চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

২০ পণ্যের ৩৮ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে শুরু হচ্ছে রমজান

ইফতেখারুল ইসলাম 

২২ মার্চ, ২০২৩ | ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ

বছরের ব্যবধানে ২০টি পণ্যের ৩৭.৭৫ শতাংশ বাড়তি দাম নিয়ে পবিত্র রমজান মাস শুরু করতে যাচ্ছে ভোক্তারা। রমজানের অতিপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের মধ্যে কোন কোনটির দাম ১০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সূত্রে এতথ্য জানা গেছে।

 

সরকারি সংস্থা টিসিবি’র তথ্যমতে, বছরের ব্যবধানে বাজারে খোলা আটার (সাদা) দাম ৫৭.৩৩ শতাংশ বেড়েছে।  এক বছর আগে এই আটার দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। যা গতকাল বিক্রি হয়েছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। খোলা ময়দার দাম ৩০.২১ শতাংশ বেড়ে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা এক বছর আগে ছিল কেজি ৪৬ থেকে ৫০ টাকা। সয়াবিন তেল (বোতল) ১ লিটার এক বছর আগে ছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। যা বেড়ে হয়েছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১২.৩১ শতাংশ। দেশি মসুর ডালের দাম ৮.১৬ শতাংশ বেড়ে কেজি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা হয়েছে। ছোলার দাম (মানভেদে) কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। যা এক বছর আগে ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৭.২৪ শতাংশ। ভারতীয় পেঁয়াজ কেজি ৬.২৫ শতাংশ বেড়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা হয়েছে। শুকনা মরিচের(দেশি) দাম ১২৭.০৩ শতাংশ বেড়ে কেজি ৪০০ থেকে ৪৪০ টাকা হয়েছে। রসুন (আমদানি) মানভেদে ২০.৮৩ শতাংশ বেড়ে কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা হয়েছে। আদা (আমদানি) ১১১.১১ শতাংশ বেড়ে কেজি ১২০ থেকে ২৬০ টাকা হয়েছে। রুই মাছের দাম ৩৩.৩৩ শতাংশ বেড়ে কেজি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা হয়েছে। মুরগি (ব্রয়লার) ৬২.৫ শতাংশ বেড়ে কেজি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা হয়েছে। মার্কস গুঁড়ো দুধের দাম ৩০.৫৮ শতাংশ বেড়ে কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা হয়েছে। চিনির দাম ৪৩.৬৭ শতাংশ বেড়ে কেজি ১১২ থেকে ১১৫ টাকা হয়েছে। খেজুরের দাম (সাধারণ মান) ২৬ শতাংশ বেড়ে কেজি ১৮০ থেকে ৪৫০ টাকা হয়েছে। ডিমের (ফার্ম) দাম ২৪.৩২ শতাংশ বেড়ে হালি ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা হয়েছে। শসার দাম ১০ শতাংশ বেড়ে কেজি ৪০ থেকে ৭০ টাকা হয়েছে। কাঁচা মরিচের দাম ৩৮.৮৯ শতাংশ বেড়ে কেজি ৯০ থেকে ১৬০ টাকা হয়েছে। লম্বা বেগুনের দাম ৬৩.৬৪ শতাংশ বেড়ে কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা হয়েছে।

 

গরুর মাংসের কেজি ছিল ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা। বছরের ব্যবধানে তা ১৫ শতাংশ বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে কেজি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। বছরের ব্যবধানে খাসির কেজি ১৬.৬৭ শতাংশ বেড়ে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা হয়েছে।

 

জানতে চাইলে কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন পূর্বকোণকে বলেন, করোনার লকডডাউন পরবর্তী সময় থেকে নিত্যপণ্যের বাজারে ক্রমাগত উর্ধ্বগতিতে ১৮ কোটি মানুষের জীবন জীবিকা হুমকির সম্মুখীন। ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, এলসি সংকটসহ নানা অজুহাত দিলেও অতিমুনাফার কারণে এভাবে পাইকারি হারে দামবৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় সামিল হলো। একটা সময় চিনি, ছোলা, সয়াবিন ও পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি হলেও এখন এমন কোন পণ্য পাওয়া যাবে না যার দাম বাড়েনি। বিষয়টিকে অতি মুনাফা লাভের সামাজিক সংক্রমণ ঘটেছে বলা যায়। কারণ বিভিন্ন সময় ভোগ্যপণ্য নিয়ে কারসাজি যারা করেছেন তাদেরকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চিহ্নিত করলেও তাদের বিরুদ্ধে কার্যত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা গেলে নিত্যপণ্য মূল্যের বাজারে আগুন নিভানো সম্ভব হতো। আর এ গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে সরকারের কালক্ষেপণ সব অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে।

 

তিনি বলেন, তবে দাম নির্ধারণ সরকারি রেগুলেটরি অথরিটির অদক্ষতা ও আমদানিসহ কিছু পণ্যের নিয়ন্ত্রণ মাত্র কয়েকটি করপোরেট গ্রুপের হাতে চলে যাওয়ায়, তারা তাদের ইচ্ছামতো মূল্য নির্ধারণসহ সরবরাহ ও জোগান নিয়ন্ত্রণ করছে। এটা দেশে ন্যায্য ব্যবসার ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিবন্ধক। তাই ট্যারিফ কমিশন, প্রতিযোগিতা কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। তারা কিছু ব্যবসায়ীদের সাথে যোগসাজসে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করলে ভোক্তা স্বার্থ ভূলুণ্ঠিত হবে। ভোক্তাদের প্রতি ন্যায় বিচার করা হলে নিত্যপণ্যের বাজার এভাবে দীর্ঘদিন অস্থির থাকতো না।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট