চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি

ধোপাছড়ি দিয়ে পায়ে হেঁটে এপ্রিলের মাঝামাঝি ভারতের দেমাগ্রীতে পৌঁছি

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ

১৪ মার্চ, ২০২৩ | ১২:৪৮ অপরাহ্ণ

১৯৭১ সালে আমি এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণে পরীক্ষা না দিয়ে দেশের স্বাধীকার আন্দোলনে বেরিয়ে পড়ি। প্রথমে ধোপাছড়ি দিয়ে পায়ে হেঁটে টেকার পাহাড়, জোয়ানছড়ি, ঝারুলছড়ি হয়ে ২ সপ্তাহ পর এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি ভারতের দেমাগ্রীতে পৌঁছি। সেখানে একটি স্কুলে শরণার্থী ক্যাম্পে ডেল্টা কোম্পানি কমান্ডার ডা. নন্দলাল সিং এর সাথে ৩১ সদস্যের গ্রুপের সাথে যোগ দিই। সেখানে ১০ দিন অবস্থান করি। বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আমার সাথে মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলী হিরুসহ ১০ জন ছিলেন। তাছাড়া প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা আখতারজ্জামান চৌধুরী বাবু, এম এ মান্নান, ব্যাংকার নুর আহমদসহ আনোয়ারার স্বনামধন্য একজন চেয়ারম্যানও ছিলেন। তারা কলকাতার ক্যাম্পে চলে যান। মে মাসের শেষের দিকে মিজুরামে লুংলে মিলিটারিং একাডেমি হেড কোয়াটারে আরো দেড় মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে জুন মাসের শেষের দিকে কোম্পানি কমান্ডারের দায়িত্ব নিয়ে আসামের শিলচর, রামডিঙ্গা, গুহাটি থেকে ট্রেনে করে ৪ দিন যাতায়াতের সময় আর্মিদের বিভিন্ন কেন্দ্রে ট্রানজিটে রাত যাপন করি। পরে একদিন রাতে ২০ জন করে আমাদেরকে সিলেটের করিমগঞ্জ মেজর সিআর দত্তের হেড কোয়াটারে নিয়ে যায়। শীবচর ট্রেন স্টেশন থেকে রাত ১২ টায় মেঘালয়ে চলে যাই।

ডিসেম্বরের শুরুতে ভারতের শ্রীনগর হয়ে ফটিকছড়ি দরবার শরীফের পাশে এক খামারে অবস্থান নিই। দরবারে রমজানের ঈদের নামাজ আদায় করেছিলাম, সেখানকার মানুষ আমাদেরকে জরাজীর্ণ কাপড় দেখে খুব সমাদর করেছিলেন এবং আমাদেরকে জড়িয়ে ধরলে আমাদের কান্না এসেছিল। ঐসময় আমাদের পূর্বের একটি গ্রুপের সাথে সাতকানিয়ার স্বপন চৌধুরী ছিলেন। তাকে পাকিস্তানিরা তুলে নিয়ে শহীদ করেছিল।

আমরা ফটিকছড়ি থেকে রাউজান হয়ে রাত্রিবেলা পায়ে হেঁটে ভা-ালজুড়ি ঘাট হয়ে কর্ণফুলি পাড়ি দিয়ে বোয়ালখালীর করলডেঙ্গা হয়ে স্কট দিয়ে পাচুরিয়া এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক পাড় হয়ে পটিয়ার বুধপুরা চলে আসি। সেখানে প্রফেসর মনির আহমদের তত্ত্বাবধানে আশ্রয় গ্রহণ করি।

১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে পটিয়া থানা থেকে আমার নেতৃত্বে একটি গ্রুপ জোয়ারা সুরেন্দ্র উকিলের বাড়িতে এক প্লাটুন মিত্র বাহীনিসহ ক্যাম্প করে বিভিন্ন এলাকায় অপারেশন চালাই। এসময় পটিয়ার বর্তমান চন্দনাইশের হাজির পাড়ায় অলি সাহেবের বাড়ির সামনে পুকুর থেকে হিন্দুদের লুন্ঠিত পিতলের তালা-বাসন, হাড়ি-পাতিল, ঘরের টিন, দরজার বিম উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকদের ফিরিয়ে দিই।

এসময় পাকিস্তানিদের দোসর এডভোকেট আহমুদুর রহমানের রাখা পাকিস্তানিদের স্বাধীনতা বিরোধী বিভিন্ন প্রচারপত্র ও কাগজপত্র ভর্তি একটি টাঙ্ক কর্নেল অলির মাটির ঘরের ২য় তলা থেকে উদ্ধার করি। ঐ সময় হাজীর পাড়ায় মেয়ে ও শিশু ছাড়া কোন পুরুষ ছিল না।

দেশ স্বাধীন হওয়ার কারণে আজ আমি দেশের সংসদ সদস্য। মুক্তিযোদ্ধারা ২০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা, বীর নিবাসসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টান্তমূলক ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের কারণে। আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণে যাওয়ার সময় জীবন নিয়ে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখিনি। স্বাধীনতার ৫১ বছর পর যখন দেশের মাটিতে মানুষের জন্য কাজ করতে পাচ্ছি এটাই আমার সান্ত্বনা এবং আনন্দের।

পূর্বকোণ/মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট