চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

লবণ আগ্রাসনে উৎপাদন ধস

মোহাম্মদ আলী 

২২ মার্চ, ২০২৩ | ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ

কাপ্তাই লেক থেকে পানি ছাড়া বন্ধ থাকায় ওয়াসার পানিতে অসহনীয়মাত্রায় লবণ মিলছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জোয়ারে পানি তোলা বন্ধ করে দেওয়ায় দৈনিক ৫ কোটি লিটার উৎপাদন কমেছে ওয়াসার। এ অবস্থায় রেশনিং পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ দিচ্ছে সরকারি সেবা সংস্থাটি। বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ওয়াসা সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ওয়াসা মোহরা পানি শোধনাগার ও মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগারের মাধ্যমে হালদা থেকে দৈনিক ১৮ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করে সরবরাহ করে। কিন্তু গত ২০ থেকে ২৫ দিন ধরে হালদার পানিতে অতিরিক্ত লবণ পাওয়া যাচ্ছে। এতদিন দৈনিক এক হাজার থেকে দেড় হাজার মিলিগ্রাম পার লিটার লবণ পাওয়া গেলেও মারাত্মক রূপ ধারণ করে ২০ মার্চ থেকে। এ দিন এক লাফে হালদার পানিতে তিনগুণের মতো লবণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। গত দুইদিনে মোহরা পানি শোধনাগারে ২৯০০ মিলিগ্রাম পার লিটার এবং মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগারে ১৮০০ মিলিগ্রাম পার লিটার লবণের উপস্থিতি মিলেছে। এতে জোয়ারের সময় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পানি উৎপাদন বন্ধ রাখছে ওয়াসা। এ অবস্থায় পানি উৎপাদন কমে গেছে সেবা সংস্থাটির। এতদিন ওয়াসার দৈনিক পানি উৎপাদন হতো ৪৭ থেকে ৪৮ কোটি লিটার। কিন্তু উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ায় এখন নগরীতে ওয়াসা পানি সরবরাহ দিচ্ছে ৪১ থেকে ৪২ কোটি লিটার। পরিস্থিতি সামাল দিতে নগরীতে রেশনিং পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ দিচ্ছে ওয়াসা। তাতে সরবরাহে ব্যাঘাত হচ্ছে কাট্টলী, পতেঙ্গা, মোহরা, ফিরোজশাহ, বিশ^কলোনি, সাগরিকাসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা।

 

প্রসঙ্গত, হালদা নদীর পানিতে স্বাভাবিক লবণের (ক্লোরাইড) মাত্রা থাকে প্রতি লিটারে ২০ থেকে ৩০ মিলিগ্রাম। তবে বাংলাদেশের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী সহনীয় মাত্রা হচ্ছে ৬০০ মিলিগ্রাম পার লিটার।

 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘কাপ্তাই লেক থেকে পানি ছাড়া হ্রাসের কারণে  হালদার পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণ পাওয়া যাচ্ছে। গত ২০ ও ২১ মার্চ হালদার পানিতে সর্বোচ্চ ২৯০০ মিলিগ্রাম পার লিটার লবণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মোহরা পানি শোধনাগারে ২৯০০ মিলিগ্রাম পার লিটার এবং মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগারে ১৮০০ মিলিগ্রাম পার লিটারে লবণের উপস্থিতি মিলেছে। অতিরিক্ত লবণের কারণে জোয়ারের সময় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পানি উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তাতে উৎপাদন কমে যাওয়ায় নগরীতে পানি সরবরাহে রেশনিং করা হচ্ছে।’

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাধারণত শুষ্ক মওসুম মার্চ-এপ্রিল মাসে হালদাতে লবণ পানির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এ বছর মার্চে লবণের অতিরিক্ত আগ্রাসন বেড়েছে। সুতরাং এটি নদীর জন্য একটি অশনি সংকেত সৃষ্টি হয়েছে। নদীতে লবণ থাকলে ওয়াসার উৎপাদন ব্যাহত হয়। সমস্যায় পড়েন ওয়াসার গ্রাহকরা।

 

সূত্র আরো জানায়, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৫টি ইউনিট রয়েছে। এতদিন একটি ইউনিট চালু থাকলেও ২০ মার্চ থেকে এটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে বঙ্গোপসাগরের লবণ পানি জোয়ারের সময় কর্ণফুলী নদী হয়ে হালদা প্রবেশ করছে। মোহরা পানি শোধনাগার ও মদুনাঘাট  (শেখ রাসেল) পানি সরবরাহ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিদিন ৯ কোটি লিটার করে মোট ১৮ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াসার পানিতে লবণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে সমস্যায় পড়েন গ্রাহকরা।

 

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ওয়াসা নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ৪৮ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে। এরমধ্যে হালদা নদী থেকে দুইটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৮ কোটি লিটার উত্তোলন করে। অবশিষ্ট পানি সরবরাহ হয় গভীর নলকূপ ও কর্ণফুলী (শেখ হাসিনা) পানি প্রকল্প দুইটির মাধ্যমে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হালদা নদীর পানিতে অস্বাভাবিকভাবে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে শুষ্ক মওসুমে কাপ্তাইলেকে পানির প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থায় মোহরা ও মদুনাঘাট পানি শোধনাগারের মাধ্যমে এ লবণ পানি পৌঁছে যাচ্ছে নগরবাসীর কাছে।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট