চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সীতাকুণ্ডে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের সাথে জেলা প্রশাসকের ফুল উৎসব

সীতাকুণ্ড সংবাদদাতা

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৬:৪৮ অপরাহ্ণ

সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে সুবিধা বঞ্চিত অবহেলিত শিশুদের সাথে ফুল উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান।

শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে তিনি এতিম ও প্রতিবন্ধী শিশুদের সাথে দীর্ঘ সময় কাটান। এসময় তিনি শতাধিক প্রজাতির ফুলের সাথে শিশুদের পরিচয় করিয়ে দেবার পাশাপাশি তাদেরকে নিয়ে নৌকা ভ্রমণ, কায়াকিং এবং নাগরদোলায় চড়েন। সবশেষে তাদের সাথে মধ্যাহ্ন ভোজেও অংশ নেন। এতে দারুণ একটি দিন কাটে শিশুদের।

 

জানা যায়, সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে অবৈধ দখলে থাকা ১৯৪.১৩ একর জায়গা উদ্ধার করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামানের পরিকল্পনায় ওই স্থানে একটি মনোরম বিনোদন কেন্দ্র গড়ার কাজ চলছে। এরই মধ্যে সেখানে বিশালাকার ফুল বাগান তৈরি করা হয়েছে। এই বাগানে টিউলিপ ফুলসহ ১২২ প্রজাতির ফুলের গাছ রয়েছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি সেখানে শুরু হয়েছে ৯ দিনব্যাপী ফুল উৎসব। এই উৎসবের বিভিন্ন সময়ে উপস্থিত হয়েছেন একাধিক মন্ত্রী, চসিক মেয়রসহ পণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

শুক্রবার উৎসবের অষ্টম দিনের আয়োজনটি ছিল প্রতিবন্ধী ও এতিম শিশুদের নিয়ে। বেলা ১১টার দিকে সরকারি শিশু পরিবার, উপলব্ধি এবং সীতাকুণ্ড প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের প্রায় দুই শতাধিক শিশু ফুল উৎসবে আসে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান এতিম ও প্রতিবন্ধী এই শিশুদের নিয়ে দীর্ঘ ২ ঘণ্টারও বেশি সময় কাটান। তিনি শিশুদেরকে টিউলিপসহ বিভিন্ন ফুলের সাথে পরিচয় করিয়ে বাগানে ঘোরেন। তাদের নিয়ে নাগরদোলায় চড়েন, কায়াকিং ও নৌকা ভ্রমণ করেন বিশাল দিঘীতে।

 

এখানে আসা পিতা-মাতার পরিচয়হীন এক শিশু জান্নাত ও সরকারি শিশু নিবাসের নাঈমা। তারা জানান, ডিসি স্যার আমাদের সাথে এখানে এসেছেন, ফুল দেখিয়েছেন, বেড়িয়েছেন আমাদের সাথে, আনন্দ দিয়েছেন। আমরা খুবই আনন্দিত। এখানে এসে বিভিন্ন ফুল দেখে আমাদের খুব ভাল লেগেছে। আমরা নৌকায় ঘুড়েছি। সবাই মিলে কায়াকিং করেছি, অনেক ফুলের নাম জেনেছি। আমরা অভিভূত।

মাঈনুল ইসলাম নামে এক প্রতিবন্ধী কিশোর বলেন, আমাদের মতো প্রতিবন্ধীদের কথা কেউ ভাবেন না, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক স্যার আমাদের জন্য আজকে আয়োজন করেছেন। আমরা কৃতজ্ঞ।

 

চট্টগ্রাম সরকারি শিশু পরিবারের শিক্ষক রুমা পারভীন বলেন, এটি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের এক মহৎ উদ্যোগ। এত বিশাল জায়গা জুড়ে শুধু ফুলের বাগান চট্টগ্রামের অন্য কোথাও নেই। আমরা চাই যেন মাঝে মাঝে আমাদের এসকল এতিম বাচ্চাদের নিয়ে এখানে আসতে পারি। এরকম একটি পার্ক শিশুদের মানসিক বিকাশে দারুণ অবদান রাখবে।

অনুষ্ঠানের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম বলেন, ফুল উৎসবে ডিসি স্যার সুবিধা বঞ্চিত শিশু-কিশোরদেরকে নিয়ে ঘুরে আনন্দ দেন এবং তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা জানার চেষ্টা করেন। এটি স্যারের একটি ব্যতিক্রমী ও প্রশংসনীয় আয়োজন।

 

জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, এ সকল পিতৃ-মাতৃহীন এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা আমাদের সমাজেরই অংশ। তাদেরকে বাদ দিয়ে কোনভাবেই সামস্টিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা ড. সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের নিয়ে কাজ করেন। প্রধানমন্ত্রীও এসকল শিশুদের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। আমরা অবশ্যই শিশুবান্ধব ও প্রতিবন্ধীবান্ধব পার্ক হিসেবে এই ডিসি পার্ককে গড়ে তুলব এবং তারা যেন প্রতি সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট সময়ে এখানে আসতে পারে, খেলাধুলা করতে পারে সে ব্যবস্থা করব।

এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাকিব হাসান, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মো. তৌহিদুল ইসলাম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হুছাইন মুহাম্মদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও প্রতিক দত্ত উপস্থিত ছিলেন।

 

পূর্বকোণ/সৌমিত্র/মামুন/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট