চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বরগুনার গভীর সাগরে ডাকাতি, বাঁশখালীতে অস্ত্রসহ ৪ জলদস্যু গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ২:৫২ অপরাহ্ণ

বরগুনার পাথরঘাটার বঙ্গোপসাগরের বয়া নামক এলাকায় ট্রলার থেকে ডাকাতি ও ৯ জেলে নিখোঁজের ঘটনায় চার জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৭। পরে তাদের দেখানো জায়গা থেকে চারটি আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, দুটি হাতুড়ি, তিনটি দা, একটি কিরিচ, দুটি শাবল, জাল এবং একটি বোট উদ্ধার করা হয়।

 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- বাঁশখালী উপজেলার পশ্চিম বড়ঘোনার আলী আহম্মেদের ছেলে মো. কাইছার ওরফে কালু (২৫), একই এলাকার মৃত আহম্মেদ সাবার ছেলে মো. জাহিদ (২৫), মৃত আলী চানের ছেলে মো. সেলিম (৪০) ও তার ছেলে মো. ইকবাল হোসেন (১৫)।

 

মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা, বড়ঘোনা, বাংলাবাজার, শৈলকুপাসহ তার আশেপাশে এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

 

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

 

তিনি বলেন, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বরগুনার ১৮ জন জেলে একটি ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যান। ওইদিন দিবাগত রাতে পাথরঘাটা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে একটি ট্রলার থেকে জলদস্যুরা তাদের ট্রলারে ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকে। ভয়ে ট্রলারে থাকা জেলেরা চিৎকার শুরু করে। জলদস্যুরা দ্রুত জেলেদের ট্রলারে উঠে ১৮ জনকে কুপিয়ে আহত করে। জলদস্যুদের কবল থেকে বাঁচতে ৯ জেলে সাগরে ঝাঁপ দেয়। এসময় জলদস্যুরা ট্রলার থেকে সবকিছু লুট করে পালিয়ে যায়। এরপর অন্য একটি ট্রলারের জেলেরা আহতাবস্থায় ৯ জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত দু’জনকে শনিবার রাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সমুদ্রে ঝাঁপ দেয়া ৯ জেলের মধ্যে ৪ জনকে সাগর থেকে উদ্ধার করে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। বিকেলে সাড়ে ৩টায় তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৫ জেলে। ঘটনাটি সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও আলোড়ন সৃষ্টি করে।

 

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার সাথে জড়িতদের ধরতে র‌্যাব-৭, র‌্যাব-৮, র‌্যাব-১৫ এবং র‌্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা যৌথভাবে কাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, ট্রলারে ডাকাতির ঘটনায় জড়িতরা বাঁশখালীতে অবস্থান করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল দিবাগত রাতে বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা, বড়ঘোনা, বাংলাবাজার, শৈলকুপাসহ তার আশেপাশে এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪ জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেখানো জায়গা থেকে ৪টি আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, ২টি হাতুড়ি, ৩টি দা, ১টি কিরিচ, ২টি শাবল, জাল এবং দস্যুতাবৃত্তিতে ব্যবহৃত বোট উদ্ধার করা হয়। এছাড়া গ্রেপ্তার কালুর কাছ থেকে একটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়, যা বরগুনায় ডাকাতি হওয়া ট্রলারের এক জেলের।

 

র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জলদস্যুরা জানায়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি তারা ডাকাতির জন্য সমুদ্রে নেমে কুতুবদিয়া চ্যানেল এলাকায় একটি ডাকাতি করে। ১৭ ফেব্রুয়ারি বরগুনা-পটুয়াখালি চ্যানেলের দিকে দ্বিতীয় ডাকাতি করে। বরগুনায় ডাকাতির সময় কালু এবং জাহিদ সরাসরি বোটে উপস্থিত ছিল। গ্রেপ্তার সেলিমের বোট ব্যবহার করেই মূলত তারা ওইদিন ডাকাতি করে।

 

জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায়, ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী বিভিন্ন জায়গা থেকে জনবল সংগ্রহ করা, কিভাবে ডাকাতি করবে, কোন জায়গা থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ আসবে এবং ডাকাতির মালামাল কোথায় বিক্রি করা হবে এ সকল বিষয় সে নিয়ন্ত্রণ করত। তার প্রধান সহযোগী হিসেবে আরেকজন মাঝি কাজ করত। তারা সর্বমোট ১৮/২০ জন ছিল। তাদের মধ্যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

র‌্যাবের অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুব আলম আরও বলেন, তারা আগে বাঁশখালী, পেকুয়া, মগনামা, এবং কুতুবদিয়া এলাকার উপকূলীয় অঞ্চলে ডাকাতি করতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অধিকতর তৎপরতার কারণে তারা ওই এলাকা ছেড়ে বরিশাল, বরগুনা এবং খুলনা উপকূলীয় অঞ্চলে ডাকাতি শুরু করেছে। এ অঞ্চলে ডাকাতি করে ডাকাতির মালামাল কক্সবাজার নিয়ে বিক্রি করতো। বরগুনার পাথরঘাটা এলাকার ট্রলার থেকে প্রায় তারা ২০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে করে বলেও জানায়।

 

গ্রেপ্তার কালুর বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানায় ২টি চুরির মামলা ও সেলিমের নামে ৫টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পূর্বকোণ/পিআর/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট