চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

যৌতুক দাবিতে এ কেমন বর্বরতা !

মিটু বিভাস

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ

নগরীর চৌমুহনী চারিয়া পাড়ায় গতকাল শনিবার যৌতুকের দাবিতে নির্মম নির্যাতনের শিকার এক গৃহবধূকে উদ্ধার করা হয়েছে। গত তিন মাস ধরে একটি ভাড়া বাসায় তাকে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করে আসছিল স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা। স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় গতকাল দুপুরে কর্ণফুলী মার্কেটের পশ্চিম পাশে চারিয়া পাড়া লেন ফিরোজ ভবনের চতুর্থ তলার ভাড়া বাসা থেকে ফাইট ফর ওমেন রাইটস’র সভাপতি, সাবেক কাউন্সিলর রেহেনা বেগম রানু নির্যাতিত গৃহবধূকে উদ্ধার করে বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেন।  জানা যায়, গত বছরের ৬ নভেম্বর চারলক্ষ টাকা দেনমোহরে নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকার রিকশাচালক আনোয়ার হোসেনের মেয়ে রিক্তা আক্তারকে বিয়ে করেন একই জেলার হাতিয়া বুড়ির চর এলাকার মো. মাইন উদ্দিনের পুত্র মো. মামুন। স্বামী মামুন নগরীর চৌমুহনী বাজারের সবজি ব্যবসায়ী। বিয়ের পর স্বামী রিক্তা আক্তারকে চৌমুহনী ফিরোজ ভবনে নিয়ে আসেন এবং তার বাবা মায়ের কাছে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকেন। রিকশা চালক আনোয়ার হোসেনের পক্ষে তার দাবি মেটানো সম্ভব না হওয়ায় শুরু হয় মেয়েটির উপর নির্যাতন। স্বামী শাশুড়ি ও ননদ মিলে দিন-রাত মারধর করতে থাকেন। সপ্তাহে দু-একদিন খাবার দিলেও বেশিরভাগ সময় অভুক্ত রাখা হত তাকে। তাঁর কান্নার শব্দে সংক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে প্রতিবেশীরাও। এদিকে অত্যাচার সইতে না পেরে গত বৃহস্পতিবার বদ্ধ ঘরে জানালার ফাঁক দিয়ে পাশের ভবনের আরেক গৃহবধূকে ইশারায় বাঁচানোর আকুতি জানান এবং কাগজে বাবার মোবাইল নম্বর লিখে নিচে ফেলে দেন। পরে প্রতিবেশীরা সে নম্বরে যোগাযোগ করলে নোয়াখালী থেকে চলে আসেন গৃহবধূর বাবা-মা। এরপর উদ্ধার করা হয় গৃহবধূ রিক্তাকে।

প্রতিবেশী রোজি আক্তার বলেন, ‘স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা তাকে প্রতিদিন মারধর করত। প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত মেয়েটির কান্নার শব্দ শুনতাম।’ আরেক প্রতিবেশী তন্বী বেগম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার মেয়েটি ইশারায় বাঁচানোর আকুতি জানায়। এরপর আমি বিষয়টি স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের জানাই। তারা অন্য প্রতিবেশীদের সাথে একত্রিত হয়ে মেয়েটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করে।’

গৃহবধূর বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমরা মেয়েকে দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু মেয়ের সাথে দেখা করতে দেয় নাই। উল্টো আমাকে হুমকি দেয়। গরিব মানুষ তাই কোথাও অভিযোগ করার সাহস পাইনি। গত শুক্রবার ফোন পেয়ে চলে এসেছি। আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া। উনাদের সহযোগিতায় আমি মেয়েকে ফেরত পেয়েছি। আমি এখন এর বিচার চাই।’

অভিযুক্ত স্বামী মো. মামুন বলেন, ‘আমি কোন টাকা চাইনি। বিয়ের সময় আসবাবপত্র ও অলংকার দেয়ার কথা ছিল। আমি শুধুমাত্র সেগুলো দাবি করেছি।’ পরিবারের অন্য সদস্যদের দাবিও প্রায় একইরকম। নির্যাতিত গৃহবধূ বলেন, ‘বিয়ে করে শহরে নিয়ে আসার পর বাবার বাড়ি থেকে দেয়া সব স্বর্ণালংকার এরা কেড়ে নিয়ে যায়। এরপর বাবার কাছ থেকে টাকা, আসবাবপত্র ও আরও স্বর্ণ এনে দিতে বলে। কিন্তু আমার বাবার পক্ষে এসব দেয়া সম্ভব না বলার পর থেকে প্রতিদিন স্বামী, শাশুড়ি ও দেবর মিলে মারধর করতে শুরু করে। ঘরের বাইরে তালা দিয়ে বদ্ধ ঘরে আটকে রাখত। দু’তিনদিন পর একবার খাবার দিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবেশীরা অত্যাচারের বিষয়টা আঁচ করছে, সেটা অনুমান করতে পেরেছিলেন শ্বশুর বাড়ির সদস্যরা। তাই দু’একদিনের মধ্যে বাসাটি পাল্টে ফেলার কথা ছিল। অন্য কোথাও নিয়ে গেলে মা-বাবার মুখ হয়তো আর দেখা হত না।’

উদ্ধারে নেতৃত্ব দিয়ে যাওয়া রেহেনা বেগম রানু বলেন, ‘গৃহবধূর স্বামী ও তার পরিবারের সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। যৌতুকের জন্যই তারা বেঁধে রেখে গৃহবধূকে নির্যাতন করত। আমি তাকে উদ্ধার করে বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিয়েছি। আমি এবং আমার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে গৃহবধূ ও তার পরিবারকে আইনগত সকল সহযোগিতা করে যাব। উদ্ধারের ঘটনায় গতকাল বিকেলে ডবলমুরিং থানায় জিডি এন্ট্রি করা হয়েছে। কাল (রবিবার) অথবা পরশু (সোমবার) এর মধ্যে আদালতের মাধ্যমে মামলা দায়ের করা হবে।’

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট