চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

নতুন রূপে প্রস্তুত চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

ইমাম হোসাইন রাজু

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পুনঃসংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে নতুন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। শুধু ফিনিশিং আর রঙ তুলির কাজ করা হলেই আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করা যাবে বলে জানিয়েছে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ গণপূর্ত বিভাগ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, শতভাগ প্রস্তুত থাকলেও শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কখন খুলে দেয়া হবে সেটি নির্ভর করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সিদ্ধান্তের উপর।

 

অন্যদিকে, চসিক মেয়র জানিয়েছেন, পরিদর্শনের পর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বিশিষ্টজনের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। এজন্য দুয়েক দিনের মধ্যে স্থানটি সরেজমিন পরিদর্শনে যাবেন বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী।

 

এর আগে ২০২১ সালের জুনের দিকে শহীদ মিনার স্থানান্তর নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়ায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। অবশ্য পরবর্তীতে একই বছরের অক্টোবরে এসে মেয়রের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় সার্বজনীন সিদ্ধান্তে তা দূর হয়। তবে সভা এবং বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত ছিল গত বছরের ডিসেম্বরের আগেই কাজ শেষ করার। কিন্তু নানা কারণে সেটি সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। তবে গেল মাসে দৃশ্যমান হয় শহীদ মিনার।

 

গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছেন, দৃশ্যমান হলেও ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই সকল কাজ সম্পন্ন করা যাবে। ফিনিশিং ছাড়াও রঙ এবং তুলিসহ বাকি কাজও একই সময়ে শেষ করা সম্ভব হবে। ফলে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসে সার্বজনীন শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে।
গণপূর্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রাম-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ পূর্বকোণকে বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শহীদ মিনার অংশের কাজ শেষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে শহীদ মিনারও দৃশ্যমান। এখন আমাদের শেষ মুহূর্তের কিছু ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। সংশ্লিষ্টরা চাইলে ২১ ফেব্রæয়ারিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে।’

 

সরেজমিনে দেখা যায়, পুরানো শহীদ মিনারের মতো একই নকশায় প্রস্তুত করা হয়েছে নতুন শহীদ মিনার। আশপাশের সকল স্থাপনাও দৃশ্যমান। শহীদ মিনারের পেছনের অংশে বাউন্ডারির কাজও শেষ করা হয়েছে। এখন শুধুমাত্র শ্রমিকরা ফিনিশিংয়ের কাজ করে যাচ্ছেন।

এদিকে, আগামী ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা যাবে কি-না, অথবা শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে শহীদ মিনার উন্মুক্ত করা হবে কি-না সে বিষয়ে সার্বজনীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে জানিয়েছেন চসিক মেয়র। ইতোমধ্যে তিনি কাজের অগ্রগতি দেখতে আজ অথবা কাল সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘শহীদ মিনারের কাজ শেষ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবহিত করেছেন। মঙ্গলবার (আজ) অথবা কাল (বুধবার) সরেজমিনে পরিদর্শনে যাব। তারপর সার্বজনীন মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজন হলে সবাইকে নিয়ে আবার বসে আলোচনা করবো।’

 

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের নভেম্বরে একনেকে পাস হয় চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স বা সাংস্কৃতিক বলয় প্রকল্প। ২৩২ কোটি ৫২ লাখ টাকার এ প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে ১৬৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার কাজ চলমান আছে। যেখানে মুসলিম ইনস্টিটিউট ভেঙে ফেলে মাস্টার প্ল্যানের আওতায় ১৫ তলা বিশিষ্ট একটি গ্রন্থাগার, আট তলা বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম, একটি মাল্টিপারপাস হল নির্মাণ করা হবে। বিপরীত পাশে নির্মাণ করা হবে পাবলিক প্লাজা ও নতুন শহীদ মিনার।

 

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, নকশা অনুযায়ী মূল সড়কের ওপর শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের যাতায়াতের জন্য টানেলের মতো ওভারপাস তৈরি করা হবে। যা মুসলিম হল থেকে বর্তমান শহীদ মিনারের সাথে সংযুক্ত থাকবে। শহীদ মিনারের পূর্বপাশে থাকবে উন্মুক্ত মঞ্চ ও গ্যালারি। যেখানে ব্যবস্থা থাকবে উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক আয়োজনসহ সভা-সেমিনারের মতো অনুষ্ঠানের। আর শহীদ মিনারের চার পাশে থাকা বাউন্ডারি ওয়াল বা দেয়ালে মুক্তিযুদ্ধের, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত আবক্ষমূর্তি বা স্মৃতি স্থাপন করা হবে।

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট