চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

একুশে বইমেলার পর্দা নামছে আজ

প্রচার-প্রচারণা বাড়ালে প্রত্যাশা ছাড়াতো মেলা

অনুপম চৌধুরী

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ২:৩৭ অপরাহ্ণ

নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত অমর একুশে বইমেলার পর্দা নামছে আজ। দীর্ঘ ২০ দিনের এই মেলায় সাক্ষী হয়েছে অনেককিছু। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি কমবেশি সবকিছুতেই থাকে, তেমনি বইমেলার দীর্ঘ এই ভ্রমণেরও রয়েছে নানা প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি।

 

চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ছিলো বৃহৎ এক বইমেলার। সেই সুবাধে ২০১৯ সালে সৃজনশীল প্রকাশনা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে শুরু হয় অভিন্ন অমর একুশের এই বইমেলা। শুরুর পর থেকেই সুনামও অর্জন করে এই মেলা। এছাড়া কথিত আছে রাজধানী ঢাকার বইমেলার পরেই এই মেলার স্থান। এবারও দীর্ঘ এই মেলার ইতিহাস ছিলো দারুণ। তৎমধ্যে কিছু কিছু সীমাবদ্ধতা বা আয়োজকদের উদাসীনতায় কিছুটা ম্লান করেছে বলে মনে করছেন নগরীর অনেক লেখক-পাঠক। তৎমধ্যে প্রধান হল প্রচার-প্রচারণার বড় অভাব। মেলা শুরুর আগে নগরীর বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে ফেস্টুন, ব্যানার বা এলাকায় এলাকায় মাইকিং করা যেতো। যার ফলে আরও অনেক লোক জানতো। নগরীর এমনও অনেক মানুষ আছে যারা এই বইমেলার কথা জানেনই না।

 

চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী চৌধুরী ফাহাদ বলেন, ‘একটা বইমেলা প্রতিষ্ঠার জন্য যে পরিমাণ প্রচারণার দরকার তার ছিটেফোঁটাও এখন চোখে পড়ে না। বই থেকে দূরে সরে যাওয়া চট্টগ্রামের অনেক মানুষ জানেই না এখানে একটি বইমেলা হয়। যেখানে জায়গা সংকুলানের জন্য অনেক প্রকাশনীকে স্টল দেয়া হয় না। কিন্তু বিশাল অংশজুড়ে অফিস ও খাবারের দোকানের জায়গা বরাদ্দ থাকে। যে বইমেলা লেখক ও প্রকাশকের মিলনমেলা হবার কথা সেখানে লেখক মঞ্চনামক একটি অবহেলিত কুঁড়েঘর বানানো হয়েছে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘মোড়ক উন্মোচনের জন্য একটি জায়গা রাখা হয়েছে যার পাশে বিগ স্ক্রিনে ভিডিও প্লে হয়। তার স্কিনের আয়োজনে মোডক উন্মোচন মঞ্চের আলোকচকদের কথা তার পার্শ্ববর্তী মানুষও শুনতে পায় না। তদুপরি সেই বিগস্ক্রিনের দিকে তাকালে মনে হয় এটা বইমেলা না, শুধু নাচ, গান, আর আলোচনার প্রোগ্রাম। বইয়ের কোনো হদিস  নেই।’

 

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক প্রকাশক জানান, আয়োজকদের বিশাল এক গ্যাপ আছে। সবাইকে নিয়ে সুন্দরভাবে একটা গোছানো বইমেলার আয়োজন করা যায়। প্রতিদিন নতুন কতোটা বই মেলায় আসল তা মাইকিং করা যায়, সাথে চট্টগ্রামের লেখক ও সৃজনশীল ব্যক্তিদের ফোন বা চিঠির মাধ্যমে জানানো যেতো।

কবি ও প্রাবন্ধিক সাজিদুল হক বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আয়োজনে বইমেলার আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বইপড়া ও বইপ্রেমীদের জন্য সুসংবাদও বটে। এজন্য সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মেলা কর্তৃপক্ষ ধন্যবাদ প্রাপ্য। কিন্তু প্রশ্ন দাঁড়ায়, এই উদ্যোগ কতটা সফল? এই আয়োজন কী বিতর্কের ঊর্ধ্বে?’

 

তিনি আরও বলেন, ‘মেলায় অযাচিত হস্তক্ষেপের দরুণ অনুষ্ঠান পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও উপস্থাপনায় সাহিত্য সংশ্লিষ্টদের গুরুত্ব না দেয়ায় অনুষ্ঠানের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠে। তৃতীয়ত, মেলা শুরুর আগ থেকেই যদি এর প্রচারণা করা যেত যেমন- ফেস্টুন, মাইকিং ও বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে, তাহলে লোক সমাগম বৃদ্ধি পেতো।’

 

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক পাঠক বলেন, মেলা ব্যবস্থাপনায় অসঙ্গতি আছে। শিশুদের জন্য একটা কর্নার আবার সেই কর্নার শিশুদের উপযোগী করা হয়নি। আবার লেখকদের জন্য যে আড্ডার স্থান রাখা হয়েছে তা খুব ছোট আর উঁচু-নিচু। লেখকরা ওখানে বসে যে কিছু কথা বলবে সেটাও কারও কথা কেউ না শোনার মতো।

 

তিনি আরও বলেন, ‘বিশাল এই অভিন্ন মেলার জন্য মেয়রকে ধন্যবাদ। মেয়রও একজন লেখক। তিনি যদি আরও একটু সদয় হন তাহলে আগামীতে আরও জমজমাট মেলা করা যাবে। এমনিতে বইমেলায় লোকজন আসে কম, যারা আসে তারাও স্পিকারের সাউন্ড অত্যাচারে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে না পেরে বের হয়ে যায়। এরপরে আসে মশা মারতে কামান দাগা ইউনিট। তারা যখন-তখন এসে বিশাল শব্দে চারদিক ধোঁয়া করে চলে যায়, মশার সাথে ভাগিয়ে দেয় বইমেলায় অল্প কিছু পাঠককেও।’

 

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম বইমেলা প্রসঙ্গে বলেন, ‘চট্টগ্রামের মানুষ যে বইমেলায় এসেছেন এবং গ্রহণ করেছেন সেজন্য তাদের ধন্যবাদ। একটা কাজ করতে গেলে কিছু ভুলত্রুটি থাকে সেগুলো কাটিয়ে আগামীবার আরও ভালো ও গোছানো বইমেলা করতে চাই।’

 

এদিকে গতকাল  (সোমবার) বিকেলে বইমেলা মঞ্চে নৃগোষ্ঠী উৎসবের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ড. আজাদ বুলবুলের সভাপতিত্বে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজুরী চৌধুরী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পুরস্কারপ্রাপ্ত গুণীজন মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, নাবিক ও প্রবাসী কল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক সুমন বড়ুয়া, কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বইমেলা কমিটির আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা কর্মকর্তা উজালা রাণী চাকমা।

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট