চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এগিয়ে এসেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড

মোহাম্মদ আলী

৫ এপ্রিল, ২০২৩ | ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ের পানি সংকট নিরসনে প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। পানি উন্নয়ন বোর্ড এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড মিরসরাই ও সীতাকু- উপজেলার অধীনস্থ গোভানিয়া ছড়া, খৈয়াছড়া, কুমিরা ছড়া এবং জোরামতল খালের উজান অঞ্চলে পরিবেশবান্ধব জলাধার নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালাচ্ছে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, দুটি কম্পোনেটে সমীক্ষাটির কাজ চলছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে হাইড্রোলজিক্যাল ও মরফোলজিক্যাল মডেলিং এবং অপরটি হচ্ছে পরিবেশ ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ভুক্ত ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) হাইড্রোলজিক্যাল ও মরফোলজিক্যাল মডেল স্টাডি এবং সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)  পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব (ইএসআইএ) নিরুপণে কাজ করছে। ২০২১ সালের নভেম্বরে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।

 

সূত্র আরো জানায়, সীতাকু- ও মিরসরাইয়ের পাহাাড়ি এলাকা থেকে অসংখ্য ছোট-বড় ছড়া সৃষ্ট হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পতিত হয়েছে। বৃষ্টি প্রবণ এ অঞ্চলে বর্ষা মওসুমে পানি প্রাপ্যতা বেশ ভাল হলেও শুষ্ক মওসুমে পানি সংকট চরম আকার ধারণ করে। চট্টগ্রাম শহরের সন্নিকট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় সেখানে দ্রুত শিল্পায়ন হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় যোগান কম থাকায় সেখানে পানির তীব্রতা দিনে দিনে বাড়ছে। স্থানীয় জনগণ ছোট ছোট পাহাড়ি ছড়াসমূহে মাটির বাঁধ নির্মাণ করে পানির চাহিদা পূরণে চেষ্টা করছে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং বাঁধ নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় জলাধার স্থাপন করা হলে সংরক্ষিত পানি কৃষিকাজ, গৃহস্থালি এবং শিল্প কারখানাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড মিরসরাইয়ের গোভানিয়া ছড়া, খৈয়াছড়া এবং সীতাকু- উপজেলার কুমিরা ছড়া ও জোরামতল খালের উজান অঞ্চলে পরিবেশবান্ধব জলাধার নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালাচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় বড় ও মধ্যম আকারের ২৪টি পাহাড়ি ছড়ার মধ্যে গোভানিয়া ছড়া, খৈয়াছড়া, কুমিরা ছড়া ও জোরামতল খালে প্রকল্প তৈরির কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সমীক্ষার আওতায় প্রকল্পটির বেশির ভাগ অংশ মিরসরাই, সীতাকু- এবং কিছু অংশ ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলার মধ্যে পড়েছে। যার আয়তন প্রায় ৩৬০ দশমিক ৭ বর্গ কিলোমিটার। সমীক্ষায় প্রকল্প এলাকায় বার্ষিক গড় পানির প্রাপ্যতা নির্ধারণ করা হয় প্রায় ৪৭৩ মিলিয়ন ঘন মিটার। প্রকল্প এলাকার ছড়াগুলোতে মাসিক গড় পানি প্রবাহ সবচেয়ে কম ফেব্রুয়ারিতে ৭ মিলিয়ন ঘন মিটার এবং সবচেয়ে বেশি জুলাই মাসে ১০১ মিলিয়ন ঘন মিটার।  প্রকল্প এলাকায় গৃহস্থালি, কৃষি ও শিল্প কাজে এ তিন ধরনে পানি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যেও কিছু পানির প্রয়োজন হয়। ছড়ার উভয়পাশে এক কিলোমিটার প্রশস্ত জায়গা বিবেচনায় নিয়ে উল্লেখিত ৪টি প্রধান ছড়ায় বার্ষিক পানির চাহিদা ১৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন ঘন মিটার। প্রকল্পে এ চারটি ছড়ার উজানে বাঁধ দিয়ে জলাধার নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

 

প্রকল্প নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান খান দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘দুটি কম্পোনেটে সমীক্ষাটির কাজ করছে আইডব্লিউএম ও সিইজিআইএস। চলতি ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের সমীক্ষার কাজ শেষ হবে। এরপর ডিপিপি তৈরি করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে পানি সংকট নিরসনে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

 

পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমির হোসেন সোহেল দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, সরকার বর্ষাকালের পানি সংরক্ষণ করে ব্যবহারে প্রকল্প গ্রহণ করলে আমরা অংশীদার হতে পারি।’

 

জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমাস শিমুল বলেন, সীতাকু-ে প্রতিবছর বর্ষা মওসুমে বৃষ্টির পানি বিভিন্ন ছাড়া ও খাল হয়ে সাগরে চলে যাচ্ছে। সরকারি কোন প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে আপাতত শিল্প মালিকদের অস্থায়ীভাবে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার নীতি সহায়তা দিলে উপকৃত হতো শিল্প মালিকরা।’

 

এদিকে মিরসরাই আসনের সংসদ সদস্য ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মিরসরাই ও সীতাকু- এলাকায় শুষ্ক মওসুমে পানি সংকট প্রবল। এ সংকট নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ড যে প্রকল্প নিবে তাতে আমি সহযোগিতা দিয়ে যাব।’

 

সীতাকু- আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম বলেন, সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ের পাহাড়ি এলাকায় বাঁধ দিয়ে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে কৃষি ও শিল্পায়ন দুটিই রক্ষা করা সম্ভব হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এ নিয়ে ফয়’স লেক থেকে করেরহাট পর্যন্ত একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে একদিকে চাষাবাদ রক্ষা পাবে, অপরদিকে শিল্পায়নে উপকৃত হবে।’

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট