চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু সর্বোচ্চ চট্টগ্রামে

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২৪ মার্চ, ২০২৩ | ৪:১১ অপরাহ্ণ

পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশে শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা। ২০২২ সালে এ জেলায় ৭৩ জন পানিতে ডুবে মারা যায়। এছাড়াও বিভাগের দিক থেকেও সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। একই সময়ে এ বিভাগের বিভিন্ন জেলা- উপজেলায় সর্বোচ্চ ২৮২ জন পানিতে ডুবে মারা যায়।
গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহযোগিতায় মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে গণমাধ্যম উন্নয়ন ও যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘সমষ্টি’ এ তথ্য নিশ্চিত করে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য মতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ২০২২ সালে মৃত্যুহারে চট্টগ্রাম বিভাগের পরে রয়েছে রংপুর বিভাগ। এ বিভাগে পানিতে পড়ে মৃত্যু হয়েছে ১৬০ জন। এছাড়া ঢাকায় ১৪৯ জন, বরিশালে ১৩১, রাজশাহীতে ১১০, ময়মনসিংহে ১০৪, খুলনা ১০৩ জন ও সিলেট বিভাগে ৯১ জন মারা যায়। সারাদেশে পানিতে ডুবে মৃতদের ৯৪ শতাংশেরই বয়স ১৮ বছরের নিচে। মৃত্যুর দিক থেকে এগিয়ে আছে ছেলে শিশুরা। বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর প্রায় ৬৮ শতাংশ ঘটে সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টার মধ্যে। যে সময়ে পরিবারের সদস্যরা বিশেষ করে মায়েরা গৃহস্থালি কাজে ব্যস্ত থাকেন। মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ঘর থেকে মাত্র ২০ গজ দূরত্বের মধ্যে। সমষ্টি’র দেয়া তথ্যে গত ১ বছরের হিসাবে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে আগস্ট মাসে। গত বছর এ মাসে সারাদেশে ১৬২ জন পানিতে ডুবে মারা যায়। এছাড়া জুন মাসে ১৪৩ জন এবং মে ও সেপ্টেম্বর মাসে ১২৮ জনের মৃত্যুর খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মীর মাসরুর জামান বলেন, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন মানুষ পানিতে পড়ে মারা যায়। এরমধ্যে মাত্র পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুই মারা যায় ৩০ জন। দেশে ২০২২ সালে পানিতে ডুবে নয় বছরের কম বয়সী শিশু মারা গেছে ৮১ শতাংশ। যা আগের বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি। এছাড়াও শতকরা ৭১ শতাংশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে সাঁতার না জানার কারণে। মৃত্যুর আরো একটি প্রধান কারণ প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে মানুষের ধারণা না থাকা। গ্রামাঞ্চলে এ নিয়ে মানুষের মধ্যে নানারকম কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। তারা সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে কুসংস্কারের দিকে ঝুঁকে। এতে মুত্যৃ হার বেড়ে চলেছে।
তিনি বলেন, পানিতে ডুবে মারা যাওয়া এ শিশুদের মধ্যে মাত্র তিন ভাগ শিশু বেঁচে আসে। কিন্তু এ শিশুদের মধ্যে বেশিরভাগই পরবর্তীতে প্রতিবন্ধী হয়ে জীবন কাটায়। এদের মধ্যে কেউ কানে শোনে না, কেউ বা আবার মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যায়।
গেøাবাল হেলথ এডভোকেসি ইনকিউবেটর কমিউনিকেশন ম্যানেজার মো. সারোয়ার ই আলম বলেন, গতবছর এ সময়ে সারাদেশে ৪৯টি পরিবারের ৯৮ জন সদস্য পানিতে ডুবে মারা যায়। এদের মধ্যে জমজ শিশু ছিলো ১৪ জন। এছাড়া শিশুর সঙ্গে ভাই অথবা বোনসহ ৪২ জন, চাচাতো, মামাতো বা খালাতো ভাই বা বোনসহ ৪২ জন মারা যায়।
পানিতে ডুবে মৃত্যুর প্রতিকার : মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষার আওতায় নেয়া প্রকল্পের অধীনে দেশের আট বিভাগের ১৬টি জেলায় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের সুপারিশগুলো হল-জরুরি ভিত্তিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে জাতীয় কৌশল প্রণয়ন করা ও ৫ বছর মেয়াদি পরিকল্পনায় ডুবে মৃত্যর বিষয় যোগ করা। এসময় এ শিশুদের জন্য ‘আঁচল’ (সমম্বিত শিশু বিকাশ ও দিবাযন্ত্র কেন্দ্র) ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন এন্ড রিসার্চ (সিআইপিআরবি) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ‘আঁচল’ শিশুদের সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া তাদের সাঁতার শেখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এসব উদ্যোগ সফলভাবে মানা গেলে ও পরিবারের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট