চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ত্রিপুরা পল্লীর শিশুদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিলেন জেলা প্রশাসক

নিজস্ব সংবাদদাতা , হাটহাজারী

২৫ আগস্ট, ২০১৯ | ২:১৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন, সে স্বপ্ন কোন জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে নয়। কোন জনগোষ্ঠীকে পেছনে ফেলে আমরা উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারব না। সবার জীবনমানের উন্নতি ঘটলেই তবে আমরা এদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত করতে পারব। ত্রিপুরাপল্লীর উন্নয়নও এই স্বপ্নের মধ্যেই আছে। গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় হাটহাজারী উপজেলার উদালিয়া এলাকার দুর্গম মোনাই ত্রিপুরা পল্লীতে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার মান উন্নয়নে জেলা প্রশাসক প্রাথমিক শিক্ষা বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ডিসি ইলিয়াস আরো বলেন, ‘গত বছর মোনাই ত্রিপুরা পল্লীতে হাম রোগে আক্রান্ত হয়ে চারজন শিশু মারা গেল। তখন আমি তাৎক্ষণিকভাবে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দিলাম যে, মোনাই ত্রিপুরাপল্লী আর অবহেলিত থাকবে না। আগামী চার বছরের মধ্যে এ দুর্গম জনপথের উন্নয়ন করা হবে। হাটহাজারী উপজেলা নিবার্হী অফিসারের মাধ্যমে দুর্গম এ পল্লীতে যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। তার উদ্যোগে এ পল্লীর বাচ্চাদের লেখাপড়ার জন্য একটি স্কুল তৈরি করা হয়েছে যা সত্যিই অবিশ্বাস্য। দুর্গম

মোনাই ত্রিপুরাপল্লীতে এরকম সুন্দর একটি স্কুল হবে, এত সুন্দর রাস্তা হবে এটা কিন্তু বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত কেউ কল্পনা করেননি। এখানে সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্য সৌর বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, সুপেয় পানিরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিনামূল্যে শিক্ষাসামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে’। আমরা আমাদের কথা রেখেছি।

তুমুল বৃষ্টির মধ্যেই জেলা প্রশাসক অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের সন্তানদের স্বাস্থ্য ও লেখাপড়ার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। যে বিদ্যালয়টি তৈরি করা হয়েছে সেখানে তাদেরকে নিয়মিত পাঠাবেন। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে এখান থেকে হাইস্কুল হয়ে পর্যায়ক্রমে তারা কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে যাবে। আমি স্বপ্ন দেখি একদিন এ পল্লীর একজন শিশূ সুশিক্ষিত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে, আমার মত কোন এক জেলার জেলা প্রশাসক হবে। আমি যতদিন জেলা প্রশাসক থাকি আপনাদের যেকোন সমস্যা ও লেখাপড়া সংক্রান্ত আমি সবকিছুর দায়িত্ব আমি নিলাম। টাকা ও কোন কিছুর অভাবে যেন কারো লেখাপড়া ব্যাহত না হয় সেদিকটা আমি আমার পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি। জেলা প্রশাসক বর্ষা শেষে ত্রিপুরা পল্লীর প্রবেশের মূল সড়কটি ব্রিকসলিং, একটি খেলার মাঠ ও উপাসনার জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি মন্দির নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, আমরা সমতলে কিংবা শহরে যেভাবে জীবনযাপন করছি ত্রিপুরাপল্লীর অধিবাসীরাও সেভাবে জীবনযাপন করবেন। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক পল্লীর ৬০ জন শিশুকে ১ হাজার টাকা করে নগদ শিক্ষাবৃত্তি এবং চকলেট উপহার দেন।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোর্শেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্যে রাখেন সাংবাদিক কেশব কুমার বড়ুয়া, ফরহাদাবাদ ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আলি আকবর, ত্রিপুরা পাড়ার সর্দার সচিন ত্রিপুরা প্রমুখ। এসময় হাটহাজারী সহকারী কমিশনার (ভূমি) স¤্রাট খীসা, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব হোসেন, সাংবাদিক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, স্থানীয় ইউপি সদস্য, ত্রিপুরা পাড়ার অধিবাসী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ সমাজের বিভিন্নস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট