চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

থান কাপড়ের দোকানে ক্রেতার আনাগোনা রোজার আগেই

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২১ মার্চ, ২০২৩ | ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ

ঈদকে কেন্দ্র করে ফি বছর শবে বরাতের পরই শুরু হয় ঈদের পোশাক কেনাবেচা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এরমধ্যে নগরীর শপিংমলগুলোতে শুরু হয়ে গেছে থান কাপড় বেচাকেনা।

 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাসহ আটটি সুনির্দিষ্ট কারণে এবার ঈদের পোশাকের বাজারে প্রভাব পড়েছে। উল্লেখ্যযোগ্য আট কারণে এবার কাপড়ের দাম বেড়েছে।চকবাজার, টেরিবাজার এবং রিয়াজউদ্দিন বাজার ছাড়াও চারটি মার্কেট ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে এমনই ধারণা মিলেছে।

 

ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এবার ঈদের পোশাকের দাম বেড়েছে বৈশ্বিক করোনাভাইরাস ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে। চায়না, পাকিস্তান ও ভারত থেকে তুলা, সুতা আমদানি করা বন্ধ ছিল। এতে সুতার দাম বেড়েছে। ডলাদের দাম বাড়তি হওয়ায় বাইরের কাপড় আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। আগের চেয়ে কাপড়ের এলসি খোলার প্রবণতা কমেছে। দেশীয় বাজারে পরিবহন খরচ বেড়েছে। শ্রমিক ও দোকানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে। এছাড়া ট্যাক্স এবং বিদ্যুতের দামও বেড়েছে। এসব কারণে এবার ঈদের কাপড়ের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, ঈদকে কেন্দ্র করে এসব শপিংমলগুলোতে নানা ডিজাইনের গজ কাপড় এসেছে। অনেকে এখনই শুরু করেছেন ঈদের কেনাকাটা। প্রতিটি দোকানেই চার-পাঁচজন করে নারী ক্রেতা কেনাকাটায় ব্যস্ত। বিকেলে বেচাকেনা আরো বাড়ছে। নেটের মধ্যে জরি সুতার কাজ করা কাপড়গুলোর গজ বিক্রি হচ্ছে ৪০০- ৮০০ টাকায়। ভ্যালভেট, শিফনের কাপড় বিক্রি হচ্ছে ৫০০- ৭০০ টাকায়। বাইরের সুতির কাপড়গুলো বিক্রি হচ্ছে ২৫০- ৫০০ টাকায়। এছাড়া সুতি এক কালারের নরমাল থান কাপড়গুলো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়।

 

চকবাজার মতি টাওয়ারের সানজিদা ফ্যাশন’র ম্যানেজার রুপন দত্ত বলেন, গত বছর সোহেল বয়েলের এক গজ কাপড় ছিল ৭০ টাকা। সেই কাপড় এখন ৮০ টাকা হয়েছে। আমরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজার থেকে কাপড় এনে থাকি। অন্যান্য বছর এসব জায়গা থেকে একটি কাপড়ের গাইট চট্টগ্রামে আমাদের মতি টাওয়ার পর্যন্ত আসতে খরচ হত ৩০০ টাকা। এখন সেই খরচ বেড়ে হয়েছে ৭০০ টাকা। এখানে কাপড়ের বাড়তি দাম ছাড়াও শুধু পরিবহন খচর, শ্রমিক খরচ, ট্যাক্সের টাকা বেড়েছে।

 

সেন্ট্রাল প্লাজার চ্যালেঞ্জ নামের কাপড়ের দোকানের এক বিক্রেতা বলেন, করোনাভাইরাসের ধাক্কা কাটিয়ে উঠার আশা ছিল মালিকদের। তবে মনে হচ্ছে ঊর্ধ্বমুখী দ্রব্যমূল্যের প্রভাব ঈদের শপিংয়ে পড়ছে। কারণ মানুষ কাপড় কিনতে আসছে, দামি কাপড়গুলো নেড়েচেড়ে দেখে কোনো রকমে মোটামুটি দামের গজ কাপড়গুলো কিনে নিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু ঈদের আগে সেলাইয়ের একটি বিষয় আছে নারীরা এসময়ই কাপড় কেনা শুরু করেন। তাই এসময় মার্কেটে খুব ভিড় হয়। কিন্তু এবার কাপড় বিক্রি শুরু হয়েছে ঠিকই, তবে বেশি দাম থেকে অল্প দামি কাপড়ই বিক্রি হচ্ছে বেশি। অন্যান্য বছর এসময় দেখা যেত এক একজন ক্রেতা তিন-চারটা কিংবা তারও বেশি থান কাপড় কিনতেন। সেটি এখন এক বা দুটির মধ্যে শেষ করছেন।

 

টেরিবাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, ঈদের বেচাকেনা নিয়ে যেভাবে আশা করেছিলাম সেভাবে এখনো বেচাবিক্রি শুরু হয়নি। সামনে একটু বাড়বে আশা করছি। তবে করোনার লোকসান কাটিয়ে উঠা কতটা সম্ভব হতে তা জানি না। কারণ কাপড়ের দাম অনেক বেড়েছে। এ মুহূর্তে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খরচ এতো বেড়েছে যে, সংসার চালিয়ে বিলাসিতা করার কথা ভাবছেন না।

 

সেন্ট্রাল প্লাজায় শপিং করতে আসেন নুরনাহার ও লিপি। তারা বলেন, এখনি যদি কাপড় না কিনি, পরে সেলাই করতে দিতে পারবো না। এসময় আবার কাপড়ের দামও একটু কম থাকে তাই শপিং করতে এসেছি। কিন্তু এসে দেখি এখনই কাপড়ের দাম অনেক বেড়ে গেছে। তবে এবার বেশি কাপড় কিনছি না। তিন মেয়ের জন্য তিনটা মোটামুটি দামের কাপড় কিনেছি। আরো দুটি করে তিনজনের জন্য ছয়টা নরমাল কাপড় কিনেছি। নিজের জন্য না পারতে একটি থ্রিপিস কিনেছি। রোজায় আর বের হব না।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট