১ মার্চ, ২০২৩ | ১২:২৩ অপরাহ্ণ
রায়হান উদ্দিন
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে রয়েছে- ছাত্রত্ব না থাকলে সংগঠনে থাকতে পারবেন না। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের জন্য যেন সে নিয়ম মানার নিয়ম নেই। এ ইউনিটটি বর্তমানে চলছে ‘অছাত্র’দের হাত ধরে। জানা যায়, ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হন ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে। চার বছরের স্নাতক ও এক বছরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ২০১২ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ১৫ বছর ধরে আছেন ক্যাম্পাসে। থাকেন শাহ আমানত হলের একটি কক্ষে। আর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু মার্কেটিং বিভাগে ভর্তি হন ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে। অনার্স মাস্টার্স পাঁচ বছর আগে শেষ শেষ হলেও ছেড়ে যেতে পারেননি ক্যাম্পাস। নিজস্ব রুম আছে শাহ জালাল হলে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র বলতে আসলে যা বোঝায়, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এখন আর তা নন। স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন শেষ করে রাজনীতির সঙ্গে ‘নেতৃত্ব’ ও ‘ছাত্রত্ব’ ধরে রাখতে বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগ আবার শুধু রুবেল-টিপুর বিরুদ্ধে নয়, এরকম ছাত্রত্ব নেই প্রায় ছাত্রলীগের ২০০ নেতাকর্মী আবাসিক হলে অবস্থান করছেন। যারা বেশিরভাগই পদধারী। এছাড়া বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রমে যুক্ত থাকার দায়ে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী আছে ৩০ জন। নিয়োগ-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি কিংবা মারামারি-সবকিছুতে সক্রিয় এসব অছাত্র ও বহিষ্কৃত নেতাকর্মীরা। আবার আবাসিক হলগুলোর অঘোষিত নিয়ন্ত্রকও এরা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ও ছাত্র রাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে ‘অছাত্ররা’ থাকায় শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচি দেখা যায় না। ছাত্র সংগঠনগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে লেজুরবৃত্তির রাজনীতির চর্চা। ছাত্রসংগঠন থেকে ছিটকে পড়ছে মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা। তবে অছাত্র ও বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীর বিষয়ে কঠোর হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল (সোমবার) রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে এসব অছাত্রকে ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। নির্ধারিত ১৫ মার্চের পর ক্যাম্পাস এলাকায় ছাত্রত্ববিহীন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কাউকে পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। প্রশাসন নির্দেশনা কার্যকরে আপোষ না করলে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ২৫০ নেতাকর্মীকে ক্যাম্পাস ছাড়তে হবে। এদিকে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করেই খাতা কলম সীমাবদ্ধ থাকার অভিযোগ তুলেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রশ্ন রয়ে যায়, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের চবি ইউনিটের ছাত্রত্বহীন ‘আদু ভাই’রা কি তাহলে এবার ক্যাম্পাস ছাড়বেন? এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। ছাত্রলীগ থেকে সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমরাও এগিয়ে আসবো। নিজের ছাত্রত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ছাত্রত্ব আছে। পরিসংখ্যান থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে এখন আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছি। ছাত্রত্ব আছে কিনা- এই প্রশ্নের জবাবে টিপু বলেন, অবশ্যই আছে। আমি এখনও স্নাতকোত্তরের ছাত্র। সব পরীক্ষা যথাসময়ে দিয়েছি, শুধু ইন্টার্নশিপের প্রতিবেদনটা এখনও জমা দিতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী অছাত্র, বহিরাগত, মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের ক্যাম্পাস ত্যাগ করতেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত খাতা কলমে সীমাবদ্ধ থাকবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘তুমি কেন আগাম কথাবার্তা বলছো? ১৫ মার্চের পরে তা দেখা যাবে, আমরা কি না- কি করি।’
পূর্বকোণ/একে