চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পাউবোর তিন গাফিলতির মাশুল গুনবে সরকার

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৮ এপ্রিল, ২০২৩ | ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমীক্ষা ও নকশা প্রণয়নে দায়সারাভাব এবং কাজের নজরদারির অভাবে পটিয়া জলাবদ্ধতা প্রকল্প নিয়ে বড় মাশুল গুনতে হবে সরকারকে। বেড়িবাঁধ লাগোয়া জমির মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণে ‘স্থায়ীত্ব’ নিয়ে প্রশ্ন করেছেন স্থানীয়রা। ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল পটিয়া জলাবদ্ধতারোধ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ব্যয় ধরা হয়েছে ১১০০ কোটি ৫৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।  পটিয়া আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাঁধটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

 

হুইপ সামশুর হক চৌধুরী এ বিষয়ে বলেছিলেন, ‘মেরিন ড্রাইভের আদলে সুরক্ষিত হবে পটিয়া। চাষাবাদের আওতায় আসবে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। উপকৃত হবে কয়েক লাখ মানুষের।’ মানুষকে ফসল ও জায়গার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’ সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, খাল থেকে প্রায় তিন ফুট দূরত্বে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। আর বাঁধের মাটি দেওয়া হচ্ছে নির্মাণাধীন বাঁধের কাছ থেকে। এর ফলে বাঁধের স্থায়িত্ব ও টেকসই হওয়া নির্মাণ প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। তবে বিভিন্ন স্থানে খালের তীর ঘেঁষেই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণ কাজ শুরু করতে গিয়ে বার বার জায়গা বদল ও নকশা পরিবর্তন করতে হচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। এরফলে ভূমি অধিগ্রহণেও জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। বার বার নকশা পরিবর্তন ও অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে প্রকল্প এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দেখা যায়নি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন ও তাদের নিয়োজিত স্থানীয়রা বাঁধ নির্মাণের কাজ করছেন।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর-১) শওকত ইবনে শাহীন পূর্বকোণকে বলেন, ‘এক সময়ে আমরা জায়গা অধিগ্রহণ না করেই খালের তীরে তীরে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতাম। এখন জমি অধিগ্রহণ করেই বাঁধ নির্মাণ করছি। কারণ খাল বা নদীকে পানি প্রবাহের জায়গা দিতে হয়। যাতে পানি বৃদ্ধি ফেলে বেড়িবাঁধ টপকিয়ে পানি না যায়। অথবা বাঁধ ভেঙে না যায়। তাই পানি ফুঁসে ওঠলেও যাতে বাঁধের ক্ষতি না হয়।’

 

খাল থেকে বড় দূরত্বে বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নদী বা খালের জায়গা ছেড়ে দিয়ে বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করছি। তবে শ্রীমাই খালের তীরঘেঁষেই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।’

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা জানান, চট্টগ্রামের নদী বা খাল অনেকটা ছোট। পানি আইনে খালের তীরের ১০ মিটার ও নদীর তীরের ৩০ মিটার হচ্ছে নদী-খালের জায়গা। তা ছেড়ে দিয়ে বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

 

নদী বা খালের আইন না মেনে আরও বেশি দূরত্বে বাঁধ নির্মাণে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কার কথা জানান নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকৌশলী।

 

খালের বেশি দূরত্বে বাঁধ নির্মাণে অধিগ্রহণ ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহীন বলেন, ‘এক সময় মানুষ বাঁধের জন্য জমি দিতো। এখন মানুষ অধিগ্রহণ ছাড়া বাঁধ নির্মাণ করতে দিতো না। খালের পাড়ে করলেও অধিগ্রহণ করে বাঁধ নির্মাণ করতে হতো। এখন সরকার গায়ের জোরে করার পক্ষপাতি না। তাই প্রকল্পে ৫৮ হেক্টর জায়গা অধিগ্রহণে ধরা রয়েছে।’ দেখা যায়, বাঁধের কাছ থেকে মাটি নিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। টেন্ডারের শর্তে মতে, বাঁধ নির্মাণের জায়গা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিজ দায়িত্বে সংগ্রহ করবেন। বিভিন্ন স্থানে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান স্থানীয় নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে বাঁধের কাছ থেকে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে।

 

নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহীন বলেন, ‘বেড়িবাঁধের ১০ মিটারের মধ্য থেকে মাটি নেওয়া যাবে না। ভুলবশত বাঁধের দুই পাড়ের ১০ মিটারের মধ্যে থেকে মাটি সংগ্রহ করা হয়েছে, তা ভরাট করে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’ ঠিকাদার নিজ দায়িত্বে মাটি সংগ্রহ করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঠিকাদার অবৈধভাবে মাটি সংগ্রহ করলে তা সরকারি আইন মতে এসি ল্যা- ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা রয়েছে।’ ৬ মিটার পর্যন্ত কাটার জন্য ঠিকাদারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী। ‘৬ মিটারের বেশি কাটলে ক্ষতিপূরণও একটু বেশি দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন এমপি মহোদয়।’

 

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে পটিয়া পৌরসভাসহ আশিয়া, হাবিলাশদ্বীপ, ধলঘাট, বড়লিয়া, দক্ষিণ ভূর্ষি, জঙ্গলখাইন, নাইখাইন, ভাটিখাইন, ছনহরা কচুয়াই, হাইদগাঁও, কেলিশহরসহ ১২ ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ উপকৃত হবে। মেরিন ড্রাইভের আদলে সুরক্ষিত হবে পটিয়া। চাষাবাদের আওতায় আসবে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি।

 

প্রকল্পে ২৫ দশমিক ৫১০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। ১১টি খালের ৩০ দশমিক ২০০ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হবে। দুই দশমিক ৯৫০ কিলোমিটার নদী-খালের তীর সংরক্ষণ করা হবে। প্রকল্পে ২৬টি খালে রেগুলেটর বসানো হবে। চার দশমিক ১০০ কিলোমিটার ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ করা হবে। খানমোহনা এবং ধলঘাট স্টেশনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য চাঁদখালী খালের উপর একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসন, ভাঙনরোধ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ খালগুলোর পানি নিষ্কাশন ও ধারণক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে ফসল উৎপাদনের হার ১৯৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৩০.৫৪ শতাংশে উন্নীত করা হবে।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট