চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠায় নিম্নআয়ের মানুষের জন্য খোলা বাজারে চাল ও আটা বিক্রি কর্মসূচি শুরু করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের ১৯টিতে চলছে এই কার্যক্রম। সরকারের এই কর্মসূচি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নগরীর আরও ২২ ওয়ার্ডের মানুষ। এখন ৪১ ওয়ার্ডে খোলা বাজারে চাল-আটা বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন সিটি মেয়র।
চট্টগ্রাম খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের পরিদর্শক আবুল মুনসুর মোহাম্মদ হাবীব পূর্বকোণকে বলেন, ‘নগরীর ১৯ ওয়ার্ডে ৩৫ জন ডিলার পালাক্রমে ওএমএস কর্মসূচির আওতায় চাল ও আটা বিক্রি করছে। এরমধ্যে ১৪ জন ট্রাকে ও ২১ জন দোকানে বিক্রি করেছেন। অনিয়মের অভিযোগের কারণে একজন ডিলারের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।’
গত ১৭ জানুয়ারি নগরীর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ওএমএসের চাল বিক্রি না করে চলে যাওয়ার সময় সুভাষ চৌধুরী নামে এক ডিলারকে ধরে পুলিশে দিয়েছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তার কাছ থেকে ৩০৭ কেজি চাল উদ্ধার করা হয়। অনিয়মের অভিযোগের পর ওই ডিলারের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান খাদ্য পরিদর্শক আবুল মনসুর মোহাম্মদ হাবীব। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেই দায়
সেরেছে খাদ্য অধিদপ্তর। সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। এখনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেননি বলে জানান তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরি) মো. ফখরুল আলম। ২২ জানুয়ারি চিঠি পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, খাদ্য বিভাগের নির্লিপ্তায় ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে হতদরিদ্রের ন্যায্যমূল্যের চাল খোলাবাজারে পাচার হয়ে যাচ্ছে। একাধিক সূত্র জানান, ওএমএসের চাল-আটা উত্তোলন ও বিক্রিতে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও গুদাম কর্মকর্তাদের ‘বকশিস’ করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে এ প্রথা চলে আসছে। চাল উত্তোলনের সময় গুদাম কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের টাকা না দিলে নিম্নমানের চাল ঢুকিয়ে দেয়।
চট্টগ্রাম মহানগরের ৪১ ওয়ার্ডে ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনার জন্য খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের কাছে সিটি মেয়র চিঠি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
খাদ্য বিভাগ জানায়, চালের বাজার স্থিতিশীল রাখা ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ন্যায্যমূল্যে খোলা বাজারে চাল আর আটা বিক্রি কর্মসূচি শুরু করে সরকার। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে নগরী ও জেলায় এই কর্মসূচি চলে আসছে। এই কর্মসূচির আওতায় প্রতিকেজি চাল ৩০ টাকা দরে এবং ২৪ টাকা দরে আটা বিক্রি করছে সরকার। একজন ব্যক্তি ৫ কেজি করে চাল ও ৫ কেজি করে আটা কিনতে পারবেন।
নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ১৯ ওয়ার্ডে চলছে ওএমএস কার্যক্রম। নগরীর সবকটি ওয়ার্ডে এই কার্যক্রম চালু করার জন্য খাদ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী চিঠিতে বলেছেন, ৭০ লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত চট্টগ্রাম মহানগরী হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় রাজধানী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় নিম্নআয়ের মানুষ আর্থিক সংকটে রয়েছেন। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সহায়তার জন্য সরকার কেজিতে ৩০ টাকা করে চাল ও ২৪ টাকা করে আটা বিক্রি করছে সরকার। নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ১৯টি ওয়ার্ডে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বাকি ২২ ওয়ার্ডে ওএমএস কার্যক্রমের জন্য কোনো ডিলার নেই। কার্যক্রম চালু থাকা ওয়ার্ডে চাল-আটা সংগ্রহের জন্য ছুটে যাচ্ছেন পাশ্ববর্তী ওয়ার্ডে। এজন্য অতিরিক্ত গাড়ি গুনে পণ্য সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এছাড়া ৫-৬ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরও অনেকেই পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। এজন্য খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারকে ৪১ ওয়ার্ডে ওএমএস কার্যক্রম চালু করার জন্য অনুরোধ করেছেন মেয়র।
খাদ্য বিভাগ জানায়, প্রতিদিন ডিলারপ্রতি ট্রাক সেলের জন্য ২ মেট্রিক টন ও দোকানে বিক্রির জন্য দেড় টন করে চাল দেওয়া হয়। ১১ হাজার ৯শ জন চাল ও ৪ হাজার ২শ জন মানুষ আটা কেনার সুযোগ পাচ্ছেন।
পূর্বকোণ/জেইউ