চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

নতুন মেশিন কেনাকাটায় অনিয়ম, গ্রহণে আপত্তি

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৫:১৮ অপরাহ্ণ

রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান গাজী ওয়্যারস লিমিটেডে আধুনিকীকরণের প্রকল্পে মেশিনারিজ কেনাকাটায় জালিয়াতি ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তা গ্রহণ না করার দাবি করে আসছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। তাদের অভিযোগ, শিল্প মন্ত্রণালয়ের একাধিক তদন্তে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উপরন্তু সেই মেশিনগুলো এখন গ্রহণ করার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে।

কালুরঘাট শিল্প এলাকায় অবস্থিত গাজী ওয়্যারস কারখানা শক্তিশালী ও আধুনিকীকরণ শীর্ষক প্রকল্প নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন লাভ করে। প্রকল্পে নতুন মেশিন ও যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তা গ্রহণ না করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। তাদের ভাষ্য, প্রকল্পে জাপানের কথা বলে তাইওয়ানের ইকুইপমেন্ট ও মেশিনারিজ সংযোজন করা হয়।

গাজী ওয়্যারসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মনিরুজ্জামান খান পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রকল্প হস্তান্তর কমিটির প্রতিবেদনের পর প্রকল্প বুঝে নেওয়া হবে। মেশিনগুলো যেখানে যে অবস্থায় আছে সেভাবে গ্রহণ করা হবে।’ এক বছর আগে মেশিনগুলো বসানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেক মেশিনের ওয়ারেন্টি ও গ্যারান্টিও প্রায় শেষপর্যায়ে।

অনিয়ন-দুর্নীতির বিষয়ে এমডি মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এ বিষয় শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিএসইসি দেখবে। আমি প্রকৌশলী নই, প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা তা ভালো বুঝবেন।’

শিল্প মন্ত্রণালয়ের ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন অভিযোগ তদন্তে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জাপানি কোম্পানি তবে মেশিনগুলো জাপানের প্রস্তুতকৃত হবে এমন কোনো কথা ১৯৪তম সভায় উল্লেখ করা হয়নি। মেশিনগুলোর প্রকৃতপক্ষে কোন দেশে তৈরি তা উল্লেখ না করায় কেনাকাটা প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়নি।

এজন্য উপ-প্রধান হিসাবরক্ষক ও কোম্পানি বোর্ডের সচিব অলকপ্রিয় বড়ুয়া দায়বদ্ধ। প্রকল্প পরিচালক মো. আক্তার হোসেনও দায় এড়াতে পারেন না। মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের এদেশীয় এজেন্ট আহসান এন্টারপ্রাইজকে ডিলার নিয়োগের প্রক্রিয়া যথাযথভাবে মানা হয়নি।

তবে দ্বিতীয় কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেশিনগুলো কোন দেশের তৈরি তা নিশ্চিত হতে পারেনি কমিটি। প্রকল্পে ক্রয় অনুমোদনে অসঙ্গতি ও আর্থিক ব্যয় অনুমোদন নিয়ম মেনে করা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন কমিটির সদস্যরা। তৃতীয় কমিটির সদস্যরাও ক্রয় প্রস্তাব ও চুক্তি অনুমোদন এবং ডিপিপি নিয়ে আপত্তি করেছেন।

তিন তদন্ত কমিটির তদন্ত, পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশমালা সমন্বয় করে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়েছেন বিএসইসি সচিব মো. নাজমুল হক প্রধান। গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর দুদক চেয়ারম্যানকে এ চিঠি দেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিবিএর যুগ্ম সম্পাদক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের একাধিক তদন্ত কমিটি মেশিন ও যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার পরও মেশিনগুলো গ্রহণের তোড়জোড় চলছে। তা দেশ ও সরকারের জন্য বড় ক্ষতিকর হবে।’ তিনি দাবি করেন, নিম্নমানের এসব মেশিন দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই হবে না। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে পরীক্ষামূলক চালু অবস্থায় প্রায়শই মেশিনগুলোর নানা সমস্যা দেখা দেয়। মেশিন বন্ধ করে রাখতে হয়।’

৬৫ কোটি টাকার প্রকল্পে ২৫ কোটি টাকা হরিলুট হয়েছে দাবি করে ২৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে গাজী ওয়্যারস এমপ্লয়িজ এসোসিয়েশন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম মোস্তফা দাবি করেছেন, প্রকল্পে সরকারি অর্থ হরিলুট করা হয়েছে। দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার পরও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে প্রকল্প গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। মেশিনগুলো বছর না যেতেই অকেজো হয়ে পড়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, মেশিন কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে চুক্তিপত্রেও জালিয়াতি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার ২০১৭ সালে গাজী ওয়্যারস লিমিটেডকে আধুনিকীকরণ ও শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ নেয়। ২০১৮ সালে ৬৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদন পায়। প্রকল্পের আওতায় একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ, অন্যান্য নির্মাণকাজ ও ৯টি ভারী মেশিনারিজ ক্রয় করার কথা। ভারী মেশিনারিজ কেনার ক্ষেত্রেই বড় ধরনের এই দুর্নীতি হয়েছে বলে সংশিষ্টরা জানান।

পূর্বকোণ/মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট