চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

দূষণে বিপন্ন কর্ণফুলী ও হালদা

মোহাম্মদ আলী

১৪ মার্চ, ২০২৩ | ১২:১৪ অপরাহ্ণ

হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে দৈনিক ২৮ কোটি লিটার তরল বর্জ্য পড়ছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট না থাকায় নগরীর এসব বর্জ্য সরাসরি এ দুইটি নদীকে দূষণ করছে। শুধু তরল বর্জ্যই নয়, মাত্রাতিরিক্ত দূষণ, দখল, ভরাটে বিপন্ন দেশের লাইফলাইনখ্যাত কর্ণফুলী ও প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদী।

এদিকে নদী সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও ভাবনা তৈরি করতে আজ ১৪ মার্চ পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব নদীকৃত্য দিবস’। বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন হয়ে আসছে। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘নদীর অধিকার’।

চট্টগ্রাম ওয়াসার ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজের ওপর প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানের তথ্য অনুযায়ী নগরীতে দৈনিক প্রায় ২৮ কোটি ৮০ লাখ লিটার পয়ঃবর্জ্য নিঃসৃত হচ্ছে। এসব বর্জ্য সরাসরি নালা ও খাল হয়ে হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে পড়ে। তাতে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। অথচ এ দুটি নদী ওয়াসার সুপেয় পানির প্রধান উৎস। এছাড়া নগরীতে দৈনিক প্রায় দুই হাজার মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য সৃষ্টি হয়। এসব বর্জ্যরে একটি অংশও নদীতে গিয়ে পড়ছে। নগরীর তরল ও কঠিন বর্জ্য ছাড়াও নদীর দুই ধারের শিল্পকারখানার দূষিত কেমিক্যালও হালদা ও কর্ণফুলীতে গিয়ে পড়ে। এ কারণে ক্রমাগত দূষণের শিকার হচ্ছে নদী দুটি।

জানতে চাইলে ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ২৮ কোটি ৮০ লাখ লিটার পয়ঃবর্জ্য নিঃসৃত হচ্ছে যা ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন ৫১ কোটি লিটারে উন্নীত হবে। ফলে এসব পয়ঃবর্জ্য, শিল্প বর্জ্য ও হাসপাতাল বর্জ্য মূলত খাল ও নালা হয়ে হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা না হলে নগরীর একমাত্র সুপেয় পানির উৎস এ দুটো নদী ভয়াবহ দূষণের শিকার হবে। এতে চট্টগ্রামের পরিবেশ দূষণসহ নগরীর সুপেয় পানি সরবরাহে সংকট সৃষ্টি হবে। তবে এ সংকট নিরসনে ওয়াসা স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেছে।’

প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কর্ণফুলী ও হালদায় দৈনিক যে পরিমাণ বর্জ্য পড়ে তার ২০ শতাংশ তরল বর্জ্য, ৫০ শতাংশ শিল্পকারখানার এবং ৩০ শতাংশ নৌকা, স্টিমার, মেডিকেল ও সলিড ওয়েস্ট। তবে ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নের পর নগরীর দুষণ প্রায় ৬০ শতাংশ হ্রাস পাবে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়কারী প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘নগরীর তরল ও কঠিন এবং শিল্প-কারখানার বর্জ্যে ভয়াবহ দূষণ হচ্ছে হালদা ও কর্ণফুলী নদী। সব শিল্পকারখানায় ইটিপি’র ব্যবস্থা না থাকায় কর্ণফুলী নদীর দু’পাশে স্থাপিত কারখানার বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে। বিশেষ করে অক্সিজেন ও কূলগাঁও এলাকার শিল্পকারখানা ও আবাসিক বর্জ্য সরাসরি হালদা নদীতে পড়ছে। নদী দূষণের কারণে এদিকে হালদার সুপেয় পানি দূষিত হচ্ছে, অন্যদিকে মৎস্য সম্পদের ওপর পড়েছে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব।’

পূর্বকোণ/মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট