চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভালো কাজের বিনিময়ে খাবার

মিজানুর রহমান

৪ মার্চ, ২০২৩ | ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ফুটপাত লাগোয়া সাদা রঙের দেয়ালে বড় বড় লাল অক্ষরে লেখা ‘ভালো কাজের হোটেল’। সন্ধ্যা হতেই এই ‘হোটেলে’ অতিথি হয়ে আসেন নানা বয়সী মানুষ। কারণ সেখানে আতপ চাল আর মুরগি দিয়ে বানানো ধোঁয়া ওঠা গরম ভুনা খিচুড়ি ‘বিক্রি করেন’ একদল যুবক। লাইন ধরে বসে সেই খিচুড়ি খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেন অতিথিরা। তবে এর জন্য টাকা গুণতে হয় না তাদের। শুধু ভালো কাজের বিনিময়েই ‘কেনা যায়’ সুস্বাদু এই খাবার।

 

‘রেস্টুরেন্ট পাড়া’ হিসেবে পরিচিত কাজীর দেউড়ির আউটার স্টেডিয়াম সংলগ্ন ফুটপাতে প্রতি শুক্রবার রাতে ‘ভালো কাজের হোটেলের’ এই কার্যক্রম চলে। ভালো কাজের বিনিময়ে এই হোটেলে বিনামূল্যে খাবার পান অন্তত ২৫০ অতিথি। যাদের প্রায় সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। প্রথমে রেজিস্ট্রার বুকে হোটেল আসা অতিথিদের নাম লিখা হয়। এরপর নামের পাশে তার করা ভালো কাজের বিবরণ লিখে তাকে খাবার সরবরাহ করা হয়।

এই প্রক্রিয়ায় গতকাল ভালো কাজের হোটেল থেকে খাবার নেন কদমতলী বস্তির বাসিন্দা সায়েরা বেগম। কি ভালো কাজ করেছেন জিজ্ঞেস করতেই তিনি পূর্বকোণকে বলেন, রাস্তার ময়লা পরিষ্কার করায় খাবার পেয়েছি। সায়েরা বেগম বলেন, বাজারে মুরগির দাম কেবল বাড়ছেই। কেনার সাধ্য নেই। এখানে মুরগির খিচুড়ি দেওয়ার কথা শুনে এসেছি। গরম গরম খিচুড়ি তৃপ্তি নিয়ে খেলাম। আয়োজকদের ধন্যবাদ। উদ্যোক্তারা জানান-প্রতি শুক্রবার পাহাড়তলীর সরাইপাড়া এলাকায় ভালো কাজের হোটেলের অতিথিদের জন্য রান্না করা হয়। মেন্যু হিসেবে থাকে চিকেন খিচুড়ি অথবা ওরশ চিকেন বিরিয়ানি। ২৫০ জন অতিথির জন্য ২৫ কেজি চাল আর ১৬ কেজি মুরগি দিয়ে রান্না করা হয় এক হাঁড়ি চিকেন খিচুড়ি। অন্যদিকে একই পরিমাণ অতিথির জন্য এক হাঁড়ি ওরশ চিকেন বিরিয়ানি রান্নায় লাগে ২৫ কেজি চাল আর ২০ কেজি মুরগি।

 

এক হাঁড়ি খাবার তৈরি করতে চাল, মুরগি, মশলা, বাবুর্চি বিলসহ আনুষঙ্গিক খরচ পড়ে প্রায় ১২ হাজার ৫০০ টাকা। সেই হিসাবে প্রতিমাসে এই কাজে উদ্যোক্তাদের ব্যয় হয় অন্তত ৫০ হাজার টাকা। যার পুরোটায় আসে সদস্যদের চাঁদা এবং শুভাকাক্সক্ষীদের অনুদান থেকে। শহরের ছিন্নমূল, বস্তিবাসী, দিনমজুর, নিম্ন আয়ের অন্তত ১ হাজার মানুুষ প্রতি মাসে এই হোটেলে অতিথি হিসেবে ভালো কাজের বিনিময়ে খাবার পান।

 

ভালো কাজের হোটেলের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক মো. মোরশেদ পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রামের ৩০০ জনসহ সারাদেশে আমাদের প্রায় ২ হাজার সদস্য আছে। তারা প্রতিদিন ১০ টাকা করে মাসে ৩০০ টাকা চাঁদা দেন। তাদের চাঁদা এবং কিছু শুভাকাক্সক্ষীর দেওয়া অনুদান থেকে ঢাকার কমলাপুর, সাতরাস্তার মোড়, কারওয়ান বাজার, বনানী ও খিলগাঁও এবং চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়িতে আমরা খাবার বিতরণ করছি।

 

তিনি বলেন, ভালো কাজের হোটেলে খাবার খেতে অতিথিদের একটি শর্ত পূরণ করতে হয়। সেটি হচ্ছে- দিনে অন্তত একটি ভালো কাজ করা। খাবার দেওয়ার আগে আমরা অতিথির কাছে জানতে চাই- সারাদিনে তিনি কি কি ভালো কাজ করেছেন। তবে কেউ ভালো কাজ না করলেও পরের দিন একটি ভালো কাজ করার শর্তে খাবার দেওয়া হয়। এতে আমাদের অতিথিদের মধ্যে প্রতিদিন ভালো কাজ করার মানসিকতা তৈরি হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

 

চট্টগ্রামে ভালো কাজের হোটেলে অতিথিদের সুষ্ঠুভাবে খাবার সরবরাহে ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন। এরমধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হলেও রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা, চাকরিজীবী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরাও। তাদের একজন খাদ্য অধিদপ্তরের পরিদর্শক ওবায়দুর রহমান। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ক্ষুধার কষ্ট সবচেয়ে বড় কষ্ট। ভালো কাজের হোটেলে আসা অতিথিরা যখন খাবার পেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন মনে প্রশান্তি পাই।
এই স্বেচ্ছাসেবকরা ‘ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ’ নামের ফেসবুকভিত্তিক একটি সামাজিক উদ্যোগে যুক্ত। স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রধান আরিফুর রহমান। ডেইলি টেন মেম্বার বা প্রতিদিন ১০ টাকা চাঁদা দেওয়া সদস্যদের আর্থিক সহায়তায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে ভালো কাজের হোটেলের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা।

পূর্বকোণ/একে

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট