চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পিডিবির দুর্নীতির খোঁজে দুদক

ইমাম হোসাইন রাজু

২৫ আগস্ট, ২০১৯ | ২:৩৬ পূর্বাহ্ণ

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চট্টগ্রামের বিভিন্ন দুর্নীতির খাত চিহ্নিত করে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। ইতোমধ্যে দুদকের হটলাইন নাম্বার ও লিখিত কয়েকটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে একাধিক স্থানে অভিযান পরিচালনাও করেছে সংস্থাটি। প্রাথমিকভাবে এসব অভিযোগের প্রমাণও মিলেছে বলে জানিয়েছেন দুদক কমিশন। শুধু বিভাগের দুর্নীতিই নয়, একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও নজরে রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন দুদক সূত্র। যাদের বিষয়ে বিদ্যুৎ চুরিতে সহযোগিতা-সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে।

অনেক আগ থেকে এ বিভাগের বিষয়ে অভিযোগ থাকলেও সম্প্রতি এ বিষয়ে জোর দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি। এরমধ্যেই গতমাসে ও চলতি মাসে নগরীর কয়েকটি স্থানে কয়েক দফায় অভিযান পরিচালনাও করে দুদক। যাতে বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে বিদ্যুৎ চুরি হওয়ার বিষয়টি ওঠে আসে। এরপর থেকেই বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নজরে রেখেছে সংস্থাটি।

দুদক জানায়, নগরীর একাধিক করখানা থেকে শুরু করে বসত-ঘরে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ লাইন সরবরাহ করা হয়েছে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে। যার অফিসিয়ালভাবে কোন কোন তথ্যও নেই। ফলে প্রতিমাসে সরকারের কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে এ বিভাগ থেকে। তাছাড়া চট্টগ্রামের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকেও বেশ কিছু অবৈধ বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়ার বিষয়েও দুদকের অভিযানে ওঠে এসেছে। যে সকল প্রতিষ্ঠানকে সংযোগ প্রদান করা হয়েছে, তাদের বিষয়েও খোঁজ-খবর নিচ্ছে বলে জানিয়েছে দুদক।

এর মধ্যে গত ২০ আগস্ট নগরীর শীর্ষ পর্যায়ের একটি স্টিল মিলে অভিযান পরিচালনা করেন দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর উপ-সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম। যেখানে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ দেয়া হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়েছে টিম। সেখানে লাইন থাকলেও তার হিসেব বিদ্যুৎ বিভাগের কাগজে-কলমে নেই। এই কাজগুলো বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশেই হয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক।
দুদক জানায়, ওই অভিযানে স্টিল মিলটিতে কী

কী বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ অপরেটড (ব্যবহার) করা হয়, সেগুলোর তথ্য সংগ্রহ করেন দুদক টিম। একই সাথে বিগত দুই বছরের বিদ্যুৎ বিল এবং স্টিল মিলে প্রস্তুতকৃত মালামালের তালিকাও সংগ্রহ করেন দুদকের অভিযানিক টিম।
এর আগেও টাইগারপাস আমবাগানের রেলওয়ে কলোনি এলাকায় একই অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেন দুদকের কর্মকর্তারা। সেখানেও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে বিদ্যুৎ চুরির বিষয়টি উঠে আসে। এছাড়াও আরও কয়েকটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের কারখানাতেও অভিযান চালায় দুদক। সেখানেও একই বিষয়ে প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছেন দুদক সূত্র। যদিও এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করেনি দুদক। তবে এ বিষয়ে অধিক তথ্যবলি বিশ্লেষণপূর্বক বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরির পর বিষয়টি কমিশনের উপস্থাপনের কথা জানিয়েছেন দুদকের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।
এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর উপ-পরিচালক লুৎফুল কবির চন্দন পূর্বকোণকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে এসব অবৈধ লাইন স্থাপন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক বিশ্লেষণে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। যেসকল স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে, সেখান থেকে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব বিষয়ে অধিক বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হবে’।

প্রতিবেদনটি শীঘ্রই কমিশনে পাঠানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদন আলোকে কমিশন যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, ওই সিদ্ধানেই আমরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট