চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

মাসে ২৫ লাখ টাকার চাঁদাবাজি

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ মার্চ, ২০২৩ | ১:২২ অপরাহ্ণ

দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে বন্দরনগরীতে প্রবেশের দ্বার শাহ আমানত সেতুর বশিরুজ্জামান চত্বর। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরীর প্রবেশ মুখ হওয়ায় এই চত্বরে যানজট, জনজট লেগেই থাকে। ভোগান্তিতে পড়েন দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটক এবং ঘরমুখো মানুষ। এরমধ্যেই বশিরুজ্জামান চত্বরে সড়ক দখল করে বসানো হয়েছে ম্যাক্সিমা অটো টেম্পোর স্ট্যান্ড। নতুন ব্রিজ থেকে টাইগারপাস রোডে চলাচল করে এসব টেম্পো।  অভিযোগ রয়েছে- মোটা অংকের চাঁদাবাজি করার জন্যই নতুন ব্রিজ থেকে টাইগারপাস রোডে টেম্পো চলাচলের রুট পারমিট দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম অটো টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়ন নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে টেম্পো চালক-মালিকদের কাছ থেকে মাসে ২৫ লাখ টাকার বেশি চাঁদাবাজি করা হয়। ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জানে আলমের নেতৃত্বে এই চাঁদাবাজি চলে। কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলে বা হিসাব চাইলে তার উপর লাঠি-সোটা নিয়ে হামলা করে আলমের লোকজন।  অনুসন্ধানে জানা গেছে- নতুন ব্রিজ থেকে টাইগারপাস রোডে চলাচলের জন্য রুট পারমিট রয়েছে ১৪২টি ম্যাক্সিমা অটো টেম্পোর। তবে চলে প্রায় তিন শতাধিক। একটি টেম্পো থেকে দৈনিক ২৫০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। এভাবে দিনে ৭৫ হাজার এবং মাসে প্রায় ২৩ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এছাড়া ‘পুলিশ কনভিন্সের’ নামে পারমিট থাকা গাড়ি থেকে মাসিক ১ হাজার ও পারমিট ছাড়া গাড়ি থেকে মাসিক ২ হাজার টাকা নেওয়া হয়। এভাবে চাঁদা আদায় হয় আরও প্রায় ৪ লাখ টাকা।

ইউনিয়নের নেতারা জানান, জানে আলমের হয়ে সড়কে টাকা তুলেন আট জন। এরমধ্যে নতুন ব্রিজ এলাকায় টাকা নেন কাশেম, গিয়াস ও হিরো। কোতোয়ালী মোড়ে মসজিদের সামনে টাকা নেন লিটন, রুবেল ও নাছির। অন্যদিকে নিউমার্কেট দোস্ত বিল্ডিংয়ের সামনে টাকা নেন সেন্টু ও শাহেদ। এই আট জনের মধ্যে গত বছর শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে র‌্যাবের হাতে সড়কে চাঁদাবাজির টাকাসহ গ্রেপ্তার হন কাশেম ও গিয়াস। তারা জেল থেকে বের হয়ে ফের জানে আলমের হয়ে চাঁদাবাজি করছে।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম অটো টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী ইমামসহ পাঁচজন চালক এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছেন। লিখিত এই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়- জানে আলমের এসব অবৈধ কাজে নিরব ভূমিকা পালন করছে পুলিশ। জানে আলম প্রতিমাসে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর বাকলিয়া ও ট্রাফিক ইন্সপেক্টর কোতোয়ালীকে মাসে এক লাখ করে দুই লাখ টাকা মাসোহারা দেন। তাই তারা কোনো ব্যবস্থা নেন না।

অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আলী ইমাম বলেন, আমি চালকদের কষ্ট ও নির্যাতন সইতে না পেরে অভিযোগ করেছি। চালকদের কাছ থেকে দৈনিক যে টাকা তোলা হয় এবং মাস শেষে যে টাকা আদায় করা হয়- সেই টাকার কোনো হিসাব পাই না আমরা। এসব বিষয়ে কেউ কথা বললে তাকে জানে আলমের লোকজন তার অফিসে নিয়ে মারধর করেন। মারধরের শিকার হওয়া লোকজন থানায় জানে আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গেলে অভিযোগও গ্রহণ করা হয় না।

তবে আলী ইমামের এসব অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন বাকলিয়ার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মনিরুজ্জামান। তিনি এ বিষয়ে বলেন, আমি দু’একদিন হলো যোগদান করেছি। এসব বিষয়ে আমি কিছু জানি না। সড়কের ওপরে স্ট্যান্ড বসানোর বিষয় নিয়ে ডিসি স্যারের সাথে কথা বলবো। তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবো। কোতোয়ালীর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জিয়াউল হকও টাকা নেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। তবে পারমিট ছাড়া অন্য সড়কের গাড়ি চলাচলের বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেননি।

চট্টগ্রাম অটো টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জানে আলম বলেন, আমার লাইনে কোন টাকা তোলা হয় না। এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। লাইনে পারমিট আছে ১৪২টি গাড়ির। চলে ১২০টি। তবে টোকেনের মাধ্যমে টাকা নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান। এমন তথ্য তার জানা নেই বলে উল্লেখ করেন।

বাকলিয়া থানার ওসি আব্দুর রহিম পূর্বকোণকে বলেন, জানে আলমের সাথে সখ্যতার প্রশ্নেই আসে না। তার বিরুদ্ধে আমার থানা এলাকায় একটা মারামারির মামলার তদন্ত চলেছে, তদন্ত শেষ হলে চার্জশিট দেয়া হবে। এছাড়া সে একজন চিহ্নিত অপরাধী।

এদিকে, জানে আলমের বিরুদ্ধে নগরীর কোতোয়ালী, বাকলিয়া ও জেলার চন্দনাইশ থানায় চারটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রুবেল হাওলাদার। পিসিপিআর’র (প্রিভিয়াস কনভিকশন প্রিভিয়াস রেকর্ড) তথ্য যাচাই করে এই তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

পূর্বকোণ/পিআর  

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট