চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এরাবিয়ান খেজুরের বীজ উদ্ভাবনে কাজ করছেন একদল গবেষক। সফল হলে এটিই হবে প্রথম দেশীয় জাত

দেশেই হবে এরাবিয়ান খেজুরের চাষ!

সফল পরাগায়নের পর ফল ধরেছে এরাবিয়ান খেজুর গাছে। আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে ফল পাকার আশা

মিজানুর রহমান

১৪ মার্চ, ২০২৩ | ১২:২৯ অপরাহ্ণ

বিশ্বব্যাপী সমাদৃত এরাবিয়ান খেজুরের বীজ উদ্ভাবনের পথে একধাপ এগোলো দেশ। বন্দরনগরী চট্টগ্রামেই প্রথমবারের মতো পুরুষ ও স্ত্রী খেজুর গাছের ফুল নিয়ে সফল পরাগায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন গবেষকরা। পরাগায়নের পর ফলও এসেছে এসব গাছে। আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে ফল পাকলে দেশেই চাষাবাদের উপযোগী এরাবিয়ান খেজুরের বীজ উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে।

বাণিজ্যিকভাবে এরাবিয়ান খেজুর চাষের দ্বার খুলবে। খুলশীর কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ফল গবেষণা মাঠের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার বর্গফুট জমিতে এরাবিয়ান খেজুরের মূল্যায়ন পরীক্ষণ কার্যক্রম চলছে। গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম হারুনর রশীদের নেতৃত্বে একদল গবেষক এই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। গবেষকরা বলছেন- বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিছু জায়গায় খেজুরের চাষ হলেও সেগুলো রসের জন্য। এখন পর্যন্ত খেজুরের দেশীয় কোনো জাত নেই। এরাবিয়ান খেজুরের বীজ উদ্ভাবন করা গেলে এটিই হবে প্রথম দেশীয় কোনো জাত।

সংশ্লিষ্টরা জানান- বিশ্বের অন্তত ৪০টি দেশে খেজুর উৎপাদন হয়। তবে খেতে দারুণ সুস্বাদু এবং আকারে বড় হওয়ায় মিশর, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে উৎপাদিত এরাবিয়ান খেজুরের কদর বেশি। প্রতিবছর শুধু বাংলাদেশেই ৫০ হাজার টনের বেশি এরাবিয়ান খেজুর আমদানি করা হয়। যার আমদানি ব্যয় মেটাতে বিপুল পরিমাণ ডলার খরচ হয়। বিপুল এই চাহিদার কথা মাথায় রেখে দেশেই এরাবিয়ান খেজুরের জাত উদ্ভাবনের উদ্যোগ নেন কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকরা।
২০১৭ সালের জুলাইয়ে ২২টি এরাবিয়ান খেজুরের ‘জার্ম প্লাজম’ সংগ্রহ করেন নগরীর খুলশীর কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকরা। চারা রোপণের পাঁচ বছরের

মাথায় ২০২২ সালে পুরুষ গাছে ফুল আসে। তবে স্ত্রী গাছে ফুল না আসায় তখন পরাগায়ন করা সম্ভব হয়নি। চলতি বছর পুরুষ ও স্ত্রী- দুই ধরনের গাছেই ফুল আসে। এরপর দুই ধরনের ফুলের রেণু নিয়ে কৃত্রিমভাবে পরাগায়ন সম্পন্ন করা হয়। সম্প্রতি সেখানে প্রথমবারের মতো ফল ধরে।

খুলশী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম হারুনর রশীদ পূর্বকোণকে জানান, খেজুর গাছ ‘বায়ো-সেক্সুয়াল প্লান্ট’ প্রকৃতির। বীজ রোপণের পর ৬০-৭০ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০-৩০ শতাংশ স্ত্রী খেজুর গাছ হয়। পুরুষ গাছের ফুল আগে আসে। স্ত্রী গাছের ফুল পরে আসে। এই কারণে প্রথমে আমরা পুরুষ ফুল সংগ্রহ করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করি। পরে সেখান থেকে রেণু নিয়ে কৃত্রিমভাবে স্ত্রী ফুলে পরাগায়ন করি।

তিনি জানান, সুখবর হচ্ছে- সম্প্রতি পরাগায়নের পর প্রথমবারের মতো খেজুর গাছে ফল ধরেছে। এখন আমরা ফল আসা খেজুর গাছ মূল্যায়ন পরীক্ষণের মধ্যে রেখেছি। আশা করছি- জুন- জুলাইয়ের মধ্যে এসব ফল পাকবে। এরপর আমরা বীজ সংগ্রহের দিকে যাবো। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবো। প্রাথমিকভাবে ফল ধরাতে যেহেতু আমরা সক্ষম হয়েছি- আশা করছি দ্রুত সময়ে বীজ উদ্ভাবনেও আমরা সফল হবো।

দেশের কৃষি খাতের অনেক গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া এই গবেষক জানান, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও পুষ্টিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। খেজুরের পুষ্টিগুণ সবচেয়ে বেশি। এরাবিয়ান খেজুর খেতে সুস্বাদু, আকারে বড় হওয়ায় এর চাহিদা বেশি। একেকটি এরাবিয়ান খেজুরের শাখা থেকেই ১৫-২০ কেজি খেজুর পাওয়া সম্ভব। তাই আমরা এই খেজুর থেকেই নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজ করছি। সফল হলে দ্রুত কৃষকদের মাঝে এ বীজ ছড়িয়ে দেব আমরা।

পূর্বকোণ/মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট