চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চবির ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব

নবীন-প্রবীণে মুখর ক্যাম্পাস

চবি সংবাদদাতা

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১২:৫০ অপরাহ্ণ

প্রকৃতিতে বসন্তের পূর্বাভাস। রঙিন সাজে সজ্জিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসের ব্যবসায় অনুষদ প্রাঙ্গণ। এ যেন এক মহামিলনমেলা। গতকাল শনিবার সকাল থেকে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে নবীন-প্রবীণের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

‘সাফল্যের উচ্ছাসে ম্যানেজমেন্ট পঞ্চাশে’ প্রতিপাদ্যে উদযাপিত হয়েছে এই সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব। সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত বর্ণাঢ্য র‌্যালির মাধ্যমে শুরু হয় এই উৎসব। এরপর সকাল ১১টায় ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের সামনে বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।

দুপুর ১২টায় সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহবায়ক দি পূর্বকোণ লিমিটেডের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি প্রফেসর আবু মুহাম্মদ আতিকুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ হারিসুর রহমান হাওলাদার ও সহকারী অধ্যাপক সেতু রঞ্জন বিশ্বাস।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, ‘ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের মধ্যে অন্যতম সমৃদ্ধ ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এ বিভাগের প্রথিতযশা শিক্ষকরা তাদের মেধা ও দক্ষতার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। এসব শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের মেধা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।’

চবি উপাচার্য আরও বলেন, ‘আধুনিক বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কারিকুলাম উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ এবং মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে এই বিভাগ প্রতিনিয়ত শিক্ষার উৎকর্ষ সাধনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। এ মহামিলনমেলায় নবীন-প্রবীণের মাঝে যে সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে তা অভূতপূর্ব। আশা করি নিজ নিজ অবস্থান থেকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে অবশ্যই কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেন, ‘এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এই বিভাগ সূচনা থেকে অদ্যাবধি তার প্রতিটি কার্যক্রমে সফলতার ধারা অব্যাহত রেখেছে।’

বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রাক্তন সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এফ এম আওরঙ্গজেব বলেন, ‘২৮ বছর আমি এই বিভাগে অধ্যাপনা করেছি। এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা দেশে বিদেশে আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা কেউ কর্মহীন থাকে না। আমরা এই বিভাগ থেকে নেতা ও নেতৃত্ব তৈরি করি।’ সমাপনী বক্তব্যে দি পূর্বকোণ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও সুবর্ণজয়ন্তী আয়োজক কমিটির আহবায়ক জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘চবির ম্যানেজমেন্ট বিভাগ একটি ঐতিহ্যবাহি ও সমৃদ্ধশালী বিভাগ। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।’ তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভাগের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন চবি সাবেক উপাচার্য ও ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার, ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন নিজামী, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রফেসর ড. জাহেদ হোছাইন সিকদার, সাবেক প্রফেসর এ এন আর এম বোরহান উদ্দিন, প্রফেসর ড. আব্দুল আউয়াল খান ও প্রফেসর ড. ফয়সাল উদ্দিন।

সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদমিনার প্রাঙ্গণ এবং বুদ্ধিজীবী চত্বর সাজানো হয়েছিল বর্ণিল সাজে। ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। বুদ্ধিজীবী চত্বরে বসেছে বেশ কয়েকটি দোকান এবং বুথ। যেখানে মিলেছে হরেক রকমের খাবার। বিশেষ করে ভাপা পিঠা, ফলের রস, রঙ চায়ের দোকানগুলোতে ছিলো নবীণ-প্রবীণদের ভিড়। শীতের মাঝে পুরো এলাকায় যেন বসন্তের ছোঁয়া। কারও পরনে পাঞ্জাবি-পায়জামা, কারও পরনে শাড়ি, কেউবা মাথায় গুঁজেছেন ফুল, কারও বা আবার হাতে ফুলের কুঁড়ি। দিনব্যাপী এই সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবকে প্রাণের উৎসবে পরিণত করে রেখেছিলেন সাবেক শিক্ষার্থীরা।

দীর্ঘদিন পর মায়া জড়ানো এই প্রাণের ক্যাম্পাসে আসতে পেরে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকেই। আবার অনেকে প্রিয় বন্ধুদের সান্নিধ্য পেয়ে উচ্ছাসিত। এদের কেউ ঘুরেছেন পুরোনো ক্লাসরুম ও আবাসিক হলে। কেউবা মেতেছিলেন ছবি তোলার উৎসবে।

সত্তর বছর বয়সী আশেক, বাহাদুর, সামিরানরা প্রিয় ক্যাম্পাসে এসে খুঁজেছেন শৈশবের আমেজ। এদের মধ্যে আশেক আহমদের উচ্ছাসটা একটু যেন বেশিই ছিল। অনুভূতি জানতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে। এই বয়সে চাওয়া পাওয়ার কিছু বাকি নেই। তাই কোনও আয়োজনের খবর পেলেই ছুটে আসি। বন্ধুদের কাছে পেলে ভালো লাগে।’

যত বছর পরেই হোক না কেন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের করিডোরে শীতের সকালে বসে রোদ পোহানো কিংবা ক্লাস পরবর্তী গল্প আড্ডায় মেতে ওঠার সময়গুলো ভুলে যাননি তারা। বিভাগটির ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল হুদা আহমেদ বলেন, ‘অনেক ভালো লাগছে আমাদের এই সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে এসে। অনুষ্ঠানের সুবাদে আজকে অনেক পুরাতন বন্ধুদের সাথে দেখা হলো। অনেকদিন পর একসাথে বুদ্ধজীবী চত্বরে আড্ডা দিচ্ছি এর থেকে আনন্দের আর কি হতে পারে।’

একই ব্যাচের শিক্ষার্থী শোয়াইব বলেন, ‘অনেক দিন হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বেরিয়েছি। কিন্তু এই বিভাগ, এই বিশ্ববিদ্যালয় আমার মনে-প্রাণে রয়ে গেছে। এই উৎসবে এসে প্রিয় বন্ধু-বান্ধবদের দেখা পেয়ে মনে হচ্ছে আবারও সেই ছাত্রজীবনে ফিরে গেলাম।’

শুধু সাবেক শিক্ষার্থীরই নয়, উৎসবে সামিল ছিল মা কিংবা বাবার হাত ধরে আসা ছোট বাচ্চারাও। তাদের ছোটাছুটিতে ক্যাম্পাসটা আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল। ৩৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ‘আমার সাথে ছোট মেয়েও ক্যাম্পাসে এসেছে। এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে। নিজের সন্তানকে প্রিয় ক্যাম্পাসে নিয়ে আসতে পেরে ভাল লাগছে।’

অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ১৫তম ব্যাচের জুবাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ক্যাম্পাস ছাড়ার পর অনেকের সাথে আর দেখা হয়নি। দীর্ঘদিন পর সবাই মিলিত হয়েছি। এই অনুভূতি প্রকাশ করার মতো না। খুব ভালো লাগছে। সবাই মিলে মনমতো আড্ডা দিচ্ছি।’

বুদ্ধিজীবী চত্বরে চায়ের দোকানে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান, রাজিব হোসাইন, জিনাত কামাল ও আবিদারা। উৎসবের অনুভূতি ব্যক্ত করে তারা বলেন, ‘এই সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা খুবই উচ্ছসিত, উল্লাসিত। খুব মজা করছি আমরা। আমরা চাই, এরকম আয়োজন বারবার হোক, সেই পুরনো মুখগুলোর সাথে বারবার দেখা হোক।’

পূর্বকোণ/ জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট