্মেলন না হওয়ায় নেতা উঠে আসছে না। এ কারণে দলাদলি বেড়ে  গেছে। যাঁরা মাঠে-ময়দানে সাংগঠনিক কার্যক্রম করছেন তাঁদের মূল্যায়ন হচ্ছে না। এতে হতাশা আছে কর্মীদের মধ্যে। ত্যাগীদের পদ-পদবি দিয়ে দ্রুত কমিটি ঘোষণার দাবি জানান তিনি।

 

শ্রমিক লীগের একাধিক নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপকালে তারা জানান, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাকালে সরকার বিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল শ্রমিক লীগ। কিন্তু কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের অবহেলা এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আন্তরিকতার অভাবে দীর্ঘ তিন দশকেও কমিটি করা যায়নি।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট