দোকানে ঝুলানো রং বেরংয়ের থ্রি-পিচ, ফ্রগ, গাউনসহ নানারকম পোশাক। এদিকে লাইনে ধরে সাজানো সেলাই মেশিনগুলোতে বিরতিহীন সেলাই করে যাচ্ছেন ৫-৬ জন শ্রমিক। পাশেই কেউ কাপড়ের অর্ডার নিচ্ছেন, কেউ কাস্টমারের সাথে আলাপ করছেন, কেউ বা সেলাই করা পোশাকগুলো আবার কাস্টমারের হাতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। এক একটি দোকানে আট থেকে দশ জন মানুষ রাত-দিন খেটে চলেছেন। ঈদকে কেন্দ্র করে মেশিনের এমন খটখট শব্দে মুখর নগরীর আন্দরকিল্লাহর খলিফাপট্টিসহ নগরীর বিভিন্ন মার্কেটের নামিদামি দর্জি দোকানগুলোতে। ব্যস্ততায় যেন ফুরসত নেই অলিগলির দর্জি দোকানগুলোতেও। কিন্তু এবার ঈদে বেড়েছে কাপড় সেলাইয়ের দাম। ২০১৯ সাল থেকে তিন বছরের ব্যবধানে প্রতিটি পোশাক সেলাইয়ে দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। নগরীর খলিফাপট্টিতে সরেজমিনে দেখা যায়, এখানে প্রায় ৪ শতাধিক দোকানে তিন হাজারের বেশি শ্রমিক রয়েছে। সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। কিন্তু এবার ঈদের বাজারকে কেন্দ্র করে এখানেও বেড়েছে সেলাইয়ের দাম।
দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে এখানের ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা পরবর্তী সময়ে সব কিছুর দাম বেড়েছে। শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। পরিবহণ, বিদ্যুৎ খরচ ও সুতার দাম বেড়েছে। এসব কারণে সেলাইয়ের দাম বেড়েছে। এখানে নারী শিশুদের ৬-৮ রকমের পোশাক সেলাই হয়। আগে শিশুদের একটি ফ্রগ সেলাই হত ৩০-৪০ টাকার মধ্যে। এখন সেই ফ্রগগুলো ৭০-১০০ টাকা দামে সেলাই হচ্ছে। থি-পিচ ৮০-১২০ টাকার মধ্যে সেলাই হত। সেই থ্রি-পিচা এখন সেলাইয়ের দাম ১৮০-২৫০ টাকার মধ্যে।
খলিফাপট্টির ব্যবসায়ী সেলিম গার্মেন্টস’র স্বত্বাধিকারী হাজি মোহাম্মদ সেলিম বলেন, টেরিবাজার থেকে থান কাপড় সংগ্রহ করে নিজস্ব ডিজাইনে সব বয়সের চাহিদা অনুযায়ী কাপড় প্রস্তুত করি। একাজের জন্য বিখ্যাত খলিফাপট্টি। ঈদের মৌসুমে কারিগর পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলে তারা বেশি টাকা ডিমান্ড করে। একারণে কারিগরদের বেতন বেড়ে গেছে। এসব পোশাক সেলাইয়ের গজ কাপড়ের দাম বেড়েছে। পরিবহণ খরচ বেড়েছে, বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। সুই সুতার দাম বেড়েছে। সেলাই মেশিন ও বিভিন্ন পার্টসের দামও বেড়েছে। এসব কারণেই মূলত বেড়েছে সেলাইয়ের দাম। এদিকে মিমি সুপার, মতি টাওয়ার, মতি কমপ্লেক্স, চকভিউসহ নগরীর বিভিন্ন নামিদামি মার্কেটে চড়া দামে ঈদ পোশাক সেলাই করা হচ্ছে। শুধু নারীদেরই নয়, পুরুষদের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি সেলাইয়ের দাম বেড়েছে আকাশ ছোঁয়া। মিমি সুপার মার্কেটে মেয়েদের একটি নরমাল থ্রি-পিচ সেলাই হচ্ছে ৪০০ টাকায়, নেট, টিস্যু, জর্জেট কাপড়ের থ্রি-পিচগুলো সেলাইয়ের দাম ৫০০-৭৫০ টাকা পর্যন্ত। একই চিত্র দেখা যায় চকবাজারের কেয়ারি, চকভিউ, মতি টাওয়ার, মতি কমপ্লেক্সেও। চকভিউ মার্কেটের তরুণীতে একটি সিল্কের থ্রি-পিচ সেলাই ৭০০ টাকা। গাউন ৫০০- ১২০০ টাকার বেশি দামে সেলাই হচ্ছে। কুটি ৪০০-৮০০ টাকা। মিমি সুপারের নিউ মাস্টার টেইলার্সের নরমাল একটি থ্রি-পিচ ৪৫০ টাকায় সেলাই হচ্ছে আবার কাপড়ের মান বেধে হাজার ১২শ টাকায়ও সেলাই হচ্ছে বিভিন্ন পোশাক। আবার এখন সিরিয়াল নেই বলে বেশি টাকার বিনিময়ে অর্ডার নিচ্ছেন অনেকে।
ছেলেদের পোশাকে দেখা যায়, নগরীর বিভিন্ন স্থানে এলিগেঞ্জের শাখাগুলোতে একটি শার্ট সেলাই রাখছে ৪৮০-৫০০ টাকায়। প্যান্ট সেলাইয়ের দাম রাখছে ৫৮০-৬০০ টাকায়। সানমারে ‘বড় সাহেব’এ শার্ট ৬০০ টাকা, প্যান্ট ৭৫০ টাকা সেলাই রাখছে। খাজা টেইলার্সও একই দাম রাখছেন ক্রেতাদের থেকে। এছাড়া এসব শোরুমে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা দরে সেলাই হচ্ছে পাঞ্জাবি।
পাশাপাশি বিভিন্ন অলিগলিতেও নরমাল থ্রি-পিসগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকায়, কাপড়ের মান ভেদে ৫০০ টাকা পর্যন্ত রাখছেন তারা।
দামের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কাস্টমাররা বলেন, ঈদের এ সময়ে ব্যবসায়ীরা যে যেভাবে পারছে জনগণকে জবাই করছে। সবাই যেন লুটের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সেলাইয়ের দাম বাড়ায় সেলাই করা কাপড়ও কম কিনছেন অনেকে।
তাসলিমা ও ঊর্মি নামের দুই বান্ধবী মিমিতে জামা সেলাই করতে আসেন। দাম নিয়ে অনেকক্ষণ দোকানির সাথে বাড়াবাড়ি করেন তারা। কিন্তু এতে কোন লাভ হয়নি। শেষে দোকানির চাহিদা অনুযায়ী তাদের কাপড় সেলাই করতে দিতে হয়েছে। এসময় তারা বলেন, যেভাবে সেলাইয়ের দাম বেড়েছে এখন দেখছি নিজেদেরই সেলাইয়ের কাজ শিখতে হবে। একটা থ্রি-পিচ সেলাইয়ের টাকা দিয়ে আরো দুইটা থ্রি-পিচের কাপড় কেনা যাবে।
পূর্বকোণ/পিআর