চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে রোগী বেড়েছে সাড়ে ৪০%, বেশি দক্ষিণাঞ্চলে

ইমাম হোসাইন রাজু

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ

২০২০ সালে চট্টগ্রামে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৪ হাজার ৬২৬ জন। কিন্তু বিগত বছরে তথা ২০২২ সালে এসে রোগী পাওয়া যায় প্রায় সাড়ে ৬ হাজার। অর্থাৎ চট্টগ্রামে মরণব্যাধি ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা মাত্র দু’বছরের ব্যবধানে বেড়েছে সাড়ে ৪০ শতাংশ। দিনদিন ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা বাড়লেও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে- বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে।

 

আবার দু’বছর আগেও যেখানে পুরুষ রোগীর সংখ্যা বেশি পাওয়া গিয়েছিল, বর্তমানে সেখানে নারীরাই এগিয়ে আছেন আক্রান্তের তালিকায়। শুধু তাই নয়, অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরাই আশঙ্কাজনকহারে আক্রান্ত হচ্ছেন মরণব্যাধি এ রোগে। নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার আর পুরুষদের মধ্যে মুখগহ্বরের ক্যান্সারে আক্রান্তের হারই বেশি পাওয়া যাচ্ছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের একমাত্র ক্যান্সারের চিকিৎসা কেন্দ্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ভর্তি হওয়া রোগীর তথ্য পর্যালোচনায় এ চিত্র পাওয়া গেছে।  চমেক হাসপাতালের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে চট্টগ্রামে নতুন রোগী শনাক্ত হয় সাড়ে ৬ হাজার। এরমধ্যে ৪০ শতাংশ রোগীই হচ্ছেন চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দা। যাদের মধ্যে কক্সবাজার জেলার রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। এছাড়া ৩০ শতাংশ রোগী পাওয়া গেছে চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চলের। এরমধ্যে ফেনী-নোয়াখালী ও কুমিল্লার রোগীও রয়েছেন।

 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. আলী আজগর চৌধুরী বলেন, ‘দু’বছরের ব্যবধানে চমেক হাসপাতালে অনেক বেশি রোগী পাওয়া গেছে। রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় কক্সবাজার, সাতকানিয়া, লোহাগাড়াসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে বেশি পাওয়া গেছে। আর উত্তর চট্টগ্রামের সীতাকু–মিরসরাইয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি। গতবারের চেয়ে এবারে পাকস্থলী ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে খাদ্যাভাস।

 

চিকিৎসকরা বলছেন, চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে অতিরিক্তি মশলাজাতীয় খাদ্যগ্রহণ শুঁটকিসহ নানা খাদ্যাভাসের প্রবণতা বেশি। যার কারণে মুখগহব্বর, গলা ও পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী বেশি মিলছে। তাদের মধ্যে খাদ্যাভ্যাস, দেদারসে তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ, ধূমপান, জর্দার ব্যবহারও বেশি হয়ে থাকে। তাছাড়া নারীদের মধ্যে আলোচ্য বিষয়গুলো ছাড়াও হাইজোনিকের কারণও দেখছেন অনেকেই।

 

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শেফাতুজ্জাহান বলেন, ‘চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে শুঁটকি খাওয়ার প্রবণতা বেশি। কিন্তু বাজারজাতের এসব শুঁটকিতে ডিডিটি কীটনাশক ব্যবহারের কারণে তা ক্যান্সারে রূপ নিচ্ছে। তাছাড়া এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে তামাক সেবন, অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার ও মশলাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণের প্রবণতাও বেশি। নারীরাও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে অভ্যস্ত নন। এসবের কারণেও আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই এসব থেকে নিজেদের বাঁচতে বছর বছর স্ক্যানিং করতে হবে।’

 

বিশ্ব ক্যান্সার দিবস আজ :  বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। প্রতিবছরের ৪ ফেব্রুয়ারি নানান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয় দিবসটি। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ক্লোজ দ্যা কেয়ার গ্যাপ’। সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও নানান কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হচ্ছে ক্যান্সার দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আলোচনা সভা ও র‌্যালির আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের উদ্যোগে এ ব্যাপারে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ফ্রি স্ক্যানিং প্রোগ্রাম, ক্যান্সার রোগীদের ফ্রিতে সেবা প্রদানসহ ব্যতিক্রমী নানা আয়োজন রয়েছে। এরবাইরেও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং সরকারি বেসকারি বিভিন্ন হাসপাতাল ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট