১৩ মার্চ, ২০২৩ | ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ
নাজিম মুহাম্মদ
নগরীর আমবাগানে রেলের জমিতে অবৈধভাবে ঘর তৈরি করে চলছে মাদক বেচাকেনা। বসানো হয়েছে জুয়ার আসর। পুলিশ একাধিকবার অভিযান চলিয়েছে। মাদক বেচাকেনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু কিছূতেই থামানো যাচ্ছেনা মাদক বিক্রি।
মাদকের আখড়ায় পরিণত হওয়া রেলের জমিতে তৈরি করা অবৈধ ঘর উচ্ছেদের অনুরোধ জানিয়ে রেলকে দুইবার চিঠি দিয়েছে খুলশী থানা। চিঠি পাওয়ার এক বছর পার হয়েছে কিন্তু রেলওয়ে বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেয়নি। চিঠিতে ১৩টি ঘরে মাদক বেচাকেনার সাথে যারা জড়িত তাদের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ এক বছর পার হয়ে গেলেও অবৈধ ঘরগুলো উচ্ছেদে কোন ব্যবস্থা নেয়নি রেলওয়ে। এরমধ্যে একটি ঘরে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পাওয়া গেছে একটি গলাকাটা মৃতদেহ। সর্বশেষ গত ৭ মার্চ দুপুরে মাদক বেচাকেনার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা ভাঙচুর করে মসজিদের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, রেলের জমিতে অবৈধভাবে তৈরি করা এসব ঘর থেকে রেলের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা নিয়মিত মাসোহারা নেয়। তাই ঘরগুলো উচ্ছেদে রেলওয়ে আগ্রহী নয়। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করলেও কয়দিন পর জামিনে বের হয়ে যায় তারা। মাদক বেচাকেনার হাট বন্ধ করতে খুলশী থানার ওসি রেলের মহাব্যবস্থাপক, বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তাকে দু’দফায় চিঠি দিলেও ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা জানান, তিনি বিষয়টি জানেন না। খোঁজ খবর নিয়ে দেখবেন।
পুলিশের চিঠির তথ্য অনুযায়ী রেলের জমিতে অবৈধভাবে ঘর তৈরি করে যারা মাদক বেচাকেনা করছে তারা হলেন, আমবাগান ঢাকা লাইনস্থ সোনিয়ার মা, তানিয়া, আলমগীর, কালাইয়া, ঝিলের পাড়ে সিলেটি শাকিল, কাইয়ুম, খুকী, ইদ্রিস, রুমা, লিটন, জাকির ও সুন্দরী। এছাড়া টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনির পাশে রেললাইন সংলগ্ন একাধিক ঝুপড়িতেও বিক্রি হচ্ছে মাদক।
গত ৩ মার্চ রেলের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের কাছে খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমার পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে চিহ্নিত কয়েকজন মাদক বিক্রেতা রেলের জমিতে অবৈধভাবে ঘর তৈরি করে দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে মাদক বেচাকেনা ও জুয়া খেলা পরিচালনা করছে। এতে ওই এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবার পাশাপাশি কিশোর ও যুবকরা বিপদগামী হচ্ছে। মাদক বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে প্রায় সময় মারামারির ঘটনা ঘটছে। অবৈধ দখলদাররা রেলের জায়গায় অবৈধভাবে ঘর তৈরি করে ভাসমান ও চিহ্নিত অপরাধীদের ভাড়া দিয়ে মাদক বেচাকেনা ও জুয়ার আসর বসিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, মাদক বেচাকেনার এসব অবৈধ ঘর উচ্ছেদের অনুরোধ জানিয়ে গত বছরের ১৬ মার্চ খুলশী থানার ওসি রেলওয়েকে চিঠি দিয়েছিল। এক বছর পার হয়ে গেলেও এসব মাদকের আখড়া উচ্ছেদের কোন ব্যবস্থা নেয়নি রেল।
স্থানীয় লোকজন জানান, আমবাগানের সোনিয়ার মা গাঁজা বিক্রি করে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারও করেছে। কিন্তু গাঁজা বিক্রি করা ছাড়েননি তিনি। গত মঙ্গলবার দুপুরে মাদক বিক্রির ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। তারা হাতে কিরিচ নিয়ে প্রকাশ্যে মারামারিতে অংশ নেয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তারা আমবাগান তরুণ সংঘ ক্লাবের পাশে মসজিদের সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করে। মুরাদ, পারভেজ, শাওন ও দিপু নামে চার যুবকের ছত্রছায়ায় তারা মাদক বিক্রি করে। এ চারজনের কারণে এলাকার কিশোর ও তরুণরা বিপদগামী হচ্ছে। তারা গড়ে তুলেছে কিশোর গ্যাং। ধারণা করা হচ্ছে মাদক বিক্রি কিংবা আধিপত্য বিস্তারে মারামারির ভিডিও ফুটেজ এড়াতে তারা মসজিদের সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করেছে।
খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, রেলের জমিতে অবৈধভাবে তৈরি করা ঘরগুলোতে মাদক বেচাকেনা হয়। সেখানে যারা মাদক বেচাকেনা করছে তাদের একাধিকবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জামিনে এসে তারা ফের মাদক বেচাকেনা করছে। এর আগে নগরীর মাদকের আখড়া বরিশাল কলোনি পুলিশ এবং রেলের সমন্বিত উদ্যোগে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। বন্ধ হয় মাদকের বিকিকিনি। একইভাবে অবৈধভাবে তৈরি করা এসব ঘর উচ্ছেদ করা হলে মাদকের আখড়াটি বন্ধ হয়ে যাবে। তাই রেলকে আমরা উচ্ছেদের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। অবৈধ ঘরগুলো উচ্ছেদ হলে বন্ধ হবে মাদক বেচাকেনা।
পূর্বাঞ্চল রেলের বিভাগীয় ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা মাহবুবুল করিম জানান, এ ধরনের কোন চিঠির বিষয়ে আমার জানা নেই। আমরা তো মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযান চালাই। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখব।
পূর্বকোণ/একে